গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পরই প্রশ্নটা ওঠে। পাকিস্তানের মিডল অর্ডার কি অতটা শক্তিশালী? ওপেনিং জুটি বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ান ফিরে গেলে মিডল অর্ডার ঠিক কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে?
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আজ ক্রাইস্টচার্চে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জিতে সে প্রশ্নের উত্তরও মিলিয়ে নিল পাকিস্তান।
এশিয়া কাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার ১৭০ রান তাড়া করতে নেমে দলীয় ২২ রানে ফিরেছিলেন বাবর। ৪৯ বলে ৫৫ রান করা রিজওয়ান দলীয় ১১০ রানে ১৭তম ওভারে আউট হন। এরপর পাকিস্তান ম্যাচটা জিততে পারেনি। আজ পুরোপুরি তেমন না হলেও পরিস্থিতি একদম আলাদা ছিল না।
নিউজিল্যান্ডের ৭ উইকেটে ১৬৩ রান তাড়া করতে নেমে পঞ্চম ওভারে দলীয় ২৯ রানে আউট হন বাবর। ইস সোধিকে স্লগ সুইপে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন পাকিস্তান অধিনায়ক (১৪ বলে ১৫)। এরপর তিনে নামা শান মাসুদকে নিয়ে রিজওয়ান ৩৫ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়েন।
ফখর জামানের জায়গায় সুযোগ পাওয়া শান মাসুদ ২১ বলে ১৯ রান করে আউট হন ১১তম ওভারে। পরের ওভারে রিজওয়ানও আউট! ২৯ বলে ৩৪ রান করা রিজওয়ান সোধিকে স্লগ মারতে গিয়ে এলবিডব্লু হন। পাকিস্তান তখন ১১.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৭৪। ৪৯ বলে ৯০ রানের দূরত্বে জয়। কী হবে!
শুধু নিউজিল্যান্ড দল কেন, সম্ভবত কেউ-ই ভাবেননি, চতুর্থ উইকেট জুটিতে হায়দার আলী ও মোহাম্মদ নওয়াজ কী চমক নিয়ে অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ২০ বলে ৪৫ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা নওয়াজ হায়দার আলীকে নিয়ে মাত্র ২৬ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। জয় থেকে পাকিস্তান তখন ২৫ বলে ৩৪ রানের দূরত্বে।
ম্যাচটা এখান থেকে সহজ হয়ে আসার কথা থাকলেও দলটা তো পাকিস্তান। অনুনেমেয়তা না থাকলে চলে! ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ট্রেন্ট বোল্টকে ক্যাচ দেন আসিফ (২ বলে ১)। ২৩ বলে দরকার ৩২। এখান থেকে ৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিতে সমস্যা হয়নি পাকিস্তানের।
নওয়াজ ও হায়দারের জুটিটি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। তিনে ও চারে নামা এ দুজন যখন জুটি বাঁধেন ওভারপ্রতি পাকিস্তানের গড়ে প্রায় ১১ রান করে প্রয়োজন। ওই ওভারেরই শেষ বলে সোধিকে ছক্কা মেরে প্রতি-আক্রমণের ইঙ্গিত দেন হায়দার। ঘটেছেও ঠিক তা–ই।
পরের (১৩তম) ওভারে এসেছে ১১ রান, তার পরের ওভারে একটু শান্ত (৪ রান), কিন্তু ১৫তম ওভারে সোধির কাছ থেকে চার এবং ছক্কায় ২৫ রান তুলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন নওয়াজ-হায়দার জুটি। এ ওভারে তিন ছক্কা হজম করেন সোধি।
২ ছক্কা ও ৩ চারে ১৫ বলে ৩১ রান করা হায়দার টিম সাউদির বলে আউট হন ১৬তম ওভারে। পরের ওভারে আসিফ আউট হলেও থামেনি নওয়াজের মারকুটে ব্যাটিং। সে ওভারেরই শেষ বলে ছক্কা মেরে সমীকরণটা ১৮ বলে ২৩ রানে নামিয়ে আনেন নওয়াজ।
ষষ্ঠ উইকেটে নওয়াজকে ভালো সঙ্গ দেন ইফতিখার আহমেদ। ১৮তম ওভারে ডাবলস ও চার মেরে মোট ১২ রান তুলে সমীকরণটা আরও সহজ করে ফেলেন ইফতিখার। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ১১ রান। সেখান থেকে শেষ ওভারে দরকার ৪।
শেষ ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে ম্যাচটা জেতান ইফতিখার। ৩ ছক্কা ও ২ চারে ২২ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন নওয়াজ। ইফতিখার অন্য প্রান্তে ১ ছক্কা ও ১ চারে ১৪ বলে অপরাজিত ২৫ রানের ইনিংস খেলেন।
অথচ পঞ্চম ওভারে বাবরকে হারানোর পর পাওয়ার প্লে-তে (৬ ওভার) ১ উইকেটে ৩৩ রান তুলেছিল পাকিস্তান। এই ত্রিদেশীয় সিরিজে পাওয়ার প্লে-তে তাঁদের সর্বনিম্ন স্কোর। ৩.৩ ওভার থেকে ৭.৩ ওভারের মধ্যে টানা ২৬ বলে কোনো বাউন্ডারিও মারতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু মিডল অর্ডারের শক্তিতে ম্যাচটা জিততে সমস্যা হয়নি পাকিস্তানের।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৪ রানে ২ উইকেট নেন অফ স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েল। ১টি করে উইকেট সাউদি, ব্লেয়ার টিকনার ও সোধির। ৪ ওভারে ৫৮ রানে ১ উইকেট নেওয়া সোধি আজ দুঃস্বপ্নই দেখেছেন হায়দার-নওয়াজদের সামনে।