‘খালি চোখে দেখে মনে হয়েছে, সে কিছু একটায় লাগিয়েছে’—কথাটি ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার। মেলবোর্ন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১৮৪ রানে হারের পর বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে। বিষয়? যশস্বী জয়সোয়ালের আউটের সিদ্ধান্ত, যেটা দিয়েছেন তৃতীয় আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। রোহিত বোঝাতে চেয়েছেন, এমনিতে দেখে মনে হয় জয়সোয়ালের ব্যাট কিংবা গ্লাভস ‘কিছু একটা’য় লেগেছিল। সেই কিছু একটা যে বল, তা তো বোঝাই যায়।
সংবাদ সম্মেলনে রোহিত যে অবধারিতভাবেই জয়সোয়ালের আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্নের সন্মুখীন হবেন, সেটা মোটামুটি সবারই জানা ছিল। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৮৪ রানে ব্যাট করা জয়সোয়াল। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের করা ৭১তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন জয়সোয়াল। জয়ের জন্য ৩৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪০ রানে সেটি ভারতের সপ্তম উইকেটের পতন। এরপর মাত্র ১৫ রানে বাকি ৩টি উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় ভারত।
জয়সোয়ালের আউটের সময় দিনের খেলার ২১.২ ওভার বাকি ছিল। কামিন্সের বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে তিনি ক্যাচ দেন উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির হাতে। মাঠের আম্পায়ার জোয়েল উইলসন কামিন্সদের আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় রিভিউ নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত যায় তৃতীয় আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার কাছে। বল জয়সোয়ালের ব্যাট ও গ্লাভস পেরিয়ে যাওয়ার সময় রিয়েল টাইম স্নিকো প্রযুক্তিতে কোনো রেখা দেখা যায়নি। ফ্লাট লাইন ছিল।
কিন্তু ভিডিও রিপ্লেতে জয়সোয়ালের ব্যাটের কানা ও গ্লাভসে লেগে বলের গতিপথ পরিবর্তিত হতে দেখা গেছে। শরফুদ্দৌলাও সে সময় বলেছেন এ কথা। চোখে যেটা তিনি দেখেছেন (বলের গতিপথ পাল্টানো), সে অনুযায়ীই মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টে জয়সোয়ালকে আউট ঘোষণা করেন শরফুদ্দৌলা। সিদ্ধান্তটি জয়সোয়াল মেনে নিতে পারেননি। আম্পায়ারদের সঙ্গে মাঠেই তর্কে জড়ান এবং তারপর মাঠ ছাড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে রোহিত এই আউট নিয়ে বলেছেন, ‘আমি জানি না এ নিয়ে কী বলব। কারণ, প্রযুক্তিতে কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু খালি চোখে দেখে মনে হয়েছে, সে (জয়সোয়াল) কিছু একটাতে (ব্যাট) লাগিয়েছে। আম্পায়াররা প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করতে চান, তা আমি জানি না। তবে ন্যায়পরায়ণতার খাতিরেই বলছি, আমার মনে হয়, সে বলটা ছুঁয়েছে...।’ রোহিত এরপর আরও বলেন, ‘আমরা জানি, প্রযুক্তি শতভাগ সঠিক নয়। বেশির ভাগ সময় আমরাই এর ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হচ্ছি...এখানে আমরা দুর্ভাগা।’
রেকর্ড পাঁচবার আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের স্বীকৃতি পাওয়া সাবেক আম্পায়ার সাইমন টফেল শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্তকেই সঠিক বলে মনে করেন। এই অস্ট্রেলিয়ান চ্যানেল সেভেনকে বলেছেন, বলের গতিপথের বিচ্যুতিটাই ‘চূড়ান্ত প্রমাণ’।
শরফুদ্দৌলা নিজের আইনি সীমানার ভেতর থেকে সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছেন বলে মনে করেন টফেল, ‘আমার মতে, ওটা আউট। তৃতীয় আম্পায়ার শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন...আম্পায়ার যখন ব্যাট থেকে (বলের) পরিষ্কার বিচ্যুতি দেখেছেন, তখন আর এগোনো কিংবা বিষয়টি প্রমাণে কোনো প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। (বলের) পরিষ্কার বিচ্যুতিটাই চূড়ান্ত প্রমাণ।’
টফেল এরপর আরও বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছ থেকে আমরা যেটা দেখলাম, তাঁরা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। যে কারণে বিচ্যুতির পক্ষে একই চূড়ান্ত প্রমাণ অডিওতে বোঝা যায়নি। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় আম্পায়ার পরিষ্কার বিচ্যুতির পক্ষে থেকে সঠিক কাজটাই করেছেন এবং মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। তাই আমার মতে, সঠিক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।’
তবে ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। স্টার স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘আমরা অনেকবার দেখেছি, বল সিমে পড়ে ব্যাটে না লেগে খুব কাছ দিয়ে গিয়ে দেরিতে সুইং করে। দূর থেকে মনে হয়, বল ব্যাটের কানায় লেগেছে। আমি সামনের পায়ে ডিফেন্সের কথা বলছি, (জয়সোয়ালের) হুক শটের কথা নয়। দেখার ভুলের কারণে মনে হয়, বল ব্যাটে লেগেছে। এখানেও দেখার ভুলই হয়েছে। প্রযুক্তি যদি বলে এটা আউট নয়, তাহলে আউট দেওয়ার সুযোগ নেই।’
স্টার স্পোর্টসে ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচারে ধারাভাষ্যকার মার্ক নিকোলাস ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকার শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্তকে ‘সাহসী’ বলে মন্তব্য করেন।