ভেল্লালাগে-আসালাঙ্কার ঘূর্ণিতে নাটকীয় ধস, ভারত শেষ ২১৩ রানেই
টানা তৃতীয় দিন ম্যাচ খেলার পরিণাম? তা বলাই যায়। এশিয়া কাপ সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে পরশুর ম্যাচটা গতকালও খেলেছে ভারত। বলতে পারেন, সেটি তো বৃষ্টির কারণে রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পাল্টা প্রশ্ন উঠতে পারে, রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা তো এই তিন দিনই মাঠে তো ছিলেন!
শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি মানসিক ধকলও তো গেছে। এসবের একটা তো ‘মাশুল’ তো থাকবেই, আর সেটাই কি আজ দিতে হলো ভারতকে? নইলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের ৪৯.১ ওভারে মাত্র ২১৩ রানে অলআউট হওয়ার ক্রিকেটীয় কারণের বাইরে ব্যাখ্যা আর কী হতে পারে! সেটিও আবার ৮০ রানের ওপেনিং জুটির পর। গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতার পরই তো সঞ্জয় মাঞ্জরেকারকে বলে রেখেছেন কোহলি, ‘আমি খুব ক্লান্ত।’
মাত্র একটি রাতের ব্যবধানে সেই ক্লান্তি খেলোয়াড়দের পুরোপুরি কাটার কথা নয়। যে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের ব্যাটিং গত দুই দিনই পাকিস্তানের তারকাখচিত পেস আক্রমণকে পরোয়া করেনি, সেই একই ব্যাটিং ভুগেছে শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের বিপক্ষে। বাঁহাতি স্পিনার দুনিত ভেল্লালাগে একাই ৪০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
ওয়ানডেতে এটা তাঁর ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। স্পিন-অলরাউন্ডার চারিত আসালাঙ্কা ৯ ওভারে ১৮ রানে নেন ৪ উইকেট। হ্যাটট্রিকের সুযোগও পেয়েছিলেন। ৪২ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৬ রানে থাকতে পরের ওভারে যশপ্রীত বুমরা ও কুলদীপ যাদবকে প্রথম দুই বলে তুলে নিয়ে সুযোগটা তৈরি করেছিলেন আসালাঙ্কা। তখন হ্যাটট্রিক না হলেও ভারতের লড়াকু সংগ্রহের আশা কিন্তু এর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
৪৭তম ওভার শেষে বৃষ্টি হানা দেওয়ায় ভারতের ইনিংস শেষ হতে দেরি হয়। তখন ভারতের সংগ্রহ ছিল ৯ উইকেটে ১৯৭। বৃষ্টি থামলে খেলা শুরুর পর বাকি ৩ ওভারও ব্যাট করতে পারেনি ভারত। রোহিত-কোহলিদের বিপক্ষে এই ম্যাচে স্পিনের জাল বিছিয়ে একটি নজিরও গড়েছে শ্রীলঙ্কা।
ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ দলের স্পিনাররা সবগুলো উইকেটই নিলেন। অন্য উইকেটটি মহীশ তিকসানার। সব মিলিয়ে যেকোনো দলের বিপক্ষে এটি ১০ম ঘটনা।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামা ভারত কিন্তু দারুণ শুরু পেয়েছিল। ভেল্লালাগের বলে ১১.২ ওভারে বোল্ড হওয়ার আগে রোহিতের সঙ্গে ৮০ রানের জুটি গড়েন শুবমান গিল (১৯)। ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি হয়ে থেকেছে সেটিই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটিটি লোকেশ রাহুল ও ঈশান কিষানের—৮৯ বলে ৬৩। গিল আউট হওয়ার এক ওভার পরেই ভেল্লালাগেকে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন কোহলি (১২ বলে ৩)। একটু থেমে আসা স্পিন খেলতে সমস্যা হচ্ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া তারকার।
দুই ওভার পর রোহিতও ভেল্লালাগের নিচু হয়ে আসা বলে বোল্ড হন। ৪৮ বলে ৫৩ রান নিয়ে রোহিত যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন তখনও ভারতের সাদামাটা সংগ্রহের কথা সম্ভবত কেউ ভাবেননি। কারণ, পাঁচে ছিলেন লোকেশ রাহুল। চতুর্থ উইকেটে কিষানের সঙ্গে গড়া জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটান রাহুল। কিন্তু ৩০তম ওভারে দলীয় ১৫৪ রানে ভেল্লালাগেকে ক্যাচ দেন রাহুল (৪৪ বলে ৩৯)। এরপরই ভারতের বড় সংগ্রহের আশা ধীরে ধীরে শেষ হতে থাকে।
হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেল—এই তিন অলরাউন্ডারের কেউ চাপের মুখে ভারতকে রান এনে দিতে পারেননি। ৫ রানে পান্ডিয়া ও ৪ রানে আউট হন জাদেজা। ২৬ রানে আউট হন অক্ষর। তবে ভারত এই রানও করতে পারত না, যদি অবদান না থাকত ‘মি. এক্সট্রা’র—২১!