ওয়াগনারকে নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে টেলর–উইলিয়ামসন
নিল ওয়াগনারকে নিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে কি গৃহদাহ শুরু হলো?
প্রশ্নটি উঠছে কারণ, ওয়াগনারকে নিয়ে নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে দীর্ঘদিনের দুই সতীর্থের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য। একজন, এখন সাবেক, অন্যজন এখনো খেলে যাচ্ছেন। প্রথমজন যে রস টেলর, এতক্ষণে তা নিশ্চয়ই জেনে গেছেন।
ইএসপিএনের অ্যারাউন্ড দ্য উইকেট নামের এক পডকাস্টে নিউজিল্যান্ড কিংবদন্তি টেলর বলেছেন, ফাস্ট বোলার ওয়াগনারকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে। দ্বিতীয়জন সে কথার জবাব দিয়েছেন এবং তাঁর নাম কেন উইলিয়ামসন। বোঝাই যাচ্ছে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে দুটোই বেশ ভারি নাম। দুই কিংবদন্তির পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের রেশ কে জানে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে!
উইলিয়ামসন ওয়াগনারকে নিয়ে কথা বলেছেন ক্রাইস্টাচার্চের হ্যাগলি ওভালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। শুক্রবার এই হ্যাগলি ওভালেই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটি সামনে রেখে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওয়াগনারকে নিয়ে টেলরের মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল উইলিয়ামসনের কাছে। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি মনে করি না কাউকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে। গত সপ্তাহটা তার (ওয়াগনার) দারুণ কেটেছে এবং সেটা ছিল তার অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ারেই প্রতিচ্ছবি।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে দলে নেওয়া হবে না, এমন জানার পর অবসরের সিদ্ধান্ত নেন ৩৭ বছর বয়সী বাঁ হাতি পেসার ওয়াগনার। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে উইকেট নেওয়ার পর কাউকে উদ্দেশ্য করে ‘চুপ করার’ ইঙ্গিত করেছিলেন ওয়াগনার। একটি উইকেট পতনের পর দলীয় উদ্যাপনে কাউকে মাঝের আঙুলও দেখিয়েছিলেন। ওয়াগনারের অবসর নেওয়ার সঙ্গে সেগুলোর সম্পর্ক আছে কি না, সে বিষয়ে ইএসপিএনের অ্যারাউন্ড দ্য উইকেট পডকাস্টে জানতে চাওয়া হয়েছিল টেলরের কাছে।
ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা টেলর উত্তরে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় এখন এগুলো একটু বোঝা যাচ্ছে। লুকিয়ে লাভ নেই, আমার মনে হয় এটা বাধ্যতামূলক অবসর। যদি ওয়াগনারের সংবাদ সম্মেলনের কথা শোনেন—সে অবসর নিচ্ছে কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের পরই। মানে সে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছিল।’
ওয়াগনার আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিতে প্রথম টেস্টে দলের সঙ্গে থাকলেও ক্রাইস্টচার্চে শুরু হতে যাওয়া ম্যাচে দলের সঙ্গে থাকবেন না।
ওয়াগনারের মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করার উদ্যাপনের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন উইলিয়ামসন। ফিল্ডিং নিয়ে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদির সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ খোঁচাখুঁচির ফল হিসেবে ওয়াগনার অমন উদ্যাপন করেছেন বলে দাবি করেন উইলিয়ামসন, ‘তারা দুজনেই দারুণ সতীর্থ এবং ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। ওয়াগনারের ফিল্ডিং নিয়ে ড্রেসিংরুমে খোঁচাখুঁচি হয়েছিল। এজন্য সে (সাউদি) তাকে ফাইন লেগে ফিল্ডিংয়ে রেখেছিল যেন ক্যাচ নিতে পারে। ওয়াগনার সে সুযোগটা নিয়েছে। আমার মনে হয় এটা সে-ও (ওয়াগনার) জানে যে বিষয়টি প্রাসঙ্গিক নয় এবং দেখতেও ভালো লাগে না। কিন্তু কিছু কিছু সময় ব্যাপারটা মজার ছিল এবং তা কোন বিষয় নিয়ে, সব খেলোয়াড়ই তা বুঝতে পেরেছে।’
উইলিয়ামসন জানিয়েছেন, বাইরে অনেক কথা হলেও নিউজিল্যান্ড দলের ড্রেসিংরুম শান্তই আছে, ‘হ্যাঁ বেশ ভালো। এই ব্যাপারে আমরা সব সময়ই উন্নতির চেষ্টা করি দল হিসেবে। অনেক বছর ধরেই এটা করা হচ্ছে।’
নিউজিল্যান্ড দলে রস টেলরের অভিষেক ২০০৬ সালে। তার চার বছর পর অভিষেক হয় উইলিয়ামসনের। নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক উইলিয়ামসনের পরেই আছেন ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া টেলর। কিন্তু টেলর দলে যেহেতু সিনিয়র তাই ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নিয়ে উইলিয়ামসন বলেছেন, ‘(টেলর) হয়তো আমার চেয়ে বেশি জানে। ঠিক নিশ্চিত নই আমি। তবে আমি (মাঠে) সবাইকে সর্বস্ব নিংড়ে দিতে দেখি। দল হিসেবে উন্নতির চেষ্টা করে সবাই। দলকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ায় মনোযোগী সবাই।’
ওয়াগনারের সঙ্গে ড্রেসিংরুমের স্মৃতি নিয়েও কথা বলেছেন উইলিয়ামসন, ‘ড্রেসিংরুমে আমাদের অসাধারণ সময় কেটেছে। হ্যাঁ, ব্যাপারটা নিখুঁত ছিল না। অবশ্যই মাঠের পারফরম্যান্স আরেকটু সাহায্য করত। তবে বিষয়টি এর চেয়েও বেশি কিছু। সে দলের হয়ে অবিশ্বাস্য সব কাজ করেছে।’