বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হার উদ্যাপন, কাশ্মীরের ৭ ছাত্রকে গ্রেপ্তার
কাশ্মীরে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জয় উদ্যাপন করার পর ভীতি তৈরির অভিযোগে সন্ত্রাস দমন আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। পুলিশ বলেছে, ম্যাচের পর ‘ভারতবিরোধী স্লোগান দেওয়া এবং যাঁরা তাঁদের সঙ্গে সম্মত হননি তাঁদের ভয় দেখানোর’ পর সেই ছাত্রদের গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদে বিশ্বকাপের ফাইনালে ফেবারিট হয়েও অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬ উইকেটে হারে ভারত।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত কাশ্মীর, দুই দেশই ওই অঞ্চলের পূর্ণ দখল দাবি করে, কিন্তু শাসন করে আলাদা আলাদা ভাগ। ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে একত্র হওয়ার দাবিতে আন্দোলন হয়ে আসছে। এ সঙ্কটের মধ্যে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক, সৈনিক ও আন্দোলনকারী মারা গেছেন।
পুলিশ বলেছে, ওই অঞ্চলের বাইরের একজন ছাত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাশ্মীরি ছাত্রদের আটক করা হয়। পুলিশের মামলায় বাদীর অভিযোগ নথিবদ্ধ করা হয়েছে এভাবে, ‘তারা আমাকে কটাক্ষ করা শুরু করে এবং আমাদের দেশের সমর্থক হওয়াতে আমাকে লক্ষ্য করে এবং চুপ না করলে গুলি করা হবে এমন হুমকিও দেয়।’
গ্রেপ্তার সাত ছাত্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন–সংক্রান্ত কঠিন আইন বেআইনি কর্মকাণ্ড দমন ধারার (আনলফুল অ্যাকটিভিটিস প্রিভেনশন অ্যাক্ট—ইউএপিএ) পাশাপাশি অন্যান্য অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনেক মানুষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানসহ ভারত ক্রিকেট দলের বিপক্ষে খেলা যেকোনো দলকে সমর্থন করে। মূল শহর শ্রীনগরে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পর আতশবাজিও দেখা গেছে।
ওই ছাত্রদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করেছেন কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার জয় কিছু ছাত্র উদ্যাপন করেছে বলে এত শঙ্কা, অস্থিরতা ও ভয় কেন? পছন্দের দলকে সমর্থন এবং তারা ভালো খেলেছে বলে আনন্দ প্রকাশের জন্য তাদের জীবন ধ্বংস করতে চান…আপনারা? আমি এর নিন্দা জানাই।’
আন্দোলনকারীদের মতে, কাশ্মীরি অধিবাসী, সাংবাদিক, ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ভারত ‘ইউএপিএ’ আইন ব্যবহার করে আসছে। এ আইনের আওতায় কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়া কাউকে ছয় মাসের জন্য আটক করে রাখা যায়, জামিন পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
২০২১ সালে পাকিস্তান ভারতকে হারানোর পর উদ্যাপন করা ছয় অধিবাসীকে এ আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তদন্ত করা হয়েছিল কয়েক শ ছাত্রের ব্যাপারে।
এবার কাশ্মীরের গান্দারবালের পুলিশ এক্সে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ‘কোনো নির্দিষ্ট ক্রীড়া দলকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করার’ কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি; বরং ‘যারা ভারতপন্থী বা পাকিস্তানবিরোধী অনুভূতি লালন করে বা দ্বিমত পোষণ করে, এমন কাউকে ভীতি দেখানোর’ কারণে এটি করা হয়েছে।