গম্ভীরকে আউট করা বোলার এখন ইউপি পুলিশ ইন্সপেক্টর

পুলিশে চাকরি করলেও মোহন প্রতাপ সিং ক্রিকেটটাও ভালোই খেলতেনপ্রথম আলো

গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামের মিডিয়া গেটের সামনে ডিউটি করছিলেন ইন্সপেক্টর মোহন প্রতাপ সিং। সঙ্গে থাকা এক ভারতীয় সাংবাদিক প্রেস বক্সে ঢোকার আগে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, ‘উনি একবার গম্ভীরকে আউট করেছেন, স্টোরি করবে?’ দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ব্যাটসম্যান আর বর্তমান ভারতীয় দলের প্রধান কোচের নামটা শুনে আগ্রহ জাগল। একজন পুলিশ কীভাবে গম্ভীরকে আউট করতে পারে? কৌতূহলী হয়ে একসময়ের বাঁহাতি স্পিনার মোহন প্রতাপ সিংয়ের কাছে পুরো গল্পটা জানতে চাইলাম।

তিনিও আগ্রহী হলেন গল্পটা শোনাতে। প্রেস বক্সের গেট থেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে শোনালেন ইউপি পুলিশের কেতাদুরস্ত পোশাকের আড়ালে সাদা জার্সির মোহন প্রতাপ সিংয়ের কথা। তিনি উত্তর প্রদেশ পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৯২ সালে—পুলিশের হয়ে ১২ বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। মূলত উত্তর প্রদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ছিলেন নিয়মিত। খেলেছেন দিল্লি ও মুম্বাইয়েও। ২০০৬ সালের এপ্রিলে তেমনই এক ঘরোয়া ক্রিকেটে ইউপি পুলিশের হয়ে লক্ষ্ণৌর ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় টুর্নামেন্ট শিশমহল কাপে খেলছিলেন মোহন প্রতাপ সিং। প্রতিপক্ষ সাহারা ইন্ডিয়া টিম—সে দলে এর মধ্যেই ভারতের হয়ে খেলে ফেলা গম্ভীর খেলছিলেন।

বাকি গল্পটা শুনুন মোহন প্রতাপের মুখে, ‘ওই দলে গৌতম গম্ভীর, যোগিন্দর শর্মা, মিথুন মিনহাজ, লক্ষ্মীপতি শুকলা খেলছিলেন। সেদিন হাত ঘুরিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলাম। গম্ভীর ছিলেন একজন। বোলার হলেও সেদিন ব্যাটিংও ভালো করেছিলাম, ২০-৩০ রান। গম্ভীর আমার প্রশংসা করেছিলেন ম্যাচ শেষে। ডেকে নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন।’

আরও পড়ুন
মোহন প্রতাপের সেই খেলার খবর ভারতের সংবাদমাধ্যমে
সংগৃহীত

মোহন প্রতাপ খেলা চালিয়ে গেছেন। নিয়মিত অনুশীলন করলেন উত্তর প্রদেশের তারকা আর পি সিং, সুরেশ রায়নাদের সঙ্গে। কিন্তু অতটা উঁচুতে উঠতে পারেননি। নিজ রাজ্যের রঞ্জি দলের সেরা ১৫ পর্যন্ত তিনবার (২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭, ২০০৯-১১ মৌসুম) সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু একাদশে কখনোই নয়, ‘রঞ্জিতে অভিষেক হওয়ার খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম দুই-তিনবার। উত্তর প্রদেশ রঞ্জি দলের সেরা ১৫-তে ছিলাম। কিন্তু কখনো দলে জায়গা হয়নি। ইউপি বারবার হারতে থাকত তখন। তবু কখনো একাদশে সুযোগ হয়নি। বয়সও হয়ে যাচ্ছিল। পুলিশের চাকরি যেহেতু, সেখানেই ধীরে ধীরে মনোযোগ আর সময় দিতে থাকি।’

কথাগুলো বলতে বলতে মাঠের ওই পাশে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের দিকে তাকাচ্ছিলেন মোহন প্রতাপ। ড্রেসিংরুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে খেলা শুরুর অপেক্ষায় ছিলেন সেই গম্ভীর, নতুন ভূমিকায়। আর মোহন প্রতাপ তাঁদেরই নিরাপত্তায় দাঁড়িয়ে মাঠের এ পাশে। জীবনের এই খেলা নিয়ে অবশ্য মোহন প্রতাপকে একটুও আক্ষেপ করতে দেখা গেল না, ‘আমি ১৯৯২ সাল থেকেই পুলিশের চাকরি করছি। পুলিশ ক্রিকেট দল থেকেই পেশাদার ক্রিকেট খেলেছি প্রায় ১২ বছর—২০১০ পর্যন্ত। দিল্লি, মুম্বাইয়ে খেলেছি। সারা ইউপিতে ক্রিকেট খেলেছি। পুলিশের দলের হয়ে নিয়মিত খেলা হতো আমাদের। এখন তো জীবন অন্যদিকে মোড় নিয়েছে।’

আরও পড়ুন
চেন্নাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর
এএফপি

এরপর গম্ভীরের সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নে একটু মজা করে বললেন, ‘দেখা হয়নি। তবে হলেও নিশ্চিত তার আমাকে মনে রাখার কথা নয় (হাসি)। তবে বুঝতেই পারছেন, তাকে আউট করার স্মৃতিটা আমি সব সময় মনে রাখব।’

যে মাঠে একটা সময় খেলে এসেছেন, সেই মাঠেই এখন ক্রিকেট ম্যাচের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোহন প্রতাপ। ডিউটির এই সময়টা তিনি বেশ উপভোগও করেন। কাজের ফাঁকে টুকটাক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখা হয়ে যাচ্ছে। নিজের ছোট্ট ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা দিয়ে অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ম্যাচের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করছেন। তিনি পুরো সময়টাকে বলেন ‘হ্যাপি টাইম ভাই, হ্যাপি টাইম’। ঘরোয়া ক্রিকেটার হিসেবেও নিজের সময়টাকেও ‘হ্যাপি টাইম’ বললেন মোহন প্রতাপ।

আরও পড়ুন