বিপিএলের মতো লিগ নিয়েই এখন ব্যস্ততা প্রিটোরিয়াসের
ফরচুন বরিশালের দুই কোচ মিজানুর রহমান ও তালহা জুবায়ের মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, তাঁদের পাশেই বসে আছেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। ধ্যানমগ্ন হয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মূল মাঠে তাকিয়ে ছিলেন এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার। গায়ে বরিশালের অনুশীলন জার্সি।
মাত্রই শেষ হলো রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ। ঘণ্টাখানেক পরই বরিশাল খেলবে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। বিপিএলে এটাই প্রিটোরিয়াসের প্রথম ম্যাচ। তাঁর আগে খুব মনোযোগে মাঠের এদিক-ওদিক দেখছিলেন। ম্যাচের আগে কল্পনায় হয়তো পরিকল্পনা সাজিয়ে নিচ্ছিলেন।
বিপিএল খেলার অভিজ্ঞতাও জানালেন প্রিটোরিয়াস, ‘ভালো লাগছে। নতুন পরিবেশ, ভিন্ন কন্ডিশন। ভালো চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে আশা করি। কদিন আগেই অবসর নিয়েছি। এখন ব্যস্ততা এমন লিগ নিয়েই।’
এ বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন প্রিটোরিয়াস। বয়স মাত্র ৩৩। ক্যারিয়ারের সেরা ক্রিকেটটা সবে খেলা শুরু করেছিলেন। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল দলে ছিলেন। চোটে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ইচ্ছাটা হয়তো তখনই মরে যায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের পথটাই প্রিটোরিয়াসকে বেশি রোমাঞ্চিত করছিল। ‘ফ্রি এজেন্ট’ হিসেবে টি-টোয়েন্টির বাজারে তাঁর দামও চড়া। ২০ ওভারের বাজারে লোয়ার অর্ডার হিটারের সঙ্গে যদি সিম বোলিং অলরাউন্ডার পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে সব মনোযোগ টি-টোয়েন্টিতে দেওয়ার একটাই কারণ, ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে সেরা হতে চান।
পাকিস্তান সুপার লিগে প্রিটোরিয়াসের দল কোয়েট্টা গ্ল্যাডিয়েটর্স, আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিং। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস পেট্রিয়টেও নিয়মিত। দ্য হান্ড্রেডে খেলেন ওয়ালশ ফায়ার দলের হয়ে। কদিন আগে শুরু হওয়া নিজ দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট এসএ ২০-তে প্রিটোরিয়াসের দল ডারবান সুপার জায়ান্ট। সেখানে সুপার জায়ান্ট প্লে অফে জায়গা করতে না পারায় বিপিএলের দুয়ার খুলে যায় প্রিটোরিয়াসের।
নিজ দেশের লিগে প্লে অফ খেলার সুযোগ না হলেও বিপিএলে সে সুযোগ পাচ্ছেন। বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে যে তাঁকে এখন থেকে নিয়মিত দেখা যাবে, সে আভাসও দিয়েছেন। মিরপুরে গ্যালারির দিকে একবার তাকিয়ে বললেন, ‘সামনে অনেক ব্যস্ততা। এ ধরনের টুর্নামেন্টে বেশি বেশি খেলার চেষ্টা করব।’
কিছুক্ষণ পর সেই প্রিটোরিয়াসকে দেখা গেল মিরপুর স্টেডিয়ামকে ছক্কায় মাতাতে। দলের বিপদে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খুলনার বোলারদের ওপর চড়াও হন। ২৯ বলে ৪৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন ৪টি ছক্কা ও ২টি চারের সৌজন্যে। মাঠভর্তি ঝিমিয়ে পড়া বরিশালের দর্শকেরা তখন জেগে ওঠে। দুই বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও হাসান মুরাদের বলে বিশাল ছক্কায় মাঠ গরম করে তোলেন এই প্রোটিয়া। তাঁর ১৬৫ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটিই ছিল বরিশালের ইনিংসে সর্বোচ্চ।
ওই ইনিংসের জন্যই কি না, বিপিএলের নতুনত্বে খুব সহজেই মানিয়ে নিয়েছেন প্রিটোরিয়াস। বরিশাল দলের আরেক সদস্য মেহেদী হাসান মিরাজ সে আভাসটাই দিলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়নি সে দলে নতুন এসেছে। সে ভালো একটা ইনিংস খেলেছে। ভালো শুরু এনে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো সাইন।’
বিপিএলজুড়ে বরিশালের শক্তি ছিল মিডল অর্ডার ব্যাটিং, যেখানে সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি খেলেছেন পাকিস্তানের ইফতিখার আহমেদ। দুজনই সাড়ে তিন শর বেশি রান করেছেন। কিন্তু পিএসএল খেলতে ইফতিখারকে দেশে ফিরতে হয়। প্লে অফে ইফতিখারের জায়গায় দেখা যাবে প্রিটোরিয়াসকে। তার আগে বিপিএলে প্রথম ম্যাচেই দেখা গেছে, ২০ ওভারের খেলায় প্রিটোরিয়াস কতটা বিস্ফোরক হতে পারেন।