২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশের এই টি-টোয়েন্টি দলে সেরা ব্যাটসম্যান কে

ছবিটি নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে তোলা। কোচিং স্টাফদের সঙ্গে লিটন–নাজমুলরাএএফপি

মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ—একসময় বাংলাদেশ দলের ‘মেরুদণ্ড’ ছিলেন এই পাঁচ ক্রিকেটার। সময়ের পালাবাদলে তাঁদেরও সরে যেতে হচ্ছে এবং হবে।

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলটার কথাই ধরুন। এই পাঁচ ক্রিকেটারের কেউ নেই। রাজনীতিতে পা রাখা মাশরাফি তো বহু আগে থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে নেই। তামিম ও মুশফিক গত বছরই এ সংস্করণ ছেড়েছেন। ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ টি-টোয়েন্টি দলের বাইরে। সম্ভবত আর ফেরা হবে না। বাদ রইলেন শুধু সাকিব। রাজনৈতিক ব্যস্ততায় আপাতত জাতীয় দলের সঙ্গে নেই তিনিও।

অর্থাৎ বাংলাদেশের এই টি-টোয়েন্টি দলটি ভবিষ্যতেরই প্রতিচ্ছবি। এই দলে যাঁরা আছেন, তাঁরাই সম্ভবত দীর্ঘদিন এই সংস্করণে প্রতিনিধিত্ব করবেন বাংলাদেশের। তাই প্রশ্নটি তোলাই যায়, বাংলাদেশের এই টি-টোয়েন্টি দলে সেরা ব্যাটসম্যান কে?

আরও পড়ুন

সংস্করণটি যেহেতু টি-টোয়েন্টি, তাই সেরা ব্যাটসম্যান খুঁজে নিতে টেস্ট ও ওয়ানডের অনুমিতিগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগোনোর উপায় নেই। টি-টোয়েন্টিতে বেশির ভাগের কাছেই স্ট্রাইক রেটই শেষ কথা। এই সংস্করণে বাংলাদেশের বর্তমান দলটির ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, তিনি কিন্তু ম্যাচ খেলায়ও সবচেয়ে অভিজ্ঞ—লিটন দাস। ৭৩ ম্যাচে ১৬৭০ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন। ৭০–এর বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা এই দলে শুধু আর একজনেরই আছে—সৌম্য সরকার। ৭২ ম্যাচে ১২১২ রান সৌম্যর। এরপর রানবিচারে নাম আসে দুটি। আফিফ হোসেন ও বর্তমান দলটির অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। ৬৬ ম্যাচে ১০৯৪ রান আফিফের। ২৫ ম্যাচে ৫৬৬ রান নাজমুলের। এ বছরই অভিষিক্ত তাওহিদ হৃদয় ৮ ম্যাচে করেছেন ১৫৬ রান।

টি–টোয়েন্টিতে রানসংখ্যায় বর্তমান দলটিতে লিটন এগিয়ে
ছবি: এএফপি

অন্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রনি তালুকদার (৮ ম্যাচে ২০৪ রান) কিংবা অলরাউন্ডারদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজের (২৫ ম্যাচে ২৪৮ রান) রানে অবস্থান এমন আহামরি নয়। আরেক অলরাউন্ডার শামীম হোসেন ১৭ ম্যাচে করেছেন ২৪৫ রান। তাঁদের চেয়ে অবশ্য এগিয়ে ৩৮ ম্যাচে ২৫৯ রান করা মেহেদী হাসান। সেরা ব্যাটসম্যান বাছতে তাঁদের বাইরে দলের বোলারদের ব্যাটিং পরিসংখ্যান টেনে আনাটা নিষ্প্রয়োজন। তাই ওসব আর জানানো হলো না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রানে এগিয়ে থাকলেই কি টি-টোয়েন্টিতে সেরা ব্যাটসম্যান হওয়া যায়? উত্তর সম্ভবত ‘না’।

আরও পড়ুন

আবার এভাবেও বলা যায়, রানের হিসাবে এগিয়ে থাকতে তো বেশি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতে হবে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের যে সাত ব্যাটসম্যান এক হাজারের বেশি রান করেছেন, তাঁদের সবাই অন্তত ৬০–এর বেশি ম্যাচ খেলেছেন। এই ম্যাচসংখ্যা ৬৬ থেকে ১১৭ পর্যন্ত এবং সে তালিকায় বর্তমান দল থেকে আছেন মাত্র তিনজন—লিটন, সৌম্য ও আফিফ। তাই শুধু ম্যাচ ও রানসংখ্যা দেখে এই তিনজনকে সেরা হিসেবে বেছে নিলে অন্যদের প্রতি অন্যায় করা হয়। কারণ, পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ এখনো অন্যরা পাননি। আর টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ২০ ওভারের মধ্যে ‘ইমপ্যাক্ট’-ই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। ব্যাটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে এটার অর্থ হলো, ম্যাচে দলকে জেতাতে ব্যাট হাতে কতটা প্রভাব রাখতে পারছেন। টি-টোয়েন্টির সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার মূল নিয়ামক সম্ভবত এর মধ্যেই লুকিয়ে। আর তা বের করে আনতে হলে সবার আগে দেখতে হবে স্ট্রাইক রেট এবং তারপর ব্যাটিং গড়। আবার সেরা ব্যাটসম্যান হতে ধারাবাহিক হওয়াও যে অন্যতম পূর্বশর্ত।

রনি তালুকদারের স্ট্রাইকরেট সবচেয়ে বেশি
প্রথম আলো

বাংলাদেশের বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা স্ট্রাইক রেট রনি তালুকদারের। ৮ ম্যাচে ১৩৭.৮৩ স্ট্রাইক রেট। ২০১৫ সালে এ সংস্করণে অভিষিক্ত রনির স্ট্রাইক রেট ভালো হলেও কম ম্যাচ খেলার অনভিজ্ঞতায় কারও কারও বিচারে পিছিয়ে পড়তে পারেন। এই দলে ১৩০–এর বেশি স্ট্রাইক রেট আছে আর দুজনের—লিটন ও তাওহিদ হৃদয়ের। ১৩০.৮৭ স্ট্রাইক রেট লিটনের। ৮ ম্যাচে তাওহিদের ১৩৫.৬৫।

আরও পড়ুন

স্ট্রাইক রেটের বিচারে কেউ কেউ তাওহিদকে এগিয়ে রাখলেও এটা ভুললে চলবে না অভিজ্ঞতায় এখনো তাঁর ঘাটতি আছে। তুমুল সম্ভাবনাময় সেটা ঠিক, কিন্তু আরও বেশি ম্যাচ না খেললে তাওহিদের সে সম্ভাবনা কতটুকু প্রস্ফুটিত হয়েছে, সেটাও যে বোঝা যায় না! ৭২ ম্যাচ খেলা সৌম্যর স্ট্রাইক রেট ১২২.৪২। সৌম্যকে নিয়ে প্রশ্ন একটাই—ধারাবাহিকতা। তাঁর ১৭.৫৬ ব্যাটিং গড় সে যুক্তির পক্ষে সবচেয়ে বড় সাক্ষী। ৬৬ ম্যাচে আফিফের স্ট্রাইক রেট ১২০.৪৮। বাংলাদেশ দলে আর কারও স্ট্রাইক রেট ১২০–এর ওপাশে নেই। শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন ও মেহেদী হাসানদের স্ট্রাইক রেট ১০০ থেকে ১১৯–এর মধ্যে।

ব্যাটিংগড়ে নাজমুল এগিয়ে
এএফপি

টি-টোয়েন্টি আসার আগে একসময় ব্যাটসম্যান কতটা ভালো, তা নির্ধারণ করতে ব্যাটিং গড়কে গুরুত্ব দেওয়া হতো সবচেয়ে বেশি। কারণ, এতে একজন ব্যাটসম্যান কতটা ধারাবাহিক, সেটার প্রতিফলন থাকে। সে হিসাবে বাংলাদেশের বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলের সেরা ব্যাটসম্যান নাজমুল। তাঁর ব্যাটিং গড় ২৬.৯৫। অন্তত ১০০ রান করেছেন—এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর ব্যাটিং গড়ই সেরা। এ তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় খেলোয়াড়টিও আছেন বর্তমান দলে—তাওহিদ হৃদয় (২৬.০০) ও রনি তালুকদার (২৫.৫০)। লিটনের ব্যাটিং গড় ২৩.৫২। শামীমের ২২.২৭ এবং আফিফের ২১.০৩। বাংলাদেশের বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আর কারও ব্যাটিং গড় ২০–এর ওপাশে নেই।