বাংলাদেশে এখন গভীর রাত। শ্রীলঙ্কাতেও তাই। সেখানে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল) খেলতে যাওয়া সাকিব আল হাসানের আজ ম্যাচ থাকায় এতক্ষণে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। জেগে থাকলেও বেশ উৎফুল্লই হওয়ার কথা। সাকিবের আরেক দল যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে!
কানাডায় গ্লোবাল টি–টোয়েন্টি লিগের ফাইনালে আজ লিটন দাসের সারে জাগুয়ার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে মন্ট্রিয়ল টাইগার্স। শেষ বলে আন্দ্রে রাসেলের বিশাল ছক্কায় প্রথমবার শিরোপা জিতেছে টাইগার্স। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলেও ছক্কা মেরেছেন রাসেল। ৬ বলে ২০ রানে অপরাজিত থেকে ক্যারিবীয় হার্ড হিটার বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি।
শ্রীলঙ্কায় খেলতে যাওয়ার আগে কানাডায় টাইগার্সের হয়ে ৪ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার ফাইনালে না থাকলেও তাঁর দল ঠিকই ট্রফি জিতল। এটি টাইগার্সের প্রথম শিরোপা। আগের দুবার জিতেছিল ভ্যঙ্কুভার নাইটস ও উইনিপেগ হকস।
ব্রাম্পটনের সিএএ সেন্টারে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান তোলে সারে জাগুয়ার্স। শেষ ওভারে ১৭ রান নিয়ে লক্ষ্য টপকে গেছে মন্ট্রিয়ল টাইগার্স।
জাগুয়ার্সের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন যতীন্দর সিং। পুরো ২০ ওভার টিকে থেকে ৫৭ বল খেললেও ঝড় তুলতে পারেননি ওমানের এই ওপেনার।
লিটন নেমেছিলেন তিনে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই টি–টোয়েন্টির দাবি মেটাতে না পারা বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান ব্যাট আজও হয়েছেন ছিলেন ব্যর্থ; ১৩ বলে করেছেন ১২ রান। আসরে ৭ ইনিংসে ২১.৭১ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ১৫২ রান; স্ট্রাইক রেট ১০০.৬৬। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে যা বড্ড বেমানান।
তাই নির্দ্বিধায় বলা হয়, প্রথমবার কানাডায় খেলতে যাওয়া লিটনের টুর্নামেন্ট হতাশাতেই শেষ হলো। সঙ্গে বিদেশের মাটিতে ফ্যাঞ্চাইজি লিগ জিততে না পারার হাহাকারটাও রয়ে গেল। এর আগে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) ও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেললেও ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি লিটনের।
লিটনদের দেওয়া ১৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অবশ্য স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই আউট হন মোহাম্মদ ওয়াসিম। এরপর অধিনায়ক ক্রিস লিন শ্রীমান্ত ভিজেয়েরত্নে ও দিলপ্রীত সিংয়ের সঙ্গে ছোটখাটো; তবে কার্যকর জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও আস্কিং রানরেট তরতরিয়ে বাড়ছিল। ১ রানের ব্যবধানে লিন ও দিলপ্রীত দুজনই আউট হলে বিপদ বাড়ে টাইগার্সের।
তবে টাইগার্স ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা হয় এরপরেই। পঞ্চম উইকেটে ৪৫ রান যোগ করেন শেরফান রাদারফোর্ড ও দিপেন্দ্র সিং আইরে। ক্যারিবীয় রাদারফোর্ড মেরে খেললেও আইরের ইনিংসটি রানের গতি বাড়াতে পাচ্ছিল না।
এ অবস্থায় শেষ ২ ওভারে টাইগার্সের দরকার ছিল ২৫ রান। ঠিক সে সময় ফুটবলের মতোই কৌশলগত পরিবর্তন আনে টাইগার্স ম্যানেজমেন্ট। আইরেকে তুলে নিয়ে নামানো হয় রাসেলকে। বদলি নামা রাসেলই রাদারফোর্ডকে (৩৮*) সঙ্গে নিয়ে দলকে শিরোপা জেতান। ম্যাচসেরার পাশাপাশি টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারও জিতেছেন রাদারফোর্ড। মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে হয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক; ৭ ইনিংসে ৪৪ গড়ে ২২০ রান করেছেন তিনি।
ম্যাচটা নিয়ে এই গভীর রাতে বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদেরও আগ্রহ থাকত, যদি সাকিব খেলতেন। সাকিব থাকলে যে এটা হতো তাঁর সঙ্গে লিটনের শিরোপার লড়াই! সেটা না হলেও সাকিব দূর থেকেই দলের ট্রফি জয়ের সুসংবাদটা পেয়ে যাবেন (হয়তো গেছেন)।
আর হ্যাঁ, সাকিব না থাকলেও ফাইনালে লিটনের সঙ্গে কিন্তু আরেকজন বাংলাদেশি ছিলেন। তিনি মাসুদুর রহমান মুকুল। গত এশিয়া কাপে বেশ কয়েকটি ম্যাচ পরিচালনা করে প্রশংসিত হওয়া মাসুদুর আজ ছিলেন টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে।