২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

‘রহস্যময়’ উইকেটে পার্থক্য নতুন বলেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়

ফিফটি তুলে নেন ব্র্যান্ডন কিংক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ

দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের কথা মানলে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান বেশি করেছে। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়কের কথা মানলে মনে হবে, তারাই রান কম করেছে। জ্যামাইকার কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কের উইকেট আসলে কত রানের সেটি শুধু উইকেট-ই জানে!

আরও পড়ুন

প্রায় দুই বছরের মধ্যে গতকাল সেখানে অনুষ্ঠিত হলো প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে ১৭৫ রান তুলেছিল। তাড়া করতে নেমে ১৯.৫ ওভারে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজের এই প্রথম টি-টোয়েন্টি ২৮ রানে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

স্বাগতিক অধিনায়ক ব্র্যান্ডন কিং কিংস্টনেরই ঘরের ছেলে। স্যাবাইনা পার্কের উইকেট তাঁর নখদর্পণে। ম্যাচ শেষে কিং বললেন, ‘কন্ডিশন আমি ভালো জানতাম, যেটায় সুবিধা হয়েছে। জানতাম, নতুন বলে একটু চড়াও হতে হবে। কারণ কাজটা পরে কঠিন হয়ে আসে। উইকেট মাথায় রেখে আমরা ২০০-২২০ রানের কথা ভেবেছি। কিন্তু উইকেটটা কঠিন হওয়ায় (রান) কম হয়েছে।’

বোঝা গেল, কিং উইকেট যেমন ভেবেছিলেন তেমন ছিল না। তাই বলে ২২ গজ নিয়ে দুই অধিনায়কের কথার ফারাকটা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক রেসি ফন ডার ডুসেন বলেছেন, ‘উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমরা সময়টা বেশি নিয়েছি। ওরা প্রথম ইনিংসেই ম্যাচটা জিতে নিয়েছে। এটা ১৫০ রানের উইকেট।’

আরও পড়ুন

এখন বলুন বিশ্বাস করবেন কার কথা! সবচেয়ে ভালো হলো, কারও কথাই বিশ্বাস না করে স্কোরবোর্ডে চোখ রাখা। সেখানে কিন্তু পাওয়ারপ্লে-তেই পার্থক্যটা ধরা পড়ে। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছে ১ উইকেটে ৬৪। দক্ষিণ আফ্রিকা তুলেছে ৩ উইকেটে ৪৬। প্রায় ২০ রানের এ পার্থক্য শেষ পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে ২৮ রানের ব্যবধানে হার-জিত ঠিক করে দেওয়ার পেছনে হয়তো বেশ বড় ভূমিকাই রেখেছে।

কিং নতুন বলে চড়াও হওয়ার কথা বলেছিলেন। ওপেনিংয়ে নেমে তিনি নিজে সেই ভূমিকায় ছিলেন অগ্রগণ্য—পাওয়ারপ্লে পর্যন্ত ২৭ বলে ৫১ রানে অপরাজিত—৬ চার ও ৩ ছক্কায় বাউন্ডারি থেকেই এসেছে ৪২! শেষ পর্যন্ত আরও ৩টি ছক্কা মেরে ৪৫ বলে ৭৯ রান করেন কিং। কাইল মায়ার্সের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৪ এবং রোস্টন চেজ ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন। এই তিনটি ইনিংস ছাড়া ক্যারিবিয়ান কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। সর্বোচ্চ জুটি দ্বিতীয় উইকেটে মায়ার্স-কিংয়ের ৪৪ বলে ৭৯ রানের। এরপর কোনো উইকেটে ২০ রানের জুটিও হয়নি। যদি সেটা হতো তাহলে কিং-কে ম্যাচ শেষে হয়তো বলতে হতো না, উইকেট কঠিন ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঠিকই ২০০ পেরিয়ে যেত।

প্রথম ম্যাচ হেরে সিরিজে পিছিয়ে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা
ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা এক্স

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ৫ ওভারের মধ্যে কুইন্টন ডি কক (৪), রায়ান রিকেলটন (৬) ও ম্যাথু ব্রিৎজকে (১৯) হারানোর পর ম্যাচ থেকে ধীরে ধীরে ছিটকে পড়েছে। শেষ ১০ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৬০ বলে ৯৯। হাতে ৭ উইকেট। এমন কঠিন কোনো লক্ষ্য না। কিন্তু ১১তম ওভারে ক্যারিবিয়ান স্পিনার গুড়াকেশ মোতি অধিনায়ক ফন ডার ডুসেন ও উইয়ান মুল্ডারকে ফেরানোর পর পতনের দরজাটা যেন খুলে যায়! ১৪ ও ১৫তম ওভারে আন্দিলে ফিকোয়া ও বিয়ন ফরটুইনকেও হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই পড়ে প্রোটিয়ারা।

আরও পড়ুন

শেষ ৫ ওভারে ৬৯ দরকার ছিল, হাতে মাত্র ৩ উইকেট। বাকি কাজটা সারতে সমস্যা হয়নি ক্যারিবিয়ান বোলারদের। তবে ওপেনার রিজা হেনড্রিকসের ইনিংসটির প্রশংসা করতেই হয়। দুই দলের অধিনায়কই যেখানে কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, উইকেট একটু কঠিন ছিল, হেনড্রিকস সেখানে ব্যাট করেছেন ইনিংসের ১৯.৪ ওভার পর্যন্ত। ৬ ছক্কা ও ৬ চারে ৫১ বলে তাঁর ৮৭ রানের ইনিংসটি আরও মর্যাদা পেত যদি মিডল অর্ডারের কেউ তাঁকে সহায়তা করতে পারতেন। কিন্তু অন্য কেউ ২০ রানের ইনিংসও খেলতে পারেননি।

এ মাঠেই সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি আগামীকাল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৭৫/৮ (কিং ৭৯, মায়ার্স ৩৪, চেজ ৩২*; বার্টম্যান ৩/২৬, ফিকোয়া ৩/২৮, কোয়েৎজি ১/৩০)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯.৫ ওভারে ১৪৭ (হেনড্রিকস ৮৭, ব্রিৎজ ১৯,ফন ডার ডুসেন ১৭; মোতি ৩/২৫, ফোর্ড ৩/২৭, ম্যাকয় ২/১৫)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৮ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: ব্রান্ডন কিং (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)