খবরটা যে প্রত্যাশিত ছিল, তা নয়। চোটের সঙ্গে লড়াইটা তো তামিম ইকবালের নিয়মিতই। বেশ কিছুদিন ধরে রানও পাচ্ছিলেন না। তবু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসরের ঘোষণাটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই। যা শুনে সাবেক ক্রিকেটাররাও অবাক।
বিশ্বকাপের আগে অনেক বড় ধাক্কা
হাবিবুল বাশার
তামিম ইকবাল বাংলাদেশ দলে এসেছিল নতুন কিছু নিয়ে। সংস্কৃতি পরিবর্তনের যে ব্যাপারটি আছে, ওপেনিং ব্যাটসম্যান ক্রিজে যাবে, মেরে খেলবে। এটা কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে তামিমই প্রথম করে দেখিয়েছে। যে পরিবর্তনটা তামিম নিয়ে এসেছিল, সেটা সব সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। তিন সংস্করণের ক্রিকেটে সেই অন্যতম সেরা। তার মতো একজনকে হারানো বিরাট ক্ষতি।
আমরা তিন সংস্করণের ক্রিকেটের মধ্যে সবচেয়ে ভালো খেলি ওয়ানডে। সেটার একটা বিরাট কারণ আমাদের স্থিতিশীল ওপেনিং জুটি। তামিমের সঙ্গে লিটন দাসের জুটিটা খুবই ভালো করছিল। আমি এই ওপেনার তামিমকে খুব বেশি মিস করব। যেকোনো ভালো দলের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য ওপেনিং জুটির বোঝাপড়াটা খুব দরকার। সেদিক থেকে বিশ্বকাপের তিন-চার মাস আগে এটা অনেক বড় ধাক্কা।
অধিনায়কত্বকে এতটা বড় বিষয় মনে করছি না। এটা ঠিক, তামিমের নেতৃত্বে ওয়ানডে দলটা গত দুই বছর বেশ ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে। আর যেকোনো অধিনায়ককে বিশ্বকাপের আগে অন্তত এক-দুই বছর সময় দেওয়া উচিত। সেটা এখন না হলেও এই দলে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব আছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো হয়নি
ফারুক আহমেদ
তামিমের নেতৃত্বে দলটা কী সুন্দর এগোচ্ছিল বিশ্বকাপের দিকে! সবার অনেক আশা ছিল, ভালো খেলতে থাকা দলটা বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করবে। আমাদের যে তিন-চারজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছে, তাদের শেষ বিশ্বকাপটা খুব ভালো যাবে। এমন সময় যা হলো, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। খুব অবাক হয়েছি। তামিমের চোটের ব্যাপারে অনেক কথা শুনেছি। সেটা কোচ ও অধিনায়কের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। বিষয়টা বাইরে না এলেও হতো।
এ নিয়ে আবার বোর্ডের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টাই পেশাদারত্বের অভাব ছিল। বাইরে থেকে মনে হচ্ছে, যা হয়েছে, তা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো হয়নি। বিশ্বকাপের আগে হুট করেই এ কী হয়ে গেল! তামিম দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার, অধিনায়ক, দলের ওপেনার। কিন্তু তাঁকে নিয়ে নাকি কোচ চিল্লাচিল্লি করেছে! এটা খুবই দুঃখজনক।
এখন বিশ্বকাপে ফল খারাপ হলে দোষ চাপানোর একটা উপায় তৈরি হলো। এত কিছুর পরও দল ভালো করলে তো ভালোই। আর না হলে খারাপ করার একটা কারণ তৈরি হয়েই গেল। বিষয়টা ভালো হয়নি। আরও একজন বড় ক্রিকেটার, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বিদায় হলো অপ্রত্যাশিতভাবে।
ওর বিকল্প পাওয়া কঠিন হবে
আতাহার আলী খান
আমি খুবই দুঃখিত ও বাক্রুদ্ধ। এক দিন আগেও আমি তামিমের সঙ্গে টস করলাম। এখন সবকিছুই অবিশ্বাস্য লাগছে। খবরটা শোনার পর বড় ধাক্কা খেয়েছি। অনুভূতি বলে বোঝাতে পারছি না। ওর বয়স কত? মাত্র ৩৪? এই বয়সে খেলা ছেড়ে দেওয়াটা চিন্তা করা যায় না। আর আমরা কোনো সাধারণ ক্রিকেটারের কথা বলছি না। বলছি তামিম ইকবালের ব্যাপারে। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক সে, দলের ওপেনার। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানও বলা যায় ওকে। তার এত দ্রুত বিদায় নেওয়া চিন্তাই করতে পারছি না।
তামিম ওয়ানডে দলের অধিনায়ক, কদিন পর বিশ্বকাপ। এটা চিন্তা করলেও বিষয়টা মেনে নেওয়া কঠিন। আর ওর ব্যাটিং চোখে লেগে থাকার মতো। তামিমকে আমরা যে ধরনের ইনিংস খেলতে দেখেছি, সেটা আমি ভুলতে পারব না। এখনো ওর খেলা আমার চোখের সামনে ভাসবে। মনের মধ্যে সব যেন গেঁথে আছে। জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে ছক্কা মারা, লর্ডস ও ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেঞ্চুরি করা—এমন কত কত মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে সে। ভাবা যায়, সে আর নেই! ওর মতো ওপেনারের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।