রোহিত–কোহলিরা কেন ভারতের টি–টোয়েন্টি দলে
১০ নভেম্বর, ২০২২। অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল সেমিফাইনালে এদিন ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছিল ভারত। দেশের হয়ে সেটাই ছিল বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এরপর প্রায় এক বছরের বেশি সময় ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দুই তারকাকে দেখা যায়নি।
এ সময় ভারত ২৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১৬টি জিতেছে। অর্থাৎ ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে কোহলি-রোহিতের অভাব সেভাবে বোঝা যায়নি। দুজনের বয়সও কম হলো না। ৩৫ বছর পার করেছেন কোহলি। রোহিত পার করছেন ৩৬। টি-টোয়েন্টি তরুণদের খেলা বলেন অনেকেই, কিন্তু ভারত এই দুজন অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত তারকাকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ফিরিয়ে সে ধারণাটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
কেন? তা-ও দুজনকে এমন সময়ে ফেরানো হলো যখন সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে পরীক্ষিত খেলোয়াড়ের অভাব নেই। তবু কেন কোহলি এবং রোহিতের শরণাপন্ন হওয়া? তবে কি দুজনকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনাতেও রেখেছে ভারত? সময় হলেই এ প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে। তার আগে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে দুজনের ফেরার কারণ বিশ্লেষণের চেষ্টা করা যায়—
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হবে ১ জুন। তার আগে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে একটি সিরিজই খেলবে ভারত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে ১১ জানুয়ারি থেকে এবং সেখানে কোহলির পাশাপাশি রোহিতকে ফেরানো হয়েছে অধিনায়ক হিসেবে। এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে তাঁরা বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় না থাকলে তার আগে সিরিজে ফেরানো হলো কেন? এমন তো নয় যে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অভাব পড়েছে!
ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘রোহিতের অবশ্যই ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করা উচিত। বিরাট কোহলিরও খেলা (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) উচিত। বিরাট অসাধারণ খেলোয়াড়, কোনো সমস্যা হবে না (প্রায় ১৪ মাস পর ফেরার পর)।’
সৌরভের মতো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) নির্বাচকেরাও সম্ভবত মনে করেন, এ দুজন খেলোয়াড়ের তো নিজেদের প্রমাণ করার আর কিছু বাকি নেই। তাই সংস্করণ যা-ই হোক এবং তাঁরা যত দিন দেরিতেই ফিরুক—কোহলি এবং রোহিতের কাছ থেকে প্রত্যাশানুযায়ী পারফরম্যান্সই পাওয়া যাবে। আফগানিস্তান সিরিজের দল ঘোষণার আগে ভারতের প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার দক্ষিণ আফ্রিকায় উড়ে গিয়েছিলেন। ফলে ভারতের বিশ্বকাপ-পরিকল্পনায় তাঁরা যে ভালোভাবেই আছেন, সেটি মোটামুটি স্পষ্ট।
রোহিতের আগ্রাসন ও কোহলির ফর্ম
অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অন্তত সাড়ে চার শ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রোহিতের স্ট্রাইক রেটই সবচেয়ে বেশি (১২৫.৯৪)। শতক ছাড়াও বিশ্বকাপে তাঁর ‘ক্যামিও’ ইনিংসগুলো ভারতের বড় সংগ্রহ ও দারুণ শুরুতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। টি-টোয়েন্টি আরও ছোট সংস্করণ হওয়ায় এসব ‘ক্যামিও’ ইনিংস সেখানে গুরুত্বপূর্ণ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোহিতের এমন সব ইনিংস বড় ভূমিকা রাখতে পারে ভেবেও তাঁকে দলে ফেরানো হতে পারে। আর কোহলি তো প্রজন্মেরই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং থেকে ইনিংস ধরে রাখা—এসব কিছুতেই কোহলির পরীক্ষা দেওয়া বহু আগেই শেষ। আর গত বছর ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায়ও দুইয়ে (২৭ ম্যাচে ৭২.৪৭ গড়ে ১৩৭৭ রান) ছিলেন কোহলি। ভারত সম্ভবত কোহলির এই দুর্দান্ত ফর্মেরই সদ্ব্যবহার করতে চায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পরিকল্পনাটা তাই দুজনকে রেখে পাকা করার সম্ভাবনাই বেশি।
হার্দিক পান্ডিয়া ও সূর্যকুমার যাদবের অনুপস্থিতি
রোহিতের অনুপস্থিতিতে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছিলেন সূর্যকুমার। কিন্তু চোটের কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পান্ডিয়া ও সূর্যর খেলা হচ্ছে না। এখন দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অভিজ্ঞ কাউকে তো এমনিতেই প্রয়োজন। আর দলের ব্যাটিং অর্ডারেও প্রয়োজন ভরসা রাখার মতো কেউ। তাই সম্ভবত এ দুটি জায়গা পূরণেও রোহিত ও কোহলিকে বিবেচনা করা হয়েছে। আর ভারতের স্কোয়াডে শুধু ব্যাটসম্যান বিবেচনায় শুবমান গিল, যশস্বী জয়সোয়াল, রিংকু সিং ও সঞ্জু স্যামসনরা পরীক্ষিত হলেও বিপদের সময় অভিজ্ঞ কাউকে তো প্রয়োজন হবে। সে জন্যই সম্ভবত নির্বাচকেরা কোহলি ও রোহিতকে এড়াতে পারেননি।
রোহিতের নেতৃত্ব ও কোহলির মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা
উপমহাদেশের কন্ডিশনে যেকোনো সংস্করণেই ভারতের হাতে বিকল্প খেলোয়াড়ের অভাব থাকে না। কিন্তু দেশের বাইরের কন্ডিশনে হিসাবটা পাল্টে যায়। ১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আর কে না জানে, ভারতের ক্রিকেটারদের মধ্যে ভিন্ন কন্ডিশনে কোহলির মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অসামান্য। কেপটাউনে দ্বিতীয় টেস্টেই যেমন ভারত প্রথম ইনিংসে ১৫৩ রানে অলআউট হলেও সেখানে কোহলির ৫৯ বলে ৪৬ রানের ইনিংসটি প্রশংসা কুড়িয়েছিল। বিরুদ্ধ উইকেটে টেকনিক্যালি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন। সে টেস্ট সিরিজে ভারত একবারও দলীয় সংগ্রহ আড়াই শর ওপাশে নিতে না পারলেও ৪৩ গড়ে ৪ ইনিংসে ১৭২ রান করেছিলেন কোহলি।
হার্দিক পান্ডিয়াকে টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্ব দিতে চায় বিসিসিআই। কিন্তু তাঁর চোটে পড়ার রেকর্ডে তাকিয়ে শেষ মুহূর্তে সরে আসতে পারে ভারত। এই মুহূর্তে সব সংস্করণ মিলিয়ে ভারতের জাতীয় দলে রোহিতের চেয়ে যোগ্য অধিনায়ক আর কেউ নেই। খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারেন, গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালটা বাদে সব ম্যাচেই এমনটা দেখা গেছে। আর হার্দিক শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ নয় আইপিএলের শুরুতেও খেলতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এসব বিষয় মাথা রেখেই সম্ভবত রোহিতের কাছে ফিরেছে ভারত।