বাংলাদেশ নারী দলের প্রধান কোচ হাশান তিলকারত্নে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আউট হওয়া বা ব্যর্থতার ভয়ের কারণেই ব্যাটাররা সেভাবে পারফর্ম করতে পারছেন না। এবার অধিনায়ক নিগার সুলতানা বললেন, আউট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ খেলতে না পারলে সেটা বোকামি হচ্ছে। সে ভয়টা নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে ব্যক্তিগতভাবে কাটিয়ে উঠতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
ভারতের কাছে ৫-০-তে সিরিজ হারের পর আজ সংবাদ সম্মেলনে কোচের কথার সূত্র ধরে অধিনায়ককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘দিন শেষে তো সবাই আউটই হচ্ছি। শূন্য করে বা ১০ রান করে। একদিন ব্যাটে বলে হবে, একদিন হবে না। দিন শেষে আউটই হবেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যর্থতার ভয় নিয়ে থাকলে কেউ রান করতে পারবে না। চাপ নিতেই হবে। আউট হয়ে যাব, এ জন্য খেলতে পারছি না, এটা ভাবলে বোকামি হবে।’
সেটা করতে গেলে নিজেকেই এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৯৩ রান করা নিগার, ‘যার যার নিজের ভয় নিজেকেই কাটাতে হবে। এটা আমরা কাটিয়ে তুলতে পারব না। অধিনায়ক হিসেবে হয়তো একটু উৎসাহ দিতে পারব, “মোটিভেশনাল স্পিচ” দিতে পারব। এর বেশি কিছু করতে পারব না।’
দলের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা আছে, নিগার অবশ্য বলেছেন সেটিও, ‘আমাদের ভাবতে হবে, এর চেয়ে ভালো করতে হলে এসব নেতিবাচক ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ম্যানেজমেন্ট সব প্লেয়ারকে ওই স্বাধীনতা দিয়েছে। অনেক সহায়তা আমরা পেয়েছি। যতটা স্বাধীনতা দিলে খেলাটা সহজ হয়ে যায়, কোচ এবং আমার পক্ষ থেকে তা (সবার প্রতি) ছিল।’
প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনা নেওয়ার ক্ষমতাও থাকা উচিত, নিগার মনে করিয়ে দিয়েছেন তা, ‘গত ছয় মাসে অনেক ছোটখাটো ব্যাপার আমরা ভালো করছিলাম, আর ভালো খেলার জন্য বড় ভুলও পুষিয়ে দেওয়া যাচ্ছিল। এখন সে ভুলগুলো চোখে পড়ছে। তবে এসব মেনে নেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব। প্রশংসা শুনলে ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার ক্ষমতাও থাকতে হবে।’
নিগারের মতে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুই সংস্করণ মিলিয়ে ৬-০-তে হারের পর ভারতের কাছে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ হারে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘গ্যাপ’টা স্পষ্ট হয়ে গেছে। বিশ্বকাপের আগে এমন পারফরম্যান্স সতর্কবার্তা হয়েও কাজ করবে বলে মনে করেন তিনি, ‘সবাই জেতার জন্য নামে। এখন আর শেখার সুযোগ নেই। এখন এসে যদি বলি যে শিখছি, তাহলে ভুল হবে। সবাই চায়, আমরাও চাই, মানুষও চায় যাতে জিতি। জেতার ওপরে কিছু নেই। হ্যাঁ, নতুন কিছু খেলোয়াড়ের জন্য শেখার সুযোগ ছিল এটি। কিন্তু আমরা যারা সিনিয়র আছি, তাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা—রান করতে বা অবদান রাখতে না পারলে জায়গা ধরে রাখা কঠিন হবে।’
শেষ ম্যাচে একটু উন্নতি হলেও ব্যাটিংটাই নিগারের কাছে বড় উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ফিল্ডিংটাও ভাবাচ্ছে তাঁকে। আজও সহজ ক্যাচ পড়েছে, অন্তত দুটি বাউন্ডারি মিস হয়েছে। যেগুলো না হলে ভারতকে আরও কম রানের মধ্যে আটকাতে পারত বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোগী হতে বলছেন নিগার, ‘এটা ব্যক্তিগত খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে। কতটুকু দিচ্ছি। যারা নিয়মিত ভুল করছে, তাদের আরেকটু ভাবা উচিত—আন্তর্জাতিক মানটা ধরে রাখতে পারছে কি না। ম্যানেজমেন্টের দেখা উচিত, কে কে ভুল করছে এবং তাদের কীভাবে সহায়তা করলে এটা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।’
আপাতত ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করে ফেরার আশার কথাও শুনিয়েছেন অধিনায়ক, ‘প্রত্যাশা সবারই আছে। আমাদেরও পরিবার আছে, বন্ধুরা আছে, যারা আমাদের সমর্থন করে। কেউ তো ইচ্ছা করে বাজে করতে চায় না। হয়ে গেছে। তবে সবাইকে শক্ত হয়ে নিজেদের ভুল দেখতে হবে। আমাদেরই দায়িত্ব। সামনে ঘরোয়াতে খেলব, সেখানে যদি আরেকটু ভালো করে আসতে পারি।’