‘অজুহাত খুঁজলে বড় হওয়া যায় না’—বাংলাদেশের ‘বন্ধু’দের প্রতি হার্শা ভোগলে
অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ আসলে হেরেছে কোথায়?
বৃষ্টিতে শুরুর ছন্দ কেটে যাওয়ায় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় নাকি ভারতের বোলার-ফিল্ডারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কাছে? দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটাররাও নানামুখী বিশ্লেষণ করছেন।
তবে সব ছাপিয়ে ম্যাচের পর বেশি আলোচনায় দুটি বিষয়—প্রথমত, বৃষ্টির পর ভেজা উইকেটে খেলতে বাংলাদেশের সমস্যা হয়েছে কি না, বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব কি খেলতে রাজি ছিলেন কি না। দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন ‘ফেক ফিল্ডিং’ নিয়ে বিতর্ক। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বাংলাদেশের লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন যখন রানের জন্য দৌড়াচ্ছিলেন, বল হাতে না থাকলেও ফিল্ডিংয়ের ভান করেছিলেন বিরাট কোহলি। ‘ফেক ফিল্ডিং’ অনুসারে যা ৫ রান জরিমানাযোগ্য। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল ম্যাচও হেরেছে ওই ৫ রানেই।
‘ফেক ফিল্ডিং’ নিয়ে বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেন। এ নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বেশ কড়া মন্তব্যই করেছেন ভারতের ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে।
ভিডিওতে স্পষ্ট কোহলি ফেক ফিল্ডিং করেছেন, কিন্তু ভোগলের মতে কেউ না দেখায় এর কার্যকারিতা নেই, ‘সত্যটা হচ্ছে ফেক ফিল্ডিংটা কেউ দেখেনি। আম্পায়াররা দেখেনি, ব্যাটসম্যানরা দেখেনি, আমরাও দেখিনি। আইনের ৪১.৫ ধারায় ফেক ফিল্ডিংয়ে জরিমানার বিধান আছে (আম্পায়ারের কাছে এটি বোধগম্য হতে হবে)। কিন্তু কেউই তো ঘটনাটা দেখেনি। তাহলে কার কী করার আছে?’
১৮৪ রান তাড়ায় বাংলাদেশ ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬ রান তোলার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টার মতো বন্ধ থাকার পর পরিবর্তিত লক্ষ্যে আবার খেলা শুরু হয়। বৃষ্টির পর খেলা শুরুর আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে আম্পায়ারদের সঙ্গে বেশ সময় নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় তাঁকে অসন্তুষ্ট মনে হচ্ছিল। যদিও ম্যাচ শেষের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ভেজা মাঠে খেলা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে বাংলাদেশ দলের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, মাঠ ভেজা থাকায় ওই সময়ই মাঠে নামতে রাজি ছিলেন না সাকিব। যদিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের ওপর কিছু করার ছিল না তাঁর।
হার্শা তাঁর টুইটে এ বিষয়টিই টেনে এনেছেন, ‘আমার মনে হয় না ভেজা মাঠ নিয়ে কেউ অভিযোগ জানাতে পারে। সাকিব ঠিকই বলেছে যে এ ধরনের ঘটনা ব্যাটিং দলের পক্ষে যায়। যতক্ষণ না অসম্ভব হয়ে ওঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়াটা আম্পায়ার ও কিউরেটরদের দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্বটা তারা ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে। যে কারণে কম সময় নষ্ট হয়েছে।’
‘ফেক ফিল্ডিং’ ও ভেজা মাঠ নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ ও মত তুলে ধরার পর এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা ব্যক্তিদের খোঁচাই মেরেছেন হার্শা, ‘সুতরাং আমার বাংলাদেশের বন্ধুদের বলব, লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার দায় ফেক ফিল্ডিং বা ভেজা কন্ডিশনকে দেবেন না। যদি একজন ব্যাটসম্যানও শেষপর্যন্ত টিকে থাকতে পারত, ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতত। আমরা সবাই এর জন্য দায়ী ... অজুহাত খুঁজলে বড় হওয়া যায় না।’
ম্যাচশেষে মিক্সড জোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘ফেক ফিল্ডিং’ নিয়ে আক্ষেপ করেন বাংলাদেশ দলের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান, ‘শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় যে যখন আমরা কথা বলি, একটা “ফেক থ্রো”ও ছিল। যেটায় ৫ রান পেনাল্টি হয়তো হতে পারত। যেটা আমাদের দিকে আসতে পারত। দুর্ভাগ্যবশত সেটাও আসেনি।’ তবে কোন ওভারের কোন ডেলিভারির পর এমন ঘটেছে, নুরুল সেটি নিশ্চিত করেননি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, সপ্তম ওভারের খেলা চলার সময় অক্ষর প্যাটেলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের সীমানার দিকে খেলেছিলেন লিটন। সেখানে ফিল্ডার ছিলেন অর্শদীপ সিং। তাঁর থ্রো উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিকের কাছে পৌঁছানোর আগেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা বিরাট কোহলি থ্রোয়ের মতো অঙ্গভঙ্গি করেন। সেটি বৃষ্টি নামার আগের ঘটনা।
ক্রিকেট আইনের ৪১.৫.১ ধারায় বলা আছে, ‘স্ট্রাইকার বল খেলার পর কোনো ফিল্ডার ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বা কাজ দ্বারা যেকোনো ব্যাটারের মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার বা ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করলে সেটি “আনফেয়ার প্লে” বলে বিবেচ্য হবে।’ এ ক্ষেত্রে এমন কিছু হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন আম্পায়াররা। এমন কোনো কিছু আম্পায়াররা মনে করলে ওই বলকে ডেড ঘোষণা করা হবে, সঙ্গে ব্যাটিং দলের স্কোরে ৫টি পেনাল্টি রান যোগ হবে।