২ লাখ টাকা খরচ করে সিরাজকে রাগিয়ে দেওয়া সেই দর্শক ক্ষমা চাইলেন
অ্যাডিলেডে গোলাপি বলে দিবা–রাত্রির টেস্টের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র সোয়া দুই দিন, বলের হিসাবে ১০৩১। অস্ট্রেলিয়া–ভারতের কোনো টেস্ট ম্যাচ এর আগে এত কম বলে শেষ হয়নি। অথচ স্বল্প দৈর্ঘ্যের সেই ম্যাচই হয়ে আছে ঘটনাবহুল।
যশস্বী জয়সোয়ালকে ম্যাচের প্রথম বলেই আউট করে মিচেল স্টার্কের ‘প্রতিশোধ’, বল করার আগমুহূর্তে মারনাস লাবুশেন সরে যাওয়ায় মোহাম্মদ সিরাজের দৃষ্টিকটুভাবে বল ছুড়ে মারা, লাবুশেনের আউটের পর বিরাট কোহলির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকদের চুপ থাকতে বলা, একাধিকবার ফ্লাডলাইট বন্ধ হয়ে যাওয়া, ট্রাভিস হেড ও সিরাজের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ—অ্যাডিলেডে হয়েছে অনেক কিছুই।
তবে ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন দিন পরেও যে ঘটনাটি এখনো আলোচনায়, তা শুরু হয়েছিল গ্যালারি থেকে। অস্ট্রেলিয়ার এক সমর্থক সিরাজকে রাগাতেই করেছিলেন তা।
কোন ঘটনা, মনে আছে নিশ্চয়! গত শুক্রবার টেস্টের প্রথম দিনের শেষ সেশনে ব্যাট করছিল অস্ট্রেলিয়া। স্ট্রাইকে ছিলেন লাবুশেন, বোলিংয়ে সিরাজ। ভারতীয় পেসার বল করতে রানআপ শুরু করে দেন। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানও স্টান্স নেন। কিন্তু সিরাজ বল ছোড়ার ঠিক আগমুহূর্তে সরে যান লাবুশেন। এতে মেজাজ বিগড়ে যায় সিরাজের। তিনি লাবুশেনের দিকে বড় ছুড়ে মারেন। ওই মুহূর্তের ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।
কিন্তু লাবুশেনকে ব্যাটিং স্টান্স থেকে সরে যেতে যিনি বাধ্য করেছেন, তিনি এক অস্ট্রেলিয়ান। নাম তাঁর লেকি বুর্ট। ২১ বছর বয়সী বুর্ট পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। সেদিন সিরাজ বল করার আগমুহূর্তে ‘বিয়ার স্নেক’ নিয়ে সাইটস্ক্রিনের পেছন দিয়ে দৌড়ে যান বুর্ট। সিরাজের রানআপের মাঝে বুর্টের এমন কাণ্ড দেখেই সরে যান লাবুশেন। এতে ক্ষিপ্ত হন ভারতীয় পেসার।
এই ঘটনার পর লেকি বুর্ট রাতারাতি ইন্টারনেট সেলিব্রিটি হয়ে উঠেছেন। চ্যানেল ৭ নেটওয়ার্ক, ৯নিউজ, নিউজকর্প, দ্য অ্যাডভাইজারসহ অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
এসব সংবাদমাধ্যমেই বুর্ট জানিয়েছেন, সিরাজকে রাগাতেই তিনি ‘বিয়ার স্নেক’ নিয়ে সাইটস্ক্রিনের সামনে দিয়ে দৌড়েছেন। এটা বানাতে তাঁর ২ হাজার ৭৫০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার খরচ করতে হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২ লাখ ৮ হাজার টাকার মতো। নিছক মজার ছলেই এমনটা করেছিলেন বুর্ট। খেলা চলাকালে এ ধরনের কাজ করায় ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
‘বিয়ার স্নেক’ হলো অনেকগুলো প্লাস্টিকের বিয়ার কাপ একত্র করে বিশাল আকৃতির সাপ বানানো। কাপ দিয়ে বানানো হয় বলে কেউ কেউ এটাকে ‘কাপ স্নেক’ও বলে থাকেন। সাধারণত যে স্টেডিয়ামে লম্বা সময় ধরে খেলা হয়, সেখানকার দর্শকেরা বিয়ার কাপ জমিয়ে বিশাল আকৃতির সাপ বানানোর পর গ্যালারিতে চক্কর দিতে থাকেন। কোনো কোনো ‘বিয়ার স্নেক’ ১৭৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
ভাইরাল হওয়া বুর্ট নিউজকর্পকে বলেন, ‘একজনের চারটির বেশি পানীয় (বিয়ার) কেনার সুযোগ ছিল না।। তবে আমরা ৬৭ জন একসঙ্গে খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা ২৫০টি বিয়ার কাপ জমিয়ে ফেলি। সেগুলোকেই একত্র করে বিরাট টাওয়ার বানিয়েছি। (বিয়ার স্নেক)। এ জন্য ২ হাজার ৭৫০ ডলার খরচ হয়েছে। ঘটনাটি বেশ মজার ছিল।’
৯নিউজকে বুর্ট বলেছেন, ‘ওই মুহূর্তে (সাইটস্ক্রিনের ওপর দিয়ে দৌড়ানো) আমার মাথায় শুধু একটি বিষয় কাজ করছিল, কীভাবে প্রহরীদের (নিরাপত্তাকর্মীদের) কাছ থেকে দূরে থাকা যায়। যখনই সুযোগ পেয়েছি, ওই সাদা রশির ওপর দিয়ে লাফিয়ে উঠেছি।’
এমন কাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বুর্ট, ‘তখন আমার থামার এবং ভাবার সময় ছিল না যে, আমি আসলে কী করতে যাচ্ছি এবং এটা ম্যাচে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এখন বুঝতে পারছি আমি কিছুটা নির্বোধের মতো কাজ করেছি, যা সঠিক ছিল না...আমি দুঃখিত মারনাস (লাবুশেন)।’
তবে বুর্টের দাবি, তিনি কোনো অপরাধ করেননি, ‘কাজটা করা হয়তো ঠিক হয়নি, কিন্তু এতে কেউ আহত হয়নি। আমি তো বেষ্টনী টপকে মাঠে ঢুকে পড়িনি। এটা একটি মাত্র বলের ব্যাপার ছিল এবং মারনাস (লাবুশেন) এ ঘটনার পরেই চার মেরেছে। তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
ম্যাচের ভেন্যু অ্যাডিলেড ওভাল কর্তৃপক্ষও লেকি বুর্টের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ করেনি। বরং কর্তৃপক্ষ বলেছে, দর্শকদের আচরণে তারা খুশি।