ষড়যন্ত্রের তথ্য ফাঁস করলেন শ্রীলঙ্কার প্রধান নির্বাচক
বিশ্বকাপে ভরাডুবি নিয়ে এমনিতেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে (এসএলসি) টালমাটাল অবস্থা। পয়েন্ট তালিকার নয়ে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করায় লঙ্কানরা ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে। এসবের সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা। বোর্ডে দুর্নীতির অভিযোগ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের কারণে এসএলসির সদস্যপদ স্থগিত করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
স্মরণকালের গভীরতম দুঃসময় পার করতে থাকা শ্রীলঙ্কা দল বিশ্বকাপে ব্যর্থ অভিযান শেষে গত পরশু দেশে ফিরেছে। কলম্বোর বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেই নতুন ঝড়ের ইঙ্গিত দেন প্রধান নির্বাচক প্রমোদ্য বিক্রমাসিংহে। সংবাদিকদের বিক্রমাসিংহে জানান, দুই দিনের মধ্যে সব ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দেবেন। আজ পাঁচ পৃষ্ঠার দীর্ঘ বিবৃতিতে তিনি বোমা ফাটিয়েছেন। নিউজওয়্যার, ডেইলি মিরর, ডেইলি নিউজ, এডিএ ডেরানাসহ শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে।
বিবৃতিতে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ এনেছেন বিক্রমাসিংহে। এসএলসির প্রশাসনকে ধ্বংস করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব৵বহার করা, খেলোয়াড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয় বিবেচনায় নেওয়া, দালালদের ম্যাচ গড়াপেটা ও জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে বিশ্বকাপ দলে রাখতে চাইলেও বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ তুলেছেন। এ ছাড়া বোর্ডের ক্ষমতা পাওয়ার আশায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কয়েকজনের দিকেও আঙুল তুলেছেন।
৫২ বছর বয়সী প্রমোদ্য বিক্রমাসিংহে লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের বর্তমান দুর্দশা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পর্যায়ে চলতে থাকা বহুমুখী ষড়যন্ত্রের ফল। শ্রীলঙ্কার ওপর (আইসিসির) আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও একই প্রক্রিয়ার ফল। এসব ষড়যন্ত্রের পেছনে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের উচ্চাকাঙ্ক্ষা লক্ষ করেছি। এরা সমাজে বেশ দক্ষতার সঙ্গে এমন ভান করছে যেন তারাই ক্রিকেট বাঁচাতে চাইছে। আসলে এরা প্রাসঙ্গিক তথ্য পাচার করে সমাজকে বিভ্রান্ত করছে।’
বিক্রমাসিংহে বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও মতামত প্রকাশে বিনিয়োগ করেছিল। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তাদের ষড়যন্ত্রের ‘প্রজননক্ষেত্র’ উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা এসএলসির নির্বাচক কমিটিকে দুর্বল করতে নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছিল। তাদের এই কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচক কমিটির পেশাদারত্বের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করা।’ তবে আড়াই বছরে নিজের দায়িত্ব সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পালন করেছেন বলে দাবি করেছেন বিক্রমাসিংহে।
দল নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় নীতির অভাবকেও দুষছেন বিক্রমাসিংহে। উদাহরণ টানতে গিয়ে তিনি আরেকটি বোমা ফাটিয়েছেন। বিশ্বকাপের আগে চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না উঠলেও তারকা অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা ও পেসার দুষ্মন্ত চামিরাকে তিনি স্কোয়াডে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রী রোশান রানাসিংহে নাকি হাসারাঙ্গা ও চামিরাকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানান। লাহিরু কুমারা চোটে ছিটকে গেলে পরে চামিরাকে নেওয়া হলেও হাসারাঙ্গাকে উপেক্ষিতই থাকতে হয়।
গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যর্থ হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই লঙ্কানরা নামিবিয়ার কাছে হেরে যায়। সেই ধাক্কা সামলে প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকালেও সুপার টুয়েলভে গিয়ে আবারও খেই হারিয়ে ফেলে। এই পর্বে পাঁচ ম্যাচের তিনটিতে হেরে সেমিফাইনালের আগেই বাদ পড়ে যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার তদন্তভার দেওয়া হয় শ্রীলঙ্কার হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি কুশলা সরোজিনির নেতৃত্বাধীন কমিটিকে। সরোজিনির কমিটি গত সপ্তাহে দেশটির সংসদে প্রতিবেদন জমা দেয়।
সেই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ ধরে প্রধান নির্বাচক বিক্রমাসিংহে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সফরের সঙ্গে সম্পর্কিত কুশলা সরোজিনির প্রতিবেদন (এলএলসির নির্বাচন) কমিটিকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো খেলোয়াড়দের যোগ্যতার পাশাপাশি ধর্মীয় পরিচয়ও বিবেচনা করতে বাধ্য করা হয়েছিল।’
বিক্রমাসিংহে উদ্বেগ প্রকাশ করে আরও লিখেছেন, ‘এ ধরনের বাহ্যিক চাপের কারণে নির্বাচক কমিটি খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও প্রাণশক্তি দেখার বদলে বাইরের বিষয়ে মনোযোগ সরাতে বাধ্য হয়েছিল।’