নিজের আত্মজীবনী ‘রস টেলর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ বইয়ে মারাত্মক এক বোমাই ফাটিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান রস টেলর। তাঁর কথা, নিউজিল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে তিনি বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন। তাঁর অন্য সতীর্থেরা কীভাবে বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন, সেসব কথাও বইয়ে জানিয়েছেন টেলর।
গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে গেছেন এই কিউই কিংবদন্তি। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি) আজ জানিয়েছে, টেলরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
মায়ের দিক থেকে পলিনেশিয়ান আদিবাসী সামোয়ানদের রক্ত বইছে টেলরের শরীরে। আত্মজীবনীতে টেলর নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেটকে ‘সাদাদের খেলা’ বলেছেন। ড্রেসিংরুমে বর্ণবাদী মন্তব্যকে ‘ঠাট্টা ও মশকরা’ হিসেবে দেখা হতো বলেও জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ও ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ এই রান সংগ্রাহক।
নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ‘নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড’ আত্মজীবনী নিয়ে টেলরের লেখা সারাংশ প্রকাশ করেছে, সেখানে টেলর লিখেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেট সাদাদের খেলা। ক্যারিয়ারে বেশির ভাগ সময় (দলে) আমি যেন (বাকিদের চেয়ে) আলাদা ছিলাম, যেন ভ্যানিলা (সাদা ফুল) লাইনআপে বাদামি মুখ।’
টেলরের আত্মজীবনী আজ প্রকাশিত হয়েছে। সতীর্থদের কাছ থেকেই বর্ণবাদের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি বইয়ে। তবে ঠিক কোন পর্যায়ের খেলায়, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি। ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নিয়ে টেলর জানিয়েছেন, ‘ড্রেসিংরুমের টিপ্পনি অনেকভাবেই চাপ বিস্তার করত। এক সতীর্থই আমাকে বলত, রস, তুমি অর্ধেক ভালো মানুষ। কিন্তু কোন অর্ধেকটা ভালো? আমি কী বোঝাচ্ছি সেটা তুমি জানো না। কিন্তু আমি বুঝে নিতাম। জাতিগত বিষয় নিয়ে এমন সব কথা অন্য খেলোয়াড়দেরও মেনে নিতে হয়েছে। একজন পাকেহা (নিউজিল্যান্ডের সাদা চামড়ার মানুষ) এসব শুনে ভাবত, ওহ, এসব তো স্রেফ ঠাট্টা–মশকরা। কিন্তু তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা সাদা চামড়ার মানুষ হিসেবে, আর এসব কথা তাদের শুনতে হয় না। তাই কোনো প্রতিবাদ হতো না, কেউ শুধরে দিত না।’
৩৮ বছর বয়সী সাবেক এই ব্যাটসম্যান আরও জানিয়েছেন, এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে আরও বড় সমস্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হতো। নিরীহ ঠাট্টা–মশকরাকে বর্ণবাদের অভিযোগ হিসেবে ব্যবহার করার দায় নিতে হতো।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) এক মুখপাত্রের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ করেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। সেই মুখপাত্র জানিয়েছেন, টেলরের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। এএফপিকে তিনি বলেছেন, ‘বইয়ে রসের কিছু মন্তব্য নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এনজেডসি। তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন এবং তাঁকে সাহায্য করতেই এই প্রচেষ্টা। আলোচনা চলছে। আমরা তাঁকে নিজেদের ক্রিকেট পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করি। তাঁর এমন আচরণের শিকার হওয়ার কথা জানানোর বিষয়টি হতাশাজনক। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট কোনোভাবেই বর্ণবাদ সমর্থন করে না।’
ক্রিকেটে বর্ণবাদ নিয়ে অভিযোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গত মাসে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি জানায়, ক্রিকেট স্কটল্যান্ডে ‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই বর্ণবাদী।’ গত জুনে পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ক্রিকেটার আজিম রফিক জানান, সাবেক ক্লাব ইয়র্কশায়ারে বর্ণবাদের শিকার হওয়ার কথা জানানোর পর তাঁর পরিবার ‘হুমকি’ পেয়েছে।