স্টয়নিসের প্রেরণা যখন দল থেকে বাদ পড়া
ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং, কিথ মিলার, রিচি বেনোর পর শেন ওয়াটসন—অস্ট্রেলিয়ার সমৃদ্ধ ক্রিকেট ইতিহাসে অলরাউন্ডারদের ছোট্ট তালিকা করতে গেলে এই চারটি নাম আসবেই। তর্কের খাতিরে অনেকে জর্জ গিফেন, মন্টি নোবেল, অ্যালান ডেভিডসন এমনকি স্টিভ ওয়াহর নামও বলতে পারেন। তবে ওয়াটসন ছাড়া অন্যরা এ যুগের অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের প্রতিনিধি নন। আর ওয়াটসনও সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ২০১৬ সালে। এরপর আর তাঁর জায়গা পূরণ করার মতো কাউকে পায়নি অস্ট্রেলিয়া। কখনো গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কখনো মিচেল মার্শের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কয়েক ওভারের বোলিং দিয়েই সে শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করে আসছিল দলটি।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মার্কাস স্টয়নিস যেন তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী ওয়াটসনের কথাই মনে করিয়ে দিলেন। অস্ট্রেলিয়া এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছে ৪টি, এর মধ্যে তিন ইনিংসে ব্যাট করে স্টয়নিসের রান বিশ্বকাপের তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫৬, অর্ধশত ২টি। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করা ব্যাটসম্যানও তিনিই। যেখানে অন্য দলের ব্যাটসম্যানদের রান তুলতে নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে স্টয়নিস রান করেছেন ১৯০ স্ট্রাইক রেটে! ৩৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার ৩ ইনিংসে ৯ ওভার বল করে উইকেট নিয়েছেন ৬টি, ইকোনমি রেট ৫.৭৭ ও গড় ৮.৬৬। অস্ট্রেলীয়দের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন শুধু অ্যাডাম জাম্পা (৯ উইকেট)।
ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পুরস্কারও পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান এই ক্রিকেটার। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্যেই ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো উঠে এসেছেন টি-টোয়েন্টিতে আইসিসির সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকার শীর্ষে। মনে করার চেষ্টা করে দেখুন তো, সর্বশেষ কোন পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে এ তালিকার শীর্ষে দেখেছেন? হ্যাঁ, শেন ওয়াটসনই। ২০১৬ সালে নিজের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সময় ওয়াটসন ছিলেন বিশ্বের ১ নম্বর টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডার।
তা হুট করে স্টয়নিসের খেলায় কী এমন পরিবর্তন এল যে তিনি অলরাউন্ডারদের তালিকার শীর্ষে উঠে এলেন? বিশালদেহী এই ক্রিকেটার বড় বড় ছক্কা মারতে পারেন, মাঝের ওভারে গতি কমিয়ে–বাড়িয়ে বৈচিত্র্যময় বোলিংও তাঁর শক্তি। এবারের বিশ্বকাপেও ঠিক তা-ই করে চলেছেন। তাহলে আগের পারফরম্যান্সের সঙ্গে তাঁর বিশ্বকাপের পারফম্যান্সের পার্থক্যটা কোথায়?
স্টয়নিসের নিজেই খোলাসা করেছেন বিষয়টা। গত বছর ভারতে হয়ে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের লিগ পর্বে ধারাবাহিকভাবে রান পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনাল ও ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্টয়নিসকে বাদ দিয়ে মারনেস লাবুশেনকে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত লাবুশেনের সাহসী ব্যাটিংই অস্ট্রেলিয়াকে ষষ্ঠ শিরোপা এনে দিতে সাহায্য করে।
বিশ্বকাপজয়ী দলের একাদশে জায়গা হারানোর ব্যথা এখনো ভুলতে পারেননি স্টয়নিস, ‘আমার আর মারনেসের মধ্যে একাদশে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই ছিল। উইকেট কেমন থাকবে, সেটার ওপর নির্ভর করে আমাদের দুজনের একজনের খেলার কথা। সেটা এখনো আমাকে কষ্ট দেয়। আমার সঙ্গে আমাদের কোচের সম্পর্ক অনেক গভীর। আমি তাঁকে ছোটবেলা থেকে চিনি। তাঁর মুখ থেকে শুনেছিলাম খবরটা, তাই সিদ্ধান্তটা মেনে নেওয়া সহজ হয়েছিল।’
তবে সেই ঘটনা স্টয়নিসকে আরও ভালো খেলার প্রেরণা জুগিয়েছে, প্রেরণা জুগিয়েছে দলে নিজেকে অপরিহার্য করা তোলায়। স্টয়নিস নিজেও বলছিলেন, ‘আমার ভালো করার জন্য আলাদা অনুপ্রেরণার দরকার হয় না। তা আমার যথেষ্ট আছে। ওই ঘটনাও আমাকে কিছুটা অনুপ্রাণিত করেছে।’
তার ফলটা তো দেখতেই পাচ্ছেন।