ম্যাক্সওয়েল সেদিন নিশ্বাসই নিতে পারছিলেন না
এখনো কাটেনি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সেই ইনিংসের ঘোর। মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে অবিশ্বাস্য ইনিংসটি এই অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার খেলেছেন, সেই ঘোর থেকে বেরিয়ে আসাও খুব সহজ নয়। কারণ, সেদিন যাঁরা ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসটি সরাসরি দেখেছেন, তাঁরা চোখের সামনে এমন কিছু দেখেন, যেটি আসলে নিজের সবটুকু আবেগকে এক করেও সঠিকভাবে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। দুই পায়ে আর পিঠের মাংসপেশিতে চোট নিয়ে যেখানে ম্যাক্সওয়েল ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছিলেন না, সেই অবস্থায় অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস অনেকটা রূপকথার রাজকুমারের রাজ্য জয়ের মতোই ব্যাপার।
সেদিন কতটুকু ব্যথা নিয়ে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন, ম্যাক্সওয়েল আগেই তা জানিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, একপর্যায়ে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে তিনি মাঠ থেকে উঠেও যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই সেই চিন্তা বাদ দিয়ে খেলেছেন, খেলে গেছেন শেষ পর্যন্ত। ব্যথা-জর্জর শরীর নিয়ে লড়ে গেছেন দেশের জন্য। ক্রিকেটীয় রূপকথায় যে ইনিংসটি পাচ্ছে অন্যতম মর্যাদারই আসন। এটা যেন বিশ্বকাপের ইতিহাসকেই মহিমান্বিত করে তোলা এক ইনিংস।
কিন্তু ইনিংসটি খেলার পথে কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে, সেটা তিনি পরে জানিয়েছেন স্ত্রী ভিনি রমনকে। স্ত্রীকে বলেছেন, জীবনে যত চোট তাঁকে কাবু করেছে, যত ব্যথা তিনি শরীরে অনুভব করেছেন, এর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যথাকে সঙ্গী করেই মুম্বাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ইনিংসটি খেলেছেন। আফগানদের ২৯১ রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া যখন একপর্যায়ে ৯১/৭, তখন ম্যাক্সওয়েলের ঝড়ই অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিয়েছে দারুণ এক জয়। তুলে দিয়েছে সেমিফাইনালে।
‘নো বল’ নামের একটি অস্ট্রেলিয়ান পডকাস্টে ম্যাক্সওয়েল জানিয়েছেন, চোট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল সেদিন, তিনি ঠিকমতো নিশ্বাসই নিতে পারছিলেন না, ‘আমি মোটেও নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। ব্যথা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। আমি হয়তো অজ্ঞানই হয়ে যেতাম। সেদিন আমার জীবনের দ্বিতীয় মারাত্মক ব্যথা আমাকে কাবু করে ফেলেছিল। জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যথা শরীরে নিয়েছি গত বছর। আমার পা ভাঙার সেই ব্যথাই সবচেয়ে বেশি আমাকে ভুগিয়েছে। এরপর সেদিন মুম্বাইয়ের সেই চোট। ফিজিও মাঠে ঢুকে আমাকে ঠিকমতো নিশ্বাস নিতে সাহায্য করছিলেন।’
ম্যাক্সওয়েল কিংবা ফিজিও, কেউ নাকি বুঝতে পারছিলেন না কী করা উচিত, ‘আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ক্ষণিকের জন্য হলেও আমি বা ফিজিও কেউই বুঝতে পারছিলাম না, আমাদের কী করণীয়! আমার শরীর কাঁপছিল। সারা শরীর ছিল ব্যথায় জর্জরিত।’
নিজের কাছেও ইনিংসটিকে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে ম্যাক্সওয়েলের, ‘শরীরের একেকটা অংশ একেক সময় ব্যথা করছিল। প্রথমে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের পেশিতে টান লাগে। এরপর ডান পায়ে সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ংকর সেই ব্যথা। এরপর আমি ঠিকমতো ব্যাটিংয়ের জন্য দাঁড়াতেই পারছিলাম না। দৌড়ে রান নেওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না। সেদিনের ইনিংসটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বলই খেলি প্রতি ম্যাচে।’