অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরার পুরস্কার পেয়ে আবেগপ্রবণ মার্শ—‘আমি মোটা, বিয়ার ভালোবাসি’
২০১৯ সালে বলেছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ মানুষ আমাকে ঘৃণা করে’। চার বছর পর সেই মিচেল মার্শই পেলেন অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি। আজ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট পুরস্কারে ২০২৩ সালের জন্য বর্ষসেরা পুরুষ ক্রিকেটারের পুরস্কার অ্যালান বোর্ডার পদক পেয়েছেন এ অলরাউন্ডার। বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটারের জন্য বেলিন্ডা ক্লার্ক পুরস্কার পেয়েছেন অ্যাশলেই গার্ডনার।
বোর্ডারের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার পর কথা বলতে গিয়ে কয়েক দফা বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মার্শ। স্ত্রী গ্রেটা, অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডকে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি একটু মোটা আর বিয়ার ভালোবাসি। তবে তোমরা আমার সেরাটি খুঁজে নিয়েছ সব সময় এবং আমার জীবন বদলে দিয়েছ। প্যাটি (কামিন্স), তোমার সহায়তা ও নেতৃত্ব—তোমার অধীনে খেলাটা একটা স্বপ্ন।’
২০২৩ সালের অ্যাশেজ দিয়ে প্রায় চার বছর পর টেস্ট দলে ফেরেন মার্শ। হেডিংলিতে খেলেন ১১৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। এরপর বিশ্বকাপে ৪৯ গড়ে করেন ৪৪১ রান, তার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭৭ রানের ইনিংসও। নিজের প্রত্যাবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতাম…’, এটুকু বলে আবার নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন মার্শ। এরপর বলেন, ‘...যে আমি আরেকটি সুযোগ চাই। দুর্দান্ত ছিল। আমার যা দরকার ছিল, জীবনের সেই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সে (স্ত্রী) আমাকে দিয়েছে।’
এবারের পুরস্কারের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ২২ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ৯ জানুয়ারি ২০২৪ সাল পর্যন্ত পারফরম্যান্সকে। এ সময়ে ৬টি টেস্টে ৬৬ গড়ে ৫৯৪ রান করেন মার্শ। ওয়ানডে ৪৭.৬৬ গড় ও ১১৩.৯৪ স্ট্রাইক রেটে করেন ৮৫৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অপরাজিত ৯২ ও ৭৯ রানের ইনিংসও খেলেন।
অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা পুরস্কার ২০২৪
অ্যালান বোর্ডার পদক (বর্ষসেরা পুরুষ ক্রিকেটার): মিচেল মার্শ
বেলিন্ডা ক্লার্ক পুরস্কার (বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটার): অ্যাশলেই গার্ডনার
শেন ওয়ার্ন বর্ষসেরা পুরুষ টেস্ট ক্রিকেটার: নাথান লায়ন
বর্ষসেরা পুরুষ ওয়ানডে ক্রিকেটার: মিচেল মার্শ
বর্ষসেরা নারী ওয়ানডে ক্রিকেটার: এলিস পেরি
বর্ষসেরা নারী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার: এলিস পেরি
বর্ষসেরা পুরুষ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার: জেসন বেহরেনডর্ফ
ব্র্যাডম্যান বর্ষসেরা তরুণ ক্রিকেটার (ছেলে): ফার্গুস ও’নিল
বেটি উইলসন বর্ষসেরা তরুণ ক্রিকেটার (মেয়ে): এমা ডি ব্রঘি
বর্ষসেরা ঘরোয়া ক্রিকেটার (পুরুষ): ক্যামেরন ব্যানক্রফট
নিজের পুরস্কার জেতাকে করোনাভাইরাসের ‘অদ্ভুত’ সময়ের সঙ্গে তুলনা করে মার্শ বলেন, ‘আমি নিজের জেতার ব্যাপারে এমন আশাবাদী ছিলাম—যে এটি কোভিড নয়। আর তিন বছর আগের ওই সময়ের দিকে ফিরে তাকালে দেখবেন, ‘অদ্ভুত এক সময় ছিল’। আমার এক বন্ধু আজ তালিকাটি পাঠিয়েছে, যেটা দেখে আমার মাথায় এসেছে—আমি জিতলে অদ্ভুত হবে।’
সব মিলিয়ে মার্শ পেয়েছেন ২২৩টি ভোট, দুইয়ে থাকা অধিনায়ক কামিন্সের চেয়ে যা ৭৯টি বেশি। তিনে থাকা স্টিভেন স্মিথ পেয়েছেন ১৪১টি ভোট। বর্ষসেরা পুরুষ ক্রিকেটারের পাশাপাশি বর্ষসেরা পুরুষ ওয়ানডে ক্রিকেটারও হয়েছেন মার্শ। টেস্টের জন্য শেন ওয়ার্ন পদক পেয়েছেন নাথান লায়ন, টি-টোয়েন্টির পুরস্কারটি পেয়েছেন পেসার জেসন বেহরেনডর্ফ।
মার্শের জন্য গল্পটা প্রত্যাবর্তনের হলেও গার্ডনারের জন্য ধারাবাহিকতার। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বছর অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটারের স্বীকৃতি পেলেন এ অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। সর্বশেষ অ্যাশেজে ১৬৫ রানে ১২ উইকেট নেন তিনি। পাশাপাশি ওয়ানডেতে ১৮.৫৫ গড়ে নেন ২০ উইকেট। আর টি-টোয়েন্টিতে ১৯ উইকেট নেন ২২.৭৩ গড়ে।
পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে মার্শ বেশ এগিয়ে থাকলেও গার্ডনার এগিয়ে গেছেন স্বল্প ব্যবধানেই। দুইয়ে থাকা এলিস পেরির (১৩৪) চেয়ে ১৩টি ভোট বেশি পেয়েছেন গার্ডনার। বর্ষসেরা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি—দুই পুরস্কারই জিতেছেন পেরি।
পুরস্কার পাওয়ার পর গার্ডনার বলেছেন, ‘অন্য রকম একটি বছর গেছে। আমার মনে হয় অনেকেই ভাবেন যে আমি মূলত ব্যাটার বা ব্যাটিং অলরাউন্ডার। তবে গত দুই-এক বছরে আমার বোলিং যতটা ভেবেছি তার চেয়েও বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে।’