তামিম-লিটনের সঙ্গে কে
ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী কে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর লিটন দাসে মিলেছে সে উত্তর। ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিমের ওপেনিং সঙ্গী এখন লিটনই। দুজনের যুগলবন্দীতে উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে ধারাবাহিকতা। এখন পর্যন্ত ৩০ ইনিংসে একসঙ্গে ব্যাট করেছেন দুজন, এ জুটি রান তুলেছেন ৩৯.২৫ গড়ে। এ সময় উদ্বোধনী জুটি থেকে এসেছে ৩টি ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি ও ৫টি ফিফটি। এ বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ দলের প্রথম পছন্দ এই দুজনই।
কিন্তু দুই ওপেনারের সঙ্গে একজন ‘ব্যাকআপ’ও রাখতে হয়। সেই ‘ব্যাকআপ’ ওপেনার কে হবেন? ১০ দলের রাউন্ড রবিন পদ্ধতির বিশ্বকাপের লিগ পর্বে টানা ৯টি ম্যাচ খেলতে হবে। এতে করে চোটে পড়ার ঝুঁকিও থাকছে। সে ক্ষেত্রে বেঞ্চের শক্তি গুরুত্বপূর্ণ হতে উঠতে পারে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ সিরিজের শেষ ম্যাচে রনি তালুকদার একটা ম্যাচে ওপেন করেছেন তামিমের সঙ্গে । চেমসফোর্ডের সেই ম্যাচেই ওয়ানডে অভিষেক হয় রনির। আউট হয়ে গিয়েছিলেন মাত্র ৪ রান করে।
সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মোহাম্মদ নাঈম শেখও আছেন ‘ব্যাকআপ’ ওপেনার হিসেবে আলোচনায়। নির্বাচকদের খাতায় আছে প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা এনামুল হকের নামও। এঁদের মধ্যে কাকে বেছে নেন নির্বাচকেরা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আপাতত রনির ওপরই নজরটা বেশি। কয়েক দিন পরই বাংলাদেশে অতিথি হয়ে আসছে আফগানিস্তান দল। ঘরের মাঠে ওদের বিপক্ষে একটা টেস্টের পরই শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া রনিকে হয়তো আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ওয়ানডে সিরিজে ওপেনার হিসেবে দেখা যেতে পারে। সিরিজটি যে তাঁর জন্য বিশ্বকাপের ‘অডিশন’, রনিও এটা জানেন, ‘বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন কার না থাকে। আমারও আছে। তবে আপাতত আমি আফগানিস্তান সিরিজ নিয়েই ভাবছি। আয়ারল্যান্ডে যে ম্যাচটা খেলেছি, সেটায় খুব ভালো করতে পারিনি। কিছু ঘাটতি ছিল। সেটা নিয়ে কাজ করছি।’ নিজের ব্যাটিং নিয়েই রনির যত ভাবনা, দলে তৃতীয় ওপেনার হওয়ার প্রতিযোগিতা তাঁকে স্পর্শ করছে না খুব একটা, ‘আমি চাপ নিই না। আমি শুধু খেলা নিয়েই ভাবছি।’
রনির মতো এখনই বিশ্বকাপ দলে থাকা নিয়ে চিন্তা করছেন না আরেক ওপেনার নাঈমও, ‘আমি দল থেকে বাদ পড়ার পর নিজের খেলায় কিছু পরিবর্তন এনেছি। একটা প্রক্রিয়া মেনে কাজ করেছি ধারাবাহিকভাবে। সেটার ফল হিসেবেই হয়তো এখন আমাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেহেতু প্রক্রিয়া মেনে এতটুক এসেছি, এখনো সেটা করে যেতে চাই। বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে ভাবতে চাই না।’
দেশের হয়ে মাত্র ২টি ওয়ানডে খেলে বিশেষ কিছু করতে পারেননি এই বাঁহাতি। তাঁর সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচটি ছিল ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। কিন্তু সর্বশেষ ঢাকা লিগে নাঈমের ব্যাট থেকে এসেছে ৯৩২ রান। ১৬ ইনিংসের মধ্যে ফিফটিই ছিল ১০টি, সেঞ্চুরি ১টি। ৭১.৬৯ গড়ে রান করা নাঈমের বড় পরিবর্তনটা এসেছে স্ট্রাইক রেটে (৯১.৬৪)। যে কারণে আবারও জাতীয় দলের আলোচনায় আসছে নাঈমের নাম।
রান করেছেন এনামুলও। ৮৩৪ রান করা এনামুল প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৩টি সেঞ্চুরি ও ৩টি ফিফটি করা এনামুল এবার খেলেছেন ৯৭.৩১ স্ট্রাইক রেটে। গত বছর তো ১১৩৮ রান করে লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্টে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রানের বিশ্ব রেকর্ডও গড়েন। সেই পারফরম্যান্সের সুবাদে ২০১৯ সালের পর প্রথমবার জাতীয় দলেও সুযোগ পান। গত বছর আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওদের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচ খেলে দুটিতে ফিফটি করেছিলেন এনামুল।
কিন্তু এরপর ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজটি আবার ভালো যায়নি এনামুলের, দেশের মাটিতে তিন ম্যাচে তাঁর রান ছিল ১৪, ১২ ও ৪। এরপরই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। কিন্তু এবারের প্রিমিয়ার লিগে ধারাবাহিক রান করে এনামুল আবারও আলোচনায় এসেছেন। অন্য সবার মতো এনামুলেরও আশা বিশ্বকাপ খেলার, ‘আমি তো (দলে) থাকতে চাই-ই। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে চাই, এশিয়া কাপ খেলতে চাই। এটাই তো আমার স্বপ্ন।’
শেষ পর্যন্ত কার স্বপ্ন পূরণ হয়, জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও কিছুদিন।