‘নো বল’ না দেওয়ায় আম্পায়ারকে অন্য কাজ খুঁজতে বললেন হাসারাঙ্গা
হানিবল—নামটা শুনলে মার্কিন লেখক টমাস হ্যারিসের বইয়ের ‘হানিবল লেক্টর’ চরিত্রটি মনে পড়তে পারে, যেটি রুপালি পর্দায় চিত্রায়নের মাধ্যমে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।
ক্রিকেটেও কিন্তু হানিবল নামের একজন আছেন। তাঁর পুরো নাম লিন্ডন এডওয়ার্ড হানিবল। শ্রীলঙ্কার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন, এখন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার। এরই মধ্যে ৩টি টেস্ট, ২৬টি ওয়ানডে ও ৩১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন। মোটামুটি অভিজ্ঞই বলা যায়।
কিন্তু গতকাল ডাম্বুলায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে তাঁর একটি সিদ্ধান্ত মনঃপূত হয়নি শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার। লঙ্কান অধিনায়ক সোজাসাপটা বলেছেন, লিন্ডনের অন্য কোনো কাজ খুঁজে নেওয়া উচিত।
আফগানিস্তানের দেওয়া ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩ রানে হেরেছে শ্রীলঙ্কা। এতে সিরিজে আফগানদের আর ধবলধোলাই করতে পারেনি স্বাগতিক দল। ২-১ ব্যবধানের জয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ম্যাচ শেষে হানিবলের নাম উল্লেখ না করলেও হাসারাঙ্গা ক্ষোভটা যে তাঁর ওপরই ঝেড়েছেন, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ম্যাচটি না দেখে থাকলে যে ঘটনা নিয়ে বিতর্ক, সেটি আগে জানিয়ে রাখা ভালো।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৯ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। ক্রিজে ফিফটি তুলে নেওয়া কামিন্দু মেন্ডিস ও আকিলা ধনাঞ্জয়া। আফগান পেসার ওয়াফাদার মোমান্দের করা শেষ ওভারে প্রথম তিনটি ডেলিভারি থেকে ৮ রান তুলে নেন কামিন্দু। জয়ের জন্য শেষ ৩ বলে দরকার ছিল ১১। এ অবস্থায় চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্প ও মিডল স্টাম্পের মাঝবরাবর ফুলটস করেন ওয়াফাদার।
খালি চোখে দেখেই মনে হয়েছে, বলটি কামিন্দুর কোমরের চেয়ে বেশি উচ্চতায় ছিল। ভিডিও রিপ্লে দেখার পর ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়—কামিন্দু একটু এগিয়ে এলেও বলটি তাঁর কোমরের চেয়ে বেশি উচ্চতাতেই ছিল এবং আইন অনুযায়ী সেটি ‘নো বল’।
কিন্তু স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো আম্পায়ার হানিবল সেটি ‘নো বল’ দেননি। পরের ডেলিভারিটি ওয়াইড এবং বাকি দুটি ডেলিভারি থেকে ৬ রানসহ মোট ৭ রান তুলতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা।
ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী এটি ‘নো বল’ ছিল।
ম্যাচ শেষে হাসারাঙ্গা নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেও অবশ্য আম্পায়ার হানিবলের নামটা বলেননি, ‘এমন কিছু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হওয়া উচিত নয়। (কোমর উচ্চতার) খুব কাছাকাছি থাকলে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু বলটা অনেক ওপর দিয়ে যাচ্ছিল...আরেকটু ওপরে থাকলে ব্যাটসম্যানের মাথায়ও লাগতে পারত। এখন সেটা যদি দেখতে না পায়, তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে সেই আম্পায়ার মানানসই নন। তিনি অন্য কোনো কাজে থাকলে সেটা খুব ভালো হতো।’
ডেলিভারিটিকে আম্পায়ার বৈধ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়ার পর কামিন্দু নো বলের আবেদন করেছিলেন। এমনকি রিভিউয়ের আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু আইসিসির বর্তমান প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী আউটের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, আম্পায়ারের এমন সব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে খেলোয়াড় রিভিউ নিতে পারবেন না।
হাসারাঙ্গা এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, ‘আগে এসব সিদ্ধান্তে রিভিউ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আইসিসি তা বিলোপ করেছে। আমাদের খেলোয়াড় রিভিউ চেয়েছিল। তৃতীয় আম্পায়ার যদি পায়ের নো বল পরীক্ষা করতে পারেন, তাহলে এমন সব নো বলও তার পরীক্ষা করা উচিত। কেন তিনি সেটি পারেন না, তার কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু তারা (মাঠের আম্পায়ার) সেটিও করেননি। তাই আমি ঠিক জানি না, সে সময় তার (স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো আম্পায়ার হানিবল) মনের মধ্যে কী চলছিল।’