সাক্ষাৎকারে ইবাদত হোসেন
‘ফাস্ট বোলারকে ভয় না পেলে তো সমস্যা’
ইংল্যান্ডে মার্ক উড, নিউজিল্যান্ডে লকি ফার্গুসন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আনরিখ নর্কিয়া, বাংলাদেশে ইবাদত হোসেন। শেষ নামটাতে এসে একটু ধাক্কা লাগতে পারে। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে ইবাদত যে উড-ফার্গুসনদের কাজটাই করে যাচ্ছেন! প্রত্যেকেরই প্রধান কাজ, মাঝের ওভারে গতির ঝড় তোলা। এখন পর্যন্ত ৮টি ওয়ানডে খেলে ৭ ইনিংসে ১৯ উইকেট নেওয়া ইবাদত সে দায়িত্বটা দারুণভাবেই পালন করছেন। কাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইবাদত কথা বলেছেন তাঁর টেস্ট বোলার থেকে তিন সংস্করণের বোলার হয়ে ওঠা নিয়েও—
প্রশ্ন :
আপনার অভিষেকের পর বাংলাদেশ যে কয়টা ওয়ানডে খেলেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট আপনিই পেয়েছেন। সাদা বলের ক্রিকেটটা নিশ্চয়ই বেশ উপভোগ করছেন...
ইবাদত হোসেন: টেস্ট ক্রিকেটে আমার শুরুটা ভালো হয়নি। টেস্টের জন্য যে নিখুঁত বোলিংটা করা দরকার, অনেক কষ্ট করে সেটা আনতে পেরেছি। চেয়েছিলাম ওয়ানডেতে সুযোগ পেলে যেন টেস্টের মতো শুরু না হয়। আমি লাল বলের পাশাপাশি সাদা বলেও কাজ করছিলাম। এখন পর্যন্ত ভালোই যাচ্ছে। আর ওয়ানডে দলে প্রতিযোগিতা তো দেখেছেনই। এখানে এসে জায়গা ধরে রাখতে হলে বিশেষ কিছু করতেই হতো। এমন কিছু যা বাকিরা করছে না। ওয়ানডের শুরুটাও টেস্টের মতো হলে এখানে টিকে থাকা কঠিন হতো।
প্রশ্ন :
টেস্টে শুরুর কঠিন অভিজ্ঞতাটা কি ওয়ানডেতে দ্রুত মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে?
ইবাদত: টেস্টে আমাকে সারা দিন বোলিং করতে হচ্ছে, গতি ধরে রাখতে হচ্ছে, একুরেসিও ঠিক রাখতে হচ্ছে। আমার মূল শক্তি যেহেতু গতি, তামিম ভাই আমাকে বলেছিলেন, ‘তোকে আমি ওয়ানডেতে নিব। কিন্তু তোকে জোরে বোলিং করতে হবে, আক্রমণাত্মক বোলিং করতে হবে।’ উনি আমার কাছে এটাই চেয়েছিলেন, যেটা আমার শক্তি। অধিনায়ক যেহেতু চাইছেন, আমি শুরু থেকে এটাই করছি।
এটাই তো হওয়া উচিত, তা-ই না? ফাস্ট বোলারকে ব্যাটসম্যান ভয় না পেলে তো সমস্যা । আমি বিষয়টা উপভোগ করছি। আমার কাজই এটা।
প্রশ্ন :
অভিষেক তো হলো নাটকীয়ভাবে। জিম্বাবুয়েতে টানা দুটি ম্যাচ হারার পর তৃতীয় ম্যাচের জন্য আপনাকে ডেকে পাঠানো হয়…
ইবাদত: জিম্বাবুয়েতে সিকান্দার রাজা টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করল। তখনই আমাকে ডাকা হলো। সেই ম্যাচের আগে আমি অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে কথা বলছিলাম। জিজ্ঞেস করছিলাম, ওকে কীভাবে আউট করা যায়। সে তো এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী, খুব ভালো খেলছে। তখন তিনি বললেন, ‘সে যেহেতু অনেক ভালো করছে, ওর দুর্বল জায়গায় বলা করা যায়। সহজ রান দিয়ো না। স্লোয়ার বল করো।’ রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবলাম, আমার শক্তি কোনটা। আমি জোরে বল করতে পারি, হার্ড লেংথে হিট করতে পারি, ইয়র্কার দিতে পারি। ওর সঙ্গে যদি আমাকে লড়াই করতে হয়, তাহলে আমার সেরা অস্ত্রগুলোই আগে বের করব। পরের দিন প্রথম বলেই ইয়র্কারে বোল্ড করেছি। আমার প্রথম আক্রমণেই সে শেষ। তখনই মনে হয়েছে, এমন বোলিং করতে পারলে ওয়ানডেতে আমি ভালো করতে পারব। এরপর ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছি; ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের সঙ্গেও ভালো করেছি।
প্রশ্ন :
রাজাকে আউট করেই মিড অফে থাকা তামিম ইকবালের দিকে আঙুল তুলে দৌড় দিয়েছিলেন। ও রকম উদ্যাপনের কারণ কী ছিল?
ইবাদত: তামিম ভাই আমাকে আগে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী করবি। বলেছিলাম, ‘ভাই, আমার একটা পরিকল্পনা আছে, আমি ওইটা করি।’ আমি তো পরিকল্পনা করেই এসেছি, ওকে পেলে প্রথম বলেই ইয়র্কার মারব। যদি সে থামিয়ে দেয়, তাহলে সমস্যা নেই। বাকি অস্ত্রগুলো বের করব।
প্রশ্ন :
ওয়ানডেতে সাফল্য আসছে মাঝের ওভারে। দেখে মনে হয়, আপনাকে মাঝের ওভারে আপনার উদ্দেশ্য একটাই—হার্ড লেংথ বোলিং আর মাঝেমধ্যে ইয়র্কারের চমক। আসলেই কি তা-ই?
ইবাদত: ফার্স্ট চেঞ্জে বল করা এত সহজও নয়, আবার কঠিনও নয়। ফিল্ডার যেহেতু বাইরে থাকে, আপনার একটা সুযোগ থাকে যেদিকে ফিল্ডিং সাজানো আছে, সেদিকেই বোলিং করব। আমি সেভাবেই করার চেষ্টা করি। ওই সময় ফিল্ড অনুযায়ী বল করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই জিনিসটাই আমি কাজ করতে করতে শিখেছি। এখন কাজে লাগাচ্ছি। আর আমার কাছে ওই সময় অধিনায়ক এটাই চায়—ফাস্ট অ্যান্ড অ্যাগ্রেসিভ বোলিং। কোনো স্লোয়ার বলের দরকার নেই। এখন অধিনায়ক যেহেতু আমাকে এই স্বাধীনতা দিয়েছেন, তাহলে কেন নয়? আমি যত জোরে পারি বোলিং করব, হার্ড লেংথে হিট করব।
প্রশ্ন :
ব্যাটসম্যানের চোখে ভয় দেখেন নিশ্চয়ই…
ইবাদত: এটাই তো হওয়া উচিত, তা-ই না? ফাস্ট বোলারকে ব্যাটসম্যান ভয় না পেলে তো সমস্যা (হাসি)। আমি বিষয়টা উপভোগ করছি। আমার কাজই এটা।
প্রশ্ন :
এক বছর আগেও আপনি শুধু টেস্ট খেলতেন। এখন তিন সংস্করণেই খেলছেন, ফাস্ট বোলারের জন্য যা বিরাট এক চ্যালেঞ্জই। কীভাবে সামলাচ্ছেন সেটা?
ইবাদত: পেসারদের জন্য এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুরুতে শুধু টেস্টে খেলেছি, তখন একধরনের ফিটনেস রুটিন ছিল। এখন তিন ফরম্যাটের জন্য আরও বেশি ফিটনেস দরকার। ট্রেনার নিক (লি) আমাকে এ ক্ষেত্রে সব সময় সাহায্য করে আসছেন। গত তিন বছর বড় কোনো চোটে পড়িনি। আশা করি, এটা ধরে রাখতে পারব।