খেলাকে ‘জগাখিচুড়ি’ বানিয়ে ফেলেছিলেন কোহলি!
দুই দিন কেটে গেছে। তবু ভারত–পাকিস্তান মহারণ সবার চোখে লেগে আছে। লেগে থাকারই কথা। মহানাটকীয়তার জন্ম দিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটি যে টি–টোয়েন্টি ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ উপহার দিয়েছে!
৫৩ বলে ৮২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে মেলবোর্নে জয়ের নায়ক বিরাট কোহলি। ১৬০ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ভারত। ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে টেনে তুলেছেন কোহলি। পরে মাঠ ছেড়েছেন বিজয়ীর বেশে।
ম্যাচ জেতানো সেই ইনিংসের পর বিশ্বজুড়ে চলছে কোহলি–বন্দনা। তিনি নিজেও ইনিংসটিকে তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ওপরে রেখেছেন। তবু একটা জায়গায় নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে কোহলির। মন্থর শুরুকে ‘জগাখিচুড়ি’র সঙ্গে তুলনা করেছেন কোহলি।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অফিশিয়াল সম্প্রচার চ্যানেল স্টার স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘শুরুতে কোনোভাবেই গ্যাপ বের করতে পারছিলাম না। প্রথম ২১ বলে মাত্র ১২ রান করার পর মনে হচ্ছিল, খেলাটাকে আমি জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলছি। কিন্তু অভিজ্ঞতা ও ব্যাটিং গভীরতার মূল্য বুঝতে পারার কারণে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ভারতের হয়ে সব সময় এ ভূমিকা পালন করে আসছি। জানতাম, টিকে গেলে ইনিংসের শেষ দিকে বড় শট খেলতে পারব।’
রান তাড়ার শুরুতে লোকেশ রাহুলকে হারায় ভারত। এরপরই আসেন কোহলি। থিতু হতে হতেই অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখেন দলের চরম বিপর্যয়। একে একে বিদায় নেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ফর্মের তুঙ্গে থাকা সূর্যকুমার যাদব ও পাঁচে ‘পদোন্নতি’ পাওয়া অক্ষর প্যাটেল।
প্রকাণ্ড চাপে পড়া ভারতের ইনিংস মেরামত করা ছাড়া তখন উপায় ছিল না কোহলির। হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে শুরুতে সে কাজই করেছেন। এক–দুই নিয়ে রানের চাকা সচল রেখেছেন। সুযোগ বুঝে মোহাম্মদ নেওয়াজের করা তৃতীয় ওভারকে নিজেদের প্রথম লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন। ‘মোমেন্টাম’ পেয়ে যাওয়ার পর জয়ের দিকে ছুটেছেন।
একসময় ৫৭.১৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা কোহলি ৪৩তম বলে চার মেরে ফিফটি ছুঁয়েছেন। মহাপ্রলয় বইয়ে পরের ১০ বলে করেছেন ৩২; স্ট্রাইক রেট ৩২০! অবিশ্বাস্য ইনিংসের বিবর্তনে পঞ্চম উইকেটে হার্দিককে নিয়ে গড়েছেন ১১৩ রানের জুটি।
বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৪০ রান। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে হার্দিকের অবদানও কম নয়। কঠিন পরিস্থিতিতে হার্দিককে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বলে মনে করেন কোহলি, ‘সত্যি বলতে, ওই সময় আমি ভীষণ চাপ অনুভব করছিলাম। কিন্তু সে (হার্দিক) কয়েকটি বাউন্ডারি মারার পর আমিও হাত খুলতে শুরু করি। আমাদের জুটি কখন ১০০ পেরিয়েছে, বুঝতেই পারিনি। আমরা পরিকল্পনা করে এগিয়েছি, আরও জোরে দৌড়েছি, ওদের শরীরী ভাষাও বোঝার চেষ্টা করেছি।’
শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ১৬ রান। নেওয়াজের প্রথম বলেই হার্দিক সর্বশক্তি দিয়ে স্লগ করতে গিয়ে ধরা পড়েন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের হাতে। হার্দিক ম্যাচ জিতিয়ে আসতে না পারলেও আক্ষেপ নেই কোহলির, ‘জানতাম, যেকোনো মুহূর্তে মোড় ঘুরবে। ওরা ম্যাচে ফিরতে চাইবে। তবে ওরা দেরি করে ফেলেছে। আমরাও আরেকটু আগে জিততে চেয়েছি।’