প্রশ্নটা তোলা হয়েছে আইসিসির ওয়েবসাইটে—ইয়াসির শাহ কি আধুনিক সময়ে ‘শতাব্দীর সেরা বল’ করলেন?
এমনকি এই ডেলিভারি হজম করা প্রতিপক্ষ দলের টুইটার পেজেও প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে। ইয়াসির শাহ কি ‘শতাব্দীর সেরা বল’ করার দাবিদার?
গল টেস্টে আজ চতুর্থ দিনের খেলা চলছে। দিনেশ চান্ডিমালের অপরাজিত ৯৪ রানের কল্যাণে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৭ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। জয়ের জন্য ৩৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করছে পাকিস্তান। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিনা উইকেটে ৩৭ রান তুলেছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম–উল–হক। এর মধ্যে ইয়াসির শাহর প্রসঙ্গ উঠে আসাটা মোটেও ধান ভানতে শিবের গীত নয়।
কাল তৃতীয় দিনে ইয়াসির এমন একটি ডেলিভারি করেছেন, যা এ টেস্টের ‘সাইনবোর্ড’ হয়ে থাকতে পারে কারও কারও মনে। বিশেষ করে কুশল মেন্ডিস সম্ভবত ডেলিভারিটা কখনো ভুলতে পারবেন না! যেমনটা ভুলতে পারেননি মাইক গ্যাটিংও। শেন ওয়ার্নের সেই যে ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’!
প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান স্পিন কিংবদন্তির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। আগে ইয়াসিরের কথা বলা যাক। সেটি শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৬তম ওভারের ঘটনা। ইয়াসিরের একটু জোরের ওপর ঝুলিয়ে ছাড়া ডেলিভারিটি লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরে পড়েছিল।
৭৬ রানে ব্যাট করা মেন্ডিস তখন উইকেট ‘সেট’—পেছনের পায়ে ভর করে বলটা আরামে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আরাম দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় বলের বাঁকে। বলটা তীক্ষ্ণ মোচড় নিয়ে সাপের ফণার মতো ছোবল তুলে আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। মেন্ডিস এর মধ্যে পেছনের পায়ে ভর করে বলটা ব্যাটে খেলার যারপরনাই চেষ্টা করেনও পারেননি। হেরে যান বলের বাঁক ও ভুল পায়ে খেলার মাশুল গুনে।
কোনো লেগ স্পিনারের হাত থেকে এমন জাদুকরি ডেলিভারি বের হলে প্রায় সবার স্মৃতিতেই ভেসে ওঠে একটি ডেলিভারি।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ১৯৯৩ অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্ট। শেন ওয়ার্নের করা বলটিও পড়েছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। সাবধানী গ্যাটিং সামনের পায়ে ভর করে নিজের স্টাম্প আগলে খেলার চেষ্টা করেন।
কিন্তু কিসের কী! অবিশ্বাস্য বাঁক নিয়ে বলটা গ্যাটিংয়ের অফ স্টাম্প ভেঙে দেয়। আকাশ থেকে জ্যান্ত একটা ভিনগ্রহের প্রাণী নেমে এলেও গ্যাটিং বোধ হয় এতটা অবাক হতেন না! গ্যাটিং তখন ঠিক যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, কাল মেন্ডিসকেও সে অভিজ্ঞতা উপহার দেন গত বছর আগস্টের পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা ইয়াসির।
ধারাভাষ্যকারেরাও মেন্ডিসের আউট দেখে ওয়ার্নের সেই জাদুকরি বলের প্রসঙ্গ তোলেন। দুজনের ডেলিভারিতে সামঞ্জস্যের কথা বলাবলি করছিলেন।
ইয়াসিরের ডেলিভারিটি নিয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের টুইটে বলা হয়, ‘শতাব্দীর সেরা বলের দাবিদার? ইয়াসির শাহ অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারিতে কুশল মেন্ডিসকে আউট করেছেন, যা দেখে দর্শকদের শেন ওয়ার্নের করা শতাব্দীর সেরা ডেলিভারিটি মনে পড়েছে।’ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান মারনাস লাবুশেনও ইয়াসিরের এই ডেলিভারির ভিডিও শেয়ার করেন। ‘গত সপ্তাহে দেখা ক্রিকেটের সেরা ঘটনা’—ক্যাপশনে লেখেন লাবুশেন।
ওয়ার্ন বেঁচে থাকতে তিনি নিজেও ইয়াসিরের বোলিং পছন্দ করতেন। ২০১৫ সালেই পাকিস্তানি এ তারকাকে ‘বিশ্বের সেরা লেগ স্পিনার’ বলেছিলেন ওয়ার্ন। এরপর নানা সময় ইয়াসিরের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন কিংবদন্তি এই লেগ স্পিনার।