ছিল পার্ক, হলো ক্রিকেট স্টেডিয়াম, খেলা শেষে সেটাই আবার পার্ক
ছিল পার্ক। হয়ে গেল ক্রিকেট স্টেডিয়াম! ছিল ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আবার হয়ে যাচ্ছে পার্ক!
বলা হচ্ছে, নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের কথা। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগেই জানা গিয়েছিল এটি অস্থায়ী স্টেডিয়াম। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপের পাট চুকে যাওয়ার পর তা সরিয়ে নেওয়া হবে।
স্টেডিয়াম সরিয়ে নেওয়া হবে মানে? সেটি কীভাবে সম্ভব! আসলে এটিকে অনেকেই বলছেন, ক্রিকেটের প্রথম ‘মডিউলার’ স্টেডিয়াম। স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি স্থাপনা, যা চাইলেই স্থানান্তর করা যায়।
অর্থাৎ স্থাপনার সংযুক্তিগুলো খুলে ও বুলডোজারের মাধ্যমে ভাঙা অংশগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। গতকাল ভারত–যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ শেষে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, স্টেডিয়ামের পাশে প্রচুর বুলডোজার দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ৩৪ হাজার আসনের এ স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলার কার্যক্রম গতকালই শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রিকবাজ।
নিউইয়র্কের ইস্ট মিডো অঞ্চলে আইজেনহাওয়ার পার্কের অংশ হয়েছিল নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম। মানে আইজেনহাওয়ার পার্কের একটি অংশে ১০৬ দিনের ব্যবধানে স্টেডিয়াম বানানো হয়েছিল। এখন বিভিন্ন সংযুক্তি খুলে ও কিছু স্থাপনা ভেঙে সেগুলো সরিয়ে নিতে প্রায় ৬ সপ্তাহ মানে ৪২ দিন সময় লাগবে।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ স্টেডিয়ামে ৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে সেখানে লোকজনের অবাধ যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্টেডিয়ামের স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর আবার সেখানে সাধারণ মানুষ অবাধে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে স্টেডিয়াম যেখানে বানানো হয়েছিল, সেই জায়গাটি কর্দমাক্ত, ঘাস ও বালুতে ভরপুর।
তবে মাঠের ড্রপ–ইন উইকেটের কী হবে, সে ব্যাপারে এখনো কেউ জানাতে পারেননি। আইসিসির মতে, উইকেটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। আইসিসির এক কর্মকর্তা ক্রিকবাজকে বলেন, ‘তারা চাইলে এটি (উইকেট) নিজেদের তত্ত্বাবধানে রেখে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে।’
কিন্তু স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ রাজি না হলে ড্রপ–ইন উইকেট অন্যত্র স্থানান্তর করবে আইসিসি। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসে এই উইকেট ফ্লোরিডায় তৈরি করা হয়। লো স্কোরিং ম্যাচের জন্য গত কয়েক দিনে এই উইকেট নিয়ে প্রচুর আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে। তবে স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড যেখানে–যেভাবে ছিল, সেখানে–সেভাবেই থাকবে।
মেজর লিগ ক্রিকেটের (এমএলসি) কিছু ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হবে বলে এর আগে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এমএলসি কর্তৃপক্ষ এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো সেখানে খেলতে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আলাদা করে শুধু ক্রিকেটের জন্য একটি স্টেডিয়ামই হয়তো ভবিষ্যতে বানানো হবে। তবে সেটি নাসাউ কাউন্টি এলাকায় নয়। এমএলসির দল এমআই নিউইয়র্ক সেখানকার প্রতিনিধিত্ব করে। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক ভারতের ধনকুবের আম্বানি পরিবার ভবিষ্যতে নিউইয়র্কে ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানাবে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
তবে স্টেডিয়ামের স্থাপনা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পর ক্রিকেটপ্রেমীরা আইজেনহাওয়ার পার্কের ওই অংশে গিয়ে স্মৃতিকাতর হতে পারেন। বলতে পারেন, এখানেই মুখোমুখি হয়েছিল ভারত–পাকিস্তান কিংবা এখানেই বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিততে জিততে হেরে গেছে। অথচ এই জায়গাটাই এখন পার্ক। ছিল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সেটাই আবার রূপ নিল পার্কে!