বৃষ্টি নয়, বাংলাদেশের বাধা দুই দল
ব্রিসবেন থেকে হোবার্ট কত দূর? একই দেশের দুই শহর, যত দূরেই হোক, সেটি আর কত দূরই হবে! কিন্তু আজ ‘ব্রিসবেন টু হোবার্ট’ যাত্রায় বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের নাকি কেবলই মনে হয়েছে, হোবার্ট তুমি কত দূরে?
অস্ট্রেলিয়া বড় দেশ। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও দুই ঘণ্টার বেশি যাত্রা আছে। ব্রিসবেন থেকে হোবার্টের পথে যেমন বাংলাদেশ দলকে আসতে হয়েছে মেলবোর্ন হয়ে। সেটিও কোনো সমস্যা ছিল না, সমস্যা বাধিয়েছে বৃষ্টি।
ভোর ৫টায় ব্রিসবেনের হোটেল থেকে বের হয়ে মেলবোর্ন পর্যন্ত এসে আটকে যেতে হয় ক্রিকেটারদের। বাকি পথটা এক-সোয়া এক ঘণ্টার ফ্লাইট হলেও বৃষ্টির বাধায় মেলবোর্ন থেকে হোবার্টের ফ্লাইট পেছাতে হয়েছে দুবার। এ–ই করে বাংলাদেশ দল যখন হোবার্ট সিটি সেন্টারের ক্রাউন প্লাজা হোটেলে পৌঁছাল, ততক্ষণে বিকেল প্রায় ৪টা। তার মানে ব্রিসবেন থেকে হোবার্টে আসতে সময় লাগল ১১ ঘণ্টার মতো! আজ রাতে ফ্লাড লাইটের আলোয় অনুশীলন করার কথা থাকলেও সেটি তাই বাতিল করতে হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
কাল রাত থেকেই হোবার্ট যে রকম বৃষ্টি আর কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে আছে, তাতে অবশ্য আজ কিংস্টন টুইন ওভালে অনুশীলন করা সম্ভবও হতো না। একই মাঠে কাল সকালের নির্ধারিত অনুশীলন এবং পরশু বেলেরিভ ওভালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটাও বৃষ্টির বাধায় পণ্ড হয়ে যায় কি না, সেই শঙ্কাও জাগাচ্ছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। হোবার্টে বৃষ্টির সম্ভাবনা যে দেখা যাচ্ছে আগামী টানা ৯ দিনই এবং সেটিও যথেষ্ট পরিমাণে!
সুপার টুয়েলভে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার পর প্রথম পর্ব থেকে আর কোন দুই দল বাংলাদেশের গ্রুপে পড়ে, সেটি নিয়ে একটা কৌতূহল ছিল। সেই কৌতূহলের মধুর সমাপ্তি ঘটেছে দল দুটি শ্রীলঙ্কা বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ না হয়ে নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়ে হওয়ায়। অন্য তিন প্রতিপক্ষকে আলোচনার বাইরে রাখলেও অন্তত এই দুটি দলের বিপক্ষে তো বাংলাদেশ জয়ের আশা করতেই পারে।
কিন্তু হোবার্টের বৃষ্টিতে তার অন্তত একটি ভেসে যাওয়ার উপক্রম এখন। বেলেরিভ ওভালের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা যদিও ভালো, অল্প কিছু সময় পেলেও মাঠ খেলার উপযোগী করে ফেলা যায়, তবু জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আশাটা এখন হোবার্টের আকাশের মতোই মেঘলা।
দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুস অবশ্য দুই ক্ষেত্রেই দ্বিমত পোষণ করলেন। প্রথমত, তিনি প্রকাশ করতে চান না যে নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়েকে গ্রুপে পেয়ে খুব খুশি বাংলাদেশ। গ্রুপের অন্য তিন দল ভারত, পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এই দলও নাকি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। দ্বিতীয়ত, তিনি এটাও মনে করেন না যে বৃষ্টির কারণে অনুশীলন বিঘ্নিত হলেও তাতে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো দলই যেকোনো দলকে ছোবল মারতে পারে। কাল বৃষ্টি মাথায় হোবার্টে পৌঁছে ক্রাউন প্লাজার সামনে সেটি মনে করিয়ে দিয়েই জালাল ইউনুস বলছিলেন, ‘যারাই এই পর্বে এসেছে সবাই খুব ভালো দল এবং তারা সেটা প্রমাণ করেই এসেছে। আমরা যাদের বিপক্ষে খেলব, তারাও বেশ শক্তিশালী। টি-টোয়েন্টিতে যে কেউ জিততে পারে। প্রতিটা দলকেই খেলোয়াড়েরা সিরিয়াসলি নিচ্ছে।’ বাংলাদেশ দলের ব্রিফিং, গেম প্ল্যান—সবকিছুতে তাই সব প্রতিপক্ষ পাচ্ছে সমান মর্যাদা।
সে জন্যই প্রস্তুতিটা আরও ভালো দরকার ছিল ক্রিকেটারদের। বিশেষ করে মাঠে নামার আগের কয় দিনের প্রস্তুতি। ব্রিসবেনে বৃষ্টির কারণে খেলা যায়নি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটাই। এরপর বৃষ্টিতে সেখানেই এক দিন অনুশীলন পণ্ড হলো, মাঠে যাওয়া হয়নি আজ হোবার্টে এসেও। সুপার টুয়েলভের প্রস্তুতি কি তবে ঠিকমতো হলো বাংলাদেশের?
জালাল ইউনুসের কথা শুনে মনে হলো, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাইরেই বেশি। দলের মধ্যে অন্তত অনুশীলন করতে না পারা নিয়ে হতাশা নেই। যা একটু আফসোস দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটা না হওয়াতেই, ‘ব্রিসবেনে গতকাল আমরা অনুশীলন করতে পারিনি বৃষ্টির জন্য। তার আগে কয়েক দিন অনুশীলন হয়েছে এবং সেটা ভালোই হয়েছে। খেলোয়াড়েরা অনুশীলন নিয়ে সন্তুষ্ট, কোচও সন্তুষ্ট। দল মনে করে বৃষ্টির কারণে অনুশীলন না হলেও তারা প্রস্তুত। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুশীলন ম্যাচটা হলে ভালো হতো, ম্যাচ খেলার তো কোনো বিকল্প নেই।’
বৃষ্টি সেই বিকল্প ভাসিয়ে নেওয়ার পর এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতেও। দলের আবহে সেই বাধা নিয়ে বড় আলোচনা নেই। তবে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে ভাবনার সঙ্গে আলোচনা আছে নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি নিয়েও। সেটা যেমন হতে পারে সব প্রতিপক্ষকে সমান মর্যাদা দেওয়ার চিন্তা থেকে, হতে পারে পচা শামুকে পা কাটার ভয়েও।