আবারও ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট, এবার রাহানেকে ফিরিয়ে আনল প্রতিপক্ষ
‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’—এই আউট কি হুট করে বেড়ে গেল! বেশি দিন আগের কথা নয়, গত বছর ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউট হন মুশফিকুর রহিম।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৩ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একইভাবে আউট হন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান হামজা শেখ। কদিন পর অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া-নিউ সাউথ ওয়েলস ম্যাচে ক্রিস গ্রিনের বিপক্ষে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউটের আবেদন হয়েছিল।
নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্রিস গ্রিন সেযাত্রায় বেঁচে গেলেও একটি ব্যাপার মোটামুটি পরিষ্কার, সাম্প্রতিক সময়ে এই আউট নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। নইলে গতকাল রঞ্জি ট্রফিতেও এমন কিছু দেখা যেত না।
মুম্বাইয়ে শরদ পাওয়ার স্টেডিয়ামে গতকাল রঞ্জির এলিট পর্যায়ের ম্যাচে আসামের মুখোমুখি হয়েছে মুম্বাই। এ ম্যাচে মুম্বাই অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউট হন। পরে অবশ্য আউটের আবেদন তুলে নিয়ে রাহানেকে ক্রিজে ফিরিয়ে আনেন আসাম অধিনায়ক ডেনিশ দাস। ভারতের হয়ে ৮৫ টেস্ট খেলা রাহানে তাঁর ১৬ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে গতকালই প্রথম অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউট হয়েছিলেন।
চা–বিরতির আগে শেষ ওভারে ১৮ রানে ব্যাট করছিলেন রাহানে। মুম্বাইয়ের সংগ্রহ তখন ৪ উইকেটে ১০২। আসামের অভিষিক্ত পেসার দিবাকর জোহরির বল মিড অনে খেলে এক রান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রাহানে। ক্রিজ ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়েও এসেছিলেন। কিন্তু অন্য প্রান্তে তাঁর সতীর্থ শিবম দুবে তাঁকে ফেরত পাঠান। রানটি নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না দুবের। এর মধ্যে আসামের অধিনায়ক ডেনিশ দাস রাহানেকে রানআউট করতে স্টাম্প তাক করে থ্রো করেন। ক্রিজে ফিরতে মরিয়া রাহানের গায়ে লেগেছে ডেনিশের থ্রো। আসামের খেলোয়াড়েরা দেরি না করে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউটের আবেদন করেন।
মাঠের আম্পায়ার এই আবেদনে সাড়া দিয়ে রাহানেকে আউটও ঘোষণা করেন। সেটি ছিল মুম্বাইয়ের ইনিংসে ২৫তম ওভারে চতুর্থ বলে খেলার ঘটনা। ওভারটি শেষ করতে বাকি দুই বল হওয়ার আগেই চা বিরতিতে যেতে সম্মত হয় দুই দল। আসাম প্রথম ইনিংসে ৮৪ রানে অলআউট হয়েছিল। এর জবাবে মুম্বাইয়ের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১০২।
চা–বিরতির সময় সিদ্ধান্ত পাল্টায় আসাম দল। রাহানেকে আউটের আবেদন তুলে নিয়ে আম্পায়ারকে চা–বিরতির সময়ই নিজেদের এই নতুন সিদ্ধান্ত জানায় তারা। আইন অনুযায়ী, অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের ক্ষেত্রে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে হলে পরবর্তী ডেলিভারির আগে আবেদন তুলে নেওয়ার ব্যাপারটি আম্পায়ারকে জানাতে হবে এবং আম্পায়ার সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিলে তারপর সেটি কার্যকর হবে। রাহানের সৌভাগ্য, তিনি আউট হওয়ার পর দুই দল চা–বিরতিতে যাওয়ায় খেলার বিরতিতে দীর্ঘ একটা সময় পেয়েছিলেন। দুই দলই তখন ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছিল। আম্পায়াররা আসাম দলের আউটের আবেদন তুলে নেওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিয়ে প্রায় ২০ মিনিট পর রাহানেকে মাঠে ফিরিয়ে আনেন।
মুম্বাইয়ের পেসার শার্দূল ঠাকুর জানিয়েছেন, আসাম আবেদন তুলে নেওয়ার পর রাহানে মাঠে ফিরতে চাননি, ‘কারণ, নিজের কাছে তার নৈতিকতা।’ শার্দূল এটাও জানিয়েছেন, ড্রেসিংরুমে ঘটনাটির ভিডিও রিপ্লে দেখার পর তিনি বুঝতে পারেন আসামের আবেদন তুলে নেওয়ার কারণ, ‘কোনো অবস্থাতেই (বল স্টাম্পে আঘাত যেন না করে সে জন্য) নিজের (দৌড়ের) দিক পাল্টায়নি সে (রাহানে)। সে ফিল্ডিংকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেনি। হ্যাঁ, আম্পায়ারেরা ভেবেছেন সেটি আউট; কারণ, থ্রোটি স্টাম্পে ছিল। আমার মনে হয় আসামের কোচও ভেবেছেন, রাহানে ইচ্ছা করে ফিল্ডিংকে বাধাগ্রস্ত করেননি।’ শার্দূল জানিয়েছেন, আসাম কোচ ট্রেভর গনসালভেস চা–বিরতির সময় মুম্বাইয়ের ড্রেসিংরুমে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং রাহানেকে বিরতির পর ব্যাটিংয়ে নামতে বলেন।
চা–বিরতির পর রাহানে ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। ২২ রানে আউট হন এবং মাঠে ফেরার পর মাত্র ১৭টি ডেলিভারি খেলতে পারেন। ৬ উইকেটে ২১৭ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করে মুম্বাই।