পাকিস্তানের জন্য আজকের ভারত ম্যাচটি ‘ফাইনাল’

পাকিস্তানের জন্য আজকের ম্যাচটি ‘ফাইনাল’। এ ম্যাচে হেরে গেলে যে বিশ্বকাপ থেকেই হয়তো বিদায় নিতে হবে তাদের! প্রতিপক্ষ যদি গড়পড়তা কোনো দল হতো, তাহলে হয়তো এভাবে বলতাম না। তবে ম্যাচটা ভারতের মতো কঠিন এবং চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। এমন শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এমন বাড়তি স্নায়ুচাপের ম্যাচ—পাকিস্তানকে তাই ফাইনালের মতো চাপ নিয়েই খেলতে হবে।

পাকিস্তান যে অবস্থায় আছে, তাদের পক্ষে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দেখেছি যথেষ্ট উদ্বেগ কাজ করছিল ওদের মধ্যে। ব্যাটিংয়ের শুরুতেও সেটি স্পষ্ট ছিল। দলের মধ্যে নিজেদের ওপর কতটা অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে, মানসিক শক্তির দিক দিয়ে কোথায় আছে, সেগুলো পরিষ্কার হয়ে গেছে। আজ নিউইয়র্কে ভারতের বিপক্ষে সেসব আরও বেশি করে ফুটে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারের ধাক্কা কাটিয়ে আজ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে পাকিস্তান?
এএফপি

জয়ের বিকল্প নেই বলে স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে চাইবে। আর ভারতের সঙ্গে রক্ষণাত্মক খেলে বা আগে ব্যাটিং করে মোটামুটি রানের স্কোর গড়ে লাভ নেই। অলআউট খেলতে হবে। তবে যতই বলি না কেন—পাকিস্তান এ ম্যাচে ফেবারিট নয়, তারপরও পাকিস্তান তো পাকিস্তানই। ভারতও জানে, পাকিস্তান একবার ভালো খেলার মেজাজে চলে এলে তারা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।

নিউইয়র্কের মাঠে খেলাটা চ্যালেঞ্জিং। টসের বড় একটা প্রভাব থাকছে এখানে। তবে উইকেটের হুমকিটা দিন দিন কমে আসছে। সর্বশেষ কানাডা-আয়ারল্যান্ড ম্যাচেও কন্ডিশনটা মনে হয়েছে ব্যাটিংয়ের জন্য একটু সহনীয়। অবশ্য এরপরও টসে জিতলে যেকোনো দলই নিশ্চিতভাবে বোলিং করতে চাইবে, পাকিস্তানও তা–ই চাইবে। তাদের বড় শক্তি তো ফাস্ট বোলিং। টসে জিতে বোলিং নিয়ে ভারতকে চাপে ফেলাটাই হয়তো পাকিস্তানের সামনে একমাত্র পথ।

ব্যাটিংটা অবশ্যই পাকিস্তানের বড় উদ্বেগের ব্যাপার। অনেক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, টি-টোয়েন্টির ট্রেন্ড অনুযায়ী উদ্বোধনী জুটিতে যে গতি আর দাপট দরকার, সেটা পাকিস্তানের নেই। ভারতের উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে তুলনা করলেই দুই দলের মানের পার্থক্য পরিষ্কার হয়ে ওঠে। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির অভিজ্ঞতা আর পারফরম্যান্স বিশ্বমানের। পাকিস্তান সে তুলনায় পিছিয়ে।

দুর্বল শুরুর কারণে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার হাত খুলে বা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে পারছে না। চাপের মধ্য থেকে খেলতে হচ্ছে। পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ধীরগতির হলে ভারত কিন্তু আর বেরোতে দেবে না। পাকিস্তানকে তাই ইতিবাচক থাকতে হবে।

আজকের দিনটি কার হবে—ভারতের পেসার বুমরার, নাকি পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদির?
এসিসি

ভারতও বোলিংয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। বলা চলে প্রায় সমশক্তির। ব্যাটিংয়ে তো অনেকটাই এগিয়ে। ভারতের আরেকটি বড় সুবিধা আছে। নিউইয়র্কে অনুশীলন করেছে, প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচও খেলেছে। উইকেট সম্বন্ধে তাদের ধারণা তুলনামূলক অনেক পরিষ্কার। পাকিস্তান পিছিয়ে থাকবে সেখানেও। ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে যেহেতু দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয় না, তাদের দ্বৈরথকে মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করে লাভ নেই। শক্তিতে ভারত সবখানেই এগিয়ে—ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং। কিন্তু দলটি পাকিস্তান বলে খুব সাধারণ ম্যাচও হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ। সে আশা নিয়েই হয়তো পাকিস্তান মাঠে নামবে। ভারতকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বাড়তি একটা তাগিদও থাকবে।


লেখক: ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক