শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানে গুঁড়িয়ে সবার আগে সেমিফাইনালে ভারত
এশিয়া কাপ ফাইনাল থেকে এই ম্যাচে প্রেরণা নেওয়ার কথা গতকাল বলেছিল শ্রীলঙ্কা। প্রেরণা বলতে ৫০ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্মৃতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। কিন্তু ভারতই উল্টো কলম্বোর প্রেমাদাসার সেই দাপট ফিরিয়েছে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে।
দেড় মাস আগের এশিয়া কাপ ফাইনালে শুরুতে ১২ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ৫০ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল রোহিত শর্মার দল। আজ বিশ্বকাপের লিগ পর্বে শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেট গেছে ১৪ রানে, শেষ পর্যন্ত অলআউট ৫৫ রানে!
বিশ্বকাপ ইতিহাসে আইসিসির পূর্ণ সদস্যদের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন ইনিংস। তা–ও এমন সময়ে, যখন ভারতের তোলা ৩৫৭ রান তাড়া করতে নেমেছে শ্রীলঙ্কা। ৩০২ রানে জিতে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে সাড়ে তিন শর বেশি রান তাড়া করতে নামা শ্রীলঙ্কা প্রথম বলেই হারায় পাতুম নিশাঙ্কার উইকেট। এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে উইকেটটি তুলে নেন যশপ্রীত বুমরা। ১৭ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের ফাইনালেও প্রথম ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রথম উইকেট তুলে নিয়েছিলেন বুমরা, এরপর ঝড় তুলেছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। আজ মুম্বাইয়েও হয়েছে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। বুমরা প্রথম উইকেট তুলে নেওয়ার পর সিরাজ এসে নিয়েছেন টানা তিন উইকেট।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সিরাজ প্রথম বলে তুলে নেন দিমুথ করুনারত্নেকে, পঞ্চম বলে সাদিরা সামারাবিক্রমাকে। পরের ওভারের প্রথম বলে তাঁর শিকার শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস।
এশিয়া কাপ ফাইনালে ১৬ বলে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সিরাজ, এ যাত্রায় প্রথম ৭ বলে ৩ উইকেট! সিরাজ আর বুমরার তোপে শ্রীলঙ্কার যখন চতুর্থ উইকেট হারায়, তখন স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ৩।
চারিত আসালাঙ্কাকে নিয়ে এরপর ছোটখাটো একটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। রান হোক না হোক, উইকেট কামড়ে থাকার চেষ্টা করছিলেন দুজন। কিন্তু ইনিংসের দশম ওভারে মোহাম্মদ শামি বল হাতে নিতেই ভেঙে যায় সেই প্রতিরোধ–চেষ্টা। টানা দুই বলে ফেরান আসালঙ্কা ও দুশান হেমন্তকে।
শামি অবশ্য এখানেই থামেননি। দুষ্মন্ত চামিরাকে উইকেটকিপারের ক্যাচ বানানোর পর এক প্রান্ত আগলে রাখা ম্যাথুসকে ফেরান বোল্ডে। ২৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তখন বিশ্বকাপের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডাকে ৩৬ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে যে রেকর্ডের ভাগিদার বানিয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কাই।
তবে মহিশ তিকশানা আর কাসুন রাজিতার দৃঢ়তায় সর্বনিম্ন রানে অলআউটের লজ্জা থেকে বেঁচে যায় শ্রীলঙ্কা। নবম উইকেটে এ দুজনে মিলে ২৮ বলে যোগ করেন ২০ রান।
শামি রাজিতাকে আর রবীন্দ্র জাদেজা দিলশান মাদুশঙ্কাকে তুলে নিলে ১৯.৪ ওভারেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। শামি ১৮ রানে নেন ৫ উইকেট।
লঙ্কানরা পুরো বিশ ওভার ব্যাট করতে না পারলেও ভারত ৫০ ওভার ব্যাট করে হারিয়েছে মাত্র ৮ উইকেট। রানও তুলেছে সাড়ে তিন শর বেশি। শুবমান গিল খেলেন সর্বোচ্চ ৯২ রানের ইনিংস। গিলের মতো শতকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন বিরাট কোহলি আর শ্রেয়াস আইয়ারও। কোহলি ৮৮ আর আইয়ার ৮২ রান করে ফেরেন। এ তিনজনেরসহ ভারতের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে ফেরান মাদুশঙ্কা।
দিনশেষে এই মাদুশঙ্কাকে আউট করেই ভারত পেয়েছে স্মরণীয় এক জয়। যে জয় মনে করিয়ে দিয়েছে কলম্বোর এশিয়া কাপ ফাইনালকেও।