সাকিবের আউটে ‘বিস্মিত’ তামিম, লিটনই–বা কেমন আউট হলেন
লিটন দাস তখনো রানের খাতা খোলেননি। ১৫তম ওভারে যশপ্রীত বুমরার ফুল লেংথের বলে ব্যাটের আলতো ছোঁয়ায় স্কয়ার ও কাভারের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে দর্শনীয় এক চার মারলেন। ধারাভাষ্য কক্ষে তখন হার্শা ভোগলে ও রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে তামিম ইকবাল। লিটনকে নিয়ে কথা শুরু করলেন তিনজনই। মাঝে এভাবে কেটে গেল আরও দুটি ওভার। এরপর আকাশ দীপের বলে অন্য দ্য আপ ড্রাইভে দর্শনীয় আরেকটি চার মারার আগে লিটনকে নিয়ে তামিমের কাছে আরেকটু জানতে চাইলেন হার্শা। তাঁর টাইমিং, ব্যাটিং-দর্শন এসব আরকি।
লিটনকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে সাকিবকে নিয়েও কথা বলেছেন তামিম। বলেছেন, বাংলাদেশকে পথে ফেরাতে তাঁকে লম্বা সময় ব্যাট করতেই হবে। কিন্তু এই কথার কিছুক্ষণ পর যা ঘটল, তামিম নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পেরেছেন তো!
লিটনকে তখন স্বচ্ছন্দই লাগছিল। তামিম সেই স্বাচ্ছন্দ্যে আস্থা রেখেই প্রশংসার ঝুড়ি খুলে বসলেন, ‘সে বল যতটা সম্ভব দেরিতে খেলে। এভাবেই সে অনুশীলন করে নিজেকে প্রস্তুত করে। বল যতটা সম্ভব দেরিতে খেলাই তার ব্যাটিংয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য।’
হার্শা ‘সাদা বলে’ তাঁর চোখে ‘অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান’-এর ব্যাপারে আরেকটু যোগ করলেন, ‘সাদা বলে সে হয়তো শট খেলার সুযোগ বেশি পায়, কিন্তু টেস্টে সে বেশি ভালো, অনেক উন্নতিও করেছে।’ তামিম শুধু এটুকু বললেন, ‘টেস্টে সে বাংলাদেশের হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রান করেছে এবং টেস্টেই সে বেশি ভালো।’
চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় দিনে দ্বিতীয় সেশনে এভাবে চলছিল তিন ধারাভাষ্যকারের আলাপ-আলোচনা। শাস্ত্রী এর মাঝে যোগ করলেন, বল দেরিতে খেলার কী কী সুবিধা এবং অতীতে কারা এভাবে খেলে সাফল্য পেয়েছেন। ওদিকে বাইশ গজে লিটনও ততক্ষণে ৪১ বলে ২২ রানে পৌঁছে গেছেন। ঠিক এরপরই লিটন যেন তামিম-হার্শাদের মুখে ‘চুনকালি’ মেখে দিলেন! মানে, এত বড় মুখ করে তাঁরা লিটনের প্রশংসা করছিলেন, বেরসিক লিটন এরপর এমন একটি শট খেললেন, ধারাভাষ্যকক্ষে অবাক তিনজনই। এখন কেন এই শট?
ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা মাঠে তখন লিটন-সাকিবের জুটি ভাঙতে একটি ফাঁদ পেতেছিলেন। লিটন স্ট্রাইকে থাকতে মিড উইকেট ফাঁকা করে লং লেগে বদলি ফিল্ডার ধ্রুব জুরেলকে রেখেছিলেন। লিটন যেন জাদেজাকে সুইপ খেলতে প্রলুব্ধ হন তাই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ২৯ তম ওভারে জাদেজার দ্বিতীয় বলে লিটন ঠিক সেই ফাঁদেই পা দিয়েছেন। বাঁহাতি স্পিনার জাদেজার ‘স্পিনের বিরুদ্ধে’ খেললেন সুইপ। উদ্দেশ্য তুলে মেরে বল বাউন্ডারি পার করা। কিন্তু ব্যাটে ঠিকমতো পাননি বল এবং পুরোপুরি সেট হওয়ার আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটাই স্বাভাবিক। বল তাঁর ব্যাটে লেগে উঠল আকাশে এবং লং লেগ থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচটি নেন জুরেল।
ধারাভাষ্যকক্ষে তামিম ও হার্শা যেন তখন নিজেদের কথা নিজেরাই গিলে ফেলতে পারলে বাঁচেন। তামিমের কাছে এই শটের ব্যাখ্যা জানতে চান হার্শা ও দিনেশ কার্তিক। তামিম নিজের খেলার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আমি এমন পরিস্থিতিতে এমন সুইপ খেলি না। পুরোপুরি সেট হওয়ার আগে বলের বাঁকের বিপরীতে এমন শট খেলা ঝুঁকিপূর্ণ।’
ধারাভাষ্যকক্ষে অবাক তামিম ওই আউটের পর বলেছেন, ‘সাকিবের আউটে আমি বিস্মিত। রিভার্স সুইপ তো তার শট না, সে তো এই শট খেলে না!’
তামিমের বিশ্লেষণ বাকি দুজনেরই জানা। এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে মাঝে কেটে গেল আরও একটি ওভার। লিটনের ওভাবে আউট হওয়ার ব্যাপারটি যেন তাঁদের হজম করতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু আসল ধাক্কা তখনো বাকি। ৩১ তম ওভারে সেই জাদেজারই তৃতীয় বলে লিটনের মতোই ‘আত্মহত্যা’ করে বসলেন সাকিব! সেটাও সুইপ। তবে প্রথাগত নয়, রিভার্স সুইপ।
একবার ভেবে দেখুন, ভারতের ৩৭৬ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ যখন ৯১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে তখনই অমন শট এবং সেটাও টেস্টে! ব্যাপারটা এমনও নয় যে সাকিব স্বস্তি নিয়ে খেলতে পারছিলেন না, তাই রান বের করে স্বচ্ছন্দ হতে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের প্রথাগত শট খেলতে হয়েছে তাঁকে। সাকিব রিভার্স সুইপ খেললেও বল তাঁর ব্যাটে লেগে বুট ছুঁয়ে জমা পড়েছে উইকেটকিপার ঋষভ পন্তের গ্লাভসে।
আমি এমন পরিস্থিতিতে এমন সুইপ খেলি না। পুরোপুরি সেট হওয়ার আগে বলের বাঁকের বিপরীতে এমন শট খেলা ঝুঁকিপূর্ণ।লিটনের আউট নিয়ে ধারাভাষ্যকক্ষে তামিম ইকবাল
ধারাভাষ্যকক্ষে অবাক তামিম ওই আউটের পর বলেছেন, ‘সাকিবের আউটে আমি বিস্মিত। রিভার্স সুইপ তো তার শট না, সে তো এই শট খেলে না!’
লিটন আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে সাকিবের সঙ্গে তাঁর ৫১ রানের জুটি ভেঙেছে। কিন্তু ক্রিজে তখনো সাকিব থাকায় এবং মেহেদী হাসান মিরাজ আসায় তবুও পাল্টা লড়াইয়ের আশা কিছুটা ছিল। সাকিব ওভাবে আউট হওয়ার পর সে আশাও ‘রিভার্স’ হয়ে যায়।