শেষটা কি সুন্দর হবে শুবমান গিলের
৮৫১ রান, ৬০.৭৮, স্ট্রাইক রেট ১৫৬.৪৩—শুবমান গিলের এমন এক আইপিএল মৌসুম দেখে অবাক হচ্ছেন? প্রতিভা ও সামর্থ্যের বিচারে গিলের ৬০ গড়ে ৮৫১ রান দেখে আসলে অবাক হওয়ার কথা নয়। এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল!
গিল মাঠের চারপাশে নান্দনিক সব শট খেলবেন, পরিণত মস্তিষ্কে ইনিংসগুলো বড় করবেন, মাথা ঠান্ডা রেখে দক্ষ ফিনিশার হিসেবে দলকে পৌঁছে দেবেন জয়ের বন্দরে। এমনটা কল্পনা করেই তো ভারতীয় ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট অনেকেই তাঁকে তুলনা করতেন বিরাট কোহলির সঙ্গে।
তাহলে? গিলকে নিয়ে কী বিস্ময়ের কিছুই নেই? তা আছে বৈকি। গিল যে সংস্করণে, যেভাবে রান করছেন, এটাই বিস্ময়। এটাই তাঁর নিজেকে বদলে ফেলার বড় প্রমাণ। গিলের আইপিএলের সর্বশেষ ইনিংসটাই লক্ষ্য করুন।
মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ৬০ বলে ১২৯ রান করার পথে ১০টি ছক্কা মেরেছেন, চার ৭টি। গিলের সামনে যেন মুম্বাইয়ের বোলাররা বল ফেলার জায়গাটাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সর্বশেষ চার ইনিংসে এটি ছিল তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরি, আরও দুটি ইনিংস পেছনে গেলে ৯৪ রানের একটি ইনিংসও আছে গিলের।
পুরো মৌসুমে এখন পর্যন্ত গিলের ছক্কা ৩৩টি। মজার ব্যাপার হলো, এই মৌসুমে ৩৩ ছক্কা মারা গিল আইপিএলের গত ৫ মৌসুম মিলিয়ে মোট ছক্কা মেরেছেন ৪৭টি। আইপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরে ৮০০-এর বেশি রান করেছেন তিনি। এর আগে এই কীর্তি ছিল বিরাট কোহলি, ডেভিড ওয়ার্নার ও জস বাটলারের। আইপিএল ইতিহাসে এক আসরে বিরাট কোহলির সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড (৯৭৩) ভাঙতে গিলের প্রয়োজন ১২৩ রান। যে ছন্দে আছেন, কে জানে দূরের মনে হওয়া এই রেকর্ডটাও নিজের করে নেন কি না!
গিল শুধু ওয়ানডে ও টেস্টে ভালো করবেন, সবার ধারণা এমনটাই ছিল। সেই ধারণা আরও দৃঢ় হয় আইপিএলে গিলের প্রথম কয়েক মৌসুমের পারফরম্যান্সে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২১—আইপিএলে এই চার মৌসুমে গিল খেলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে।
সেখানে প্রথম মৌসুমটা বাদ দিলে বাকি তিন মৌসুমেই ১২৫–এর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করতে পারেননি গিল। বিশেষ করে ২০২১ সালের আইপিএল মৌসুমটা তো গিলের জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। সেই মৌসুমে ১১৮ স্ট্রাইক রেটে রান করা গিলকে ইঙ্গিত করে তখনকার কলকাতার কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বলেছিলেন, ‘কাউকে বদলাতে না পারলে, মানুষটাকেই বদলে ফেলুন।’
কলকাতা হেঁটেছিল পরিবর্তনের পথেই, নতুন ঠিকানায় গিলও ছিলেন নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টায়। প্রথম মৌসুমেই গুজরাটের হয়ে শিরোপা জেতেন গিল। ৪৮৩ রান করে সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই ব্যাটসম্যান। তবে সেই গিল অবশ্যই আজকের এই গিলের মতো বিধ্বংসী ছিল না। এবারের আইপিএল দিয়েই যে নতুন গিলের পথচলা শুরু, বিষয়টি এমনও নয়।
ভারতের হয়ে নিজের বিধ্বংসী রূপ এর আগেই দেখিয়েছেন এই ওপেনার। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি তাঁর ক্যারিয়ার ৬ ম্যাচের। এর সর্বশেষটিতে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৩ বলে করেছিলেন অপরাজিত ১২৬ রান। সেদিন ম্যাচসেরা হওয়া ইনিংসটি তিনি খেলেছিলেন আজকের আইপিএলের ফাইনালের ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামেই।
চলতি আইপিএল মৌসুমটা গিলের জন্য বিশেষ। এই বিশেষ মৌসুমটাকে আরও বিশেষ কীভাবে করা যায়? নিঃসন্দেহে শিরোপা জিতে। গিলও চাইবেন শিরোপা জিতে এটিকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে। আর আহমেদাবাদে বড় ইনিংস খেলার রেসিপি তো গিলের ভালো করেই জানা।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৬ রানের মতো আইপিএলে নিজের সর্বোচ্চ ১২৯ রানের ইনিংসটিও এই আহমেদাবাদেই খেলেছেন। আহমেদাবাদে আজ আরেকবার জ্বলে উঠবেন? খেলবেন বড় একটা ইনিংস? তাহলে যে শেষটাও সুন্দর হয় শুবমান গিলের!