‘সবাই মন থেকেই ম্যাচটা জিততে চেয়েছিল’—কিংস্টন জয়ের পর মিরাজ

দুর্দান্ত খেলে কিংস্টনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। খেলোয়াড়দের সঙ্গে অধিনায়ক মিরাজক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিডিয়া

নাজমুল হোসেনকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জাতীয় দলের নিয়মিত এই অধিনায়ককে মিরাজ বলতেই পারেন, তোমার চোটকে ধন্যবাদ! তুমি চোটে পড়েছিলে বলেই তো ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশের টেস্ট জয়ে নেতৃত্ব দিতে পারলাম!

আরও পড়ুন

স্যাবাইনা পার্কে বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতের এই জয় এতটা মধুর যে ম্যাচে বেশ কিছু চরিত্র মাথা তুলে দাঁড়ানোয় অধিনায়কের অবদানটা প্রায় ঢাকাই পড়ে যাচ্ছে। গতকাল টেস্টের চতুর্থ দিনে মিরাজ তাঁর বোলারদের যেভাবে ব্যবহার করেছেন, যেভাবে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে রেখেছিলেন এবং সবাইকে যেভাবে উদ্দীপ্ত করেছেন, তা যেন অনেকটাই ‘আনসাং হিরো’র মতো। তবে ১০১ রানে জয়ের পর স্বয়ং অধিনায়কের মুখ থেকেই শোনা গেল তাঁর কলকাঠি নাড়ার গল্প। দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র, সেটাও পূর্ণ শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে! কীভাবে তা সম্ভব হলো শুনুন বাংলাদেশ অধিনায়কের মুখেই।

নাহিদ রানার বোলিংয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিডিয়া

এই সিরিজেই প্রথমবারের মতো টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়েছেন মিরাজ। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই দেশের বাইরে থেকে একটি টেস্ট জিতে আসা তাঁর ক্যারিয়ারেই অন্যতম সেরা সাফল্যগুলোর একটি। ম্যাচ শেষে স্যাবাইনা পার্কে বসে মিরাজ বললেন সে কথাই, ‘আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে, প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিতেছি, এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় একটা অর্জন। যেহেতু আমি প্রথম অধিনায়কত্ব করছি, এটা আমার জন্য বড় একটা পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে।’

আরও পড়ুন

জয়ের সব কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের দিয়ে মিরাজ বলেন, ‘জয়ের কৃতিত্ব দিতে চাই সব খেলোয়াড়কে। আমি যেভাবে পরামর্শ দিয়েছি, সবাই মেনে নিয়েছে। কন্ডিশনটা সহজ ছিল না। সব খেলোয়াড়ের জন্যই অনেক কঠিন ছিল। সবাই মানসিকভাবে এমন ছিল যে ম্যাচটা জিততে হবে। সবাই চেয়েছিল মন থেকে ম্যাচটা জেতার জন্য। এর জন্যই আমরা ম্যাচটা জিততে পেরেছি।’

বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে রান রেট ছিল ২.২৮। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪.৪৭! জাকের আলীর ১০৬ বলে ৯১ রানের ইনিংসটি ছাড়াও মিরাজের ৩৯ বলে ৪২, শাহাদাত হোসেনের ২৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস বলে দেয়, এই ইনিংসে ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। সেই ভাবনার পেছনে অধিনায়কের নির্দেশনাটা কি ছিল, সেটাও জানালেন মিরাজ, ‘আমি খেলোয়াড়দের একটা কথা বলেছি, এই উইকেটে ইতিবাচক চিন্তা ছাড়া খেললে অনেক কঠিন হবে। যেহেতু আমরা (প্রথম ইনিংসে) লিড পেয়েছি ১৮ রানের, এখানে রান করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে এই উইকেটে যদি আমরা ২৫০ রান করতে পারি, আমাদের জন্য ম্যাচটা জেতা সহজ হবে। বার্তাটা এই ছিল যে খেলোয়াড়েরা ইতিবাচক খেলবে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেন তাইজুল
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিডিয়া

শাহাদাত হোসেনের উদাহরণ টেনে মিরাজ বলেছেন, ‘সৌরভ ভাই (মুমিনুল) অসুস্থ হওয়ার পর দলের সবাই বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। ওই জায়গায় (পজিশন) ব্যাটিং করাটা একটু কঠিন। কিন্তু দীপুকে (শাহাদাত) আমি বলেছিলাম, ও রাজি হয়েছে। ওকে আমি একটা কথা বলেছিলাম, এই উইকেটে তুমি ইতিবাচক খেলো। যদি মনে করো, প্রথম বলটাই মারার, তুমি প্রথম বলেই মারো। তোমাকে কেউ কিছু বলবে না। আমি তোমাকে অভয় দিলাম। ও সেভাবেই খেলেছে। ওর ২৮টা রান খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমিও চারে একই মানসিকতা নিয়ে খেলেছি। কারণ, এই উইকেটে রানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। খেলোয়াড়দের প্রতি বার্তাটাই এটা ছিল, ১টা রানও খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি খেলোয়াড় যেন রানের জন্য ক্রিকেট খেলে। এর মানে এই না যে টেস্ট ক্রিকেট, ঠেকাব—আমরা এই পরিকল্পনায় খেলেছি।’

আরও পড়ুন

জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেও ইতিবাচক মানসিকতার ব্যাপারে কথা বলেছেন মিরাজ, ‘(প্রথম ইনিংসে) ১৬৪ রানে অলআউট হওয়ার পরও আমরা নেতিবাচক চিন্তা করিনি। খেলোয়াড়েরা খুব ভালো বোলিং করেছে। প্রথম ইনিংসে নাহিদ রানা, তাসকিন ও হাসান মাহমুদ যেমন, দ্বিতীয় ইনিংসের বিশেষজ্ঞ তাইজুল পেয়েছে ৫ উইকেট। সে দুর্দান্ত...আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কীভাবে উন্নতি করব, আমরা সেটা ভাবি। কখনো কখনো আমরা ভুল করব, তবে সেখান থেকে শিখবও।’