মিরাজ যখন ‘পাওয়ার হিটার’
৬ বলে দরকার ১৮ রান। সমীকরণটা পরিষ্কার—জিততে হলে দরকার ছক্কা। স্ট্রাইকে থাকা ফরচুন বরিশালের মেহেদী হাসান মিরাজ তা করতে পারবেন তো? খুলনা টাইগার্সের হয়ে শেষ ওভারটা করবেন দাসুন শানাকা। লঙ্কান এই ক্রিকেটারের মিডিয়াম পেস বোলিং মাঝের ওভারে রান থামিয়ে রাখার জন্য কার্যকরী। কিন্তু ডেথ ওভারের জন্য অতটা নয়। খুলনার অধিনায়ক এনামুল হকের হিসাবের গড়মিলের কারণেই হয়তো বাধ্য হয়ে শেষ ওভারটা করতে হয়েছে শানাকাকে।
বোলার যিনিই হোন, ৬ বলে ১৮ রান তো মুখের কথা নয়! কিন্তু মিরাজ কঠিন কাজটাকেই সহজ করে তুললেন ওভারের প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা মেরে। শানাকার ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড স্লোয়ার বলটা তিনি হাত থেকেই ধরতে পেরেছেন। দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন গতির তারতম্যের সঙ্গে। ওই ছক্কার পর ৫ বলে বরিশালের দরকার ১২ রান।
পরের বলটায় সিঙ্গেল নিয়ে শোয়েব মালিককে স্ট্রাইকে পাঠান মিরাজ। পরের দুই বলে চার ও ছক্কায় বাকি কাজটা সারেন মালিক। ইনিংস শেষে মালিকের রান ২৫ বলে অপরাজিত ৪১, স্ট্রাইক রেট ১৬৪। মিরাজের অপরাজিত ৩১ রান এসেছে ১৫ বলে। তাঁর স্ট্রাইক রেট বরিশাল ইনিংসের সর্বোচ্চ, ২০৬।
শুধু আজই নয়। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ২১৮ স্ট্রাইক রেটে ৩৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। এবারের বিপিএলে বরিশালের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে রান তুলেছেন মিরাজই। ৬ ম্যাচে ৫ ইনিংসে ব্যাট করে ১০১ রান করেছেন তিনি, স্ট্রাইক রেট ১৮০। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে যৌথভাবে বরিশাল দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কায়ও শীর্ষে মিরাজ।
ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা তাইজুল ইসলামও এবারের বিপিএলে মিরাজের পাওয়ার হিটিংয়ের বিষয়টি মনে করিয়ে দিলেন, ‘খেয়াল করবেন, মিরাজ যে আজই এমন ইনিংস খেলেছে, তা নয়। আগেও করেছে। এটা দলের জন্য ভালো। আমার কাছে মনে হয় ওই রকম পরিস্থিতিতে এ রকম ইনিংস খেলা অবশ্যই বড় ক্রিকেটারের লক্ষণ।’ মিরাজের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন অধিনায়ক তামিম ইকবালও। পুরস্কার–মঞ্চে এসে তিনি বলেছেন, ‘মিরাজ তার সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলেছে। দারুণ ব্যাটিং করেছে।’
একই মঞ্চে মালিকও মিরাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। মিরাজের সঙ্গে মালিক ২৩ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের জুটির গল্প বলছিলেন এভাবে, ‘মিরাজ যখন ব্যাটিংয়ে এসেছে, তখন আমাদের দুই প্রান্ত থেকেই বাউন্ডারি দরকার ছিল। সে যেভাবে ইনিংস শুরু করেছে, তাতে আমার চাপ কমে গেছে। আমি জানতাম, ম্যাচ শেষ দুই ওভারে গেলে ওরা বিচলিত হবে। এটাই হয়েছে। মিরাজ দারুণ ইনিংস খেলেছে। অনেক সাহস দেখিয়েছে এই ইনিংসে। বিশেষ করে যখন চাপের মুখে ক্রিজে এসে বাউন্ডারি মারে, সেটা অবশ্যই দারুণ।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েন মিরাজ। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে মেহেদী হাসানকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু মিরাজ যে টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত হওয়ার জন্য কড়া নাড়তেই থাকবেন, তা তো এবারের বিপিএলে তাঁর পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে।