‘অপ্রত্যাশিত’, ‘মেনে নেওয়ার মতো নয়’—অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসের পর রাজ্জাক
বাংলাদেশ দলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসের রেশ তখনো কাটেনি। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন— ‘এই ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা কী?’ সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে নির্বাচক আবদুর রাজ্জাককেও প্রশ্নটা করা হয়। সাধারণত ম্যাচের সময় এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচকদের খেলোয়াড়দের সমালোচনা করতে দেখা যায় না। কিন্তু আজ ভিন্ন চিত্র দেখা গেল।
রাজ্জাক নিজ দলের খেলোয়াড়দের ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিলেন চোখে আঙুল তুলে। শ্রীলঙ্কার ৫১১ রানের বিশাল লক্ষ্যের জবাবে চোখের পলকে ৩৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসার পেছনে ক্রিকেটীয় যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। রাখঢাক না করেই বললেন, ‘ব্যাটিংয়ের দিক থেকে যদি বলেন আমার কাছে খুবই অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে এবং মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই রকম ব্যাটিং হবে, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে…ওরা ভালো ব্যাটিং করেছে। ওদের ব্যাটিং দেখার পর আমাদের ব্যাটিং দুইরকম মনে হয়েছে। আমি হতাশ।’
সিলেটের উইকেটের প্রসঙ্গেও ব্যাটসম্যানদের সমালোচনা করেছেন তিনি, ‘পিচের সমস্যা হবে কেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে পিচ কি আকাশ–পাতাল পার্থক্য হয়ে যাবে নাকি। কিছুক্ষণ আগেই ওরা দুজন ১০০ মেরে গেল। ১০ মিনিটের বিরতি থাকে। ১০ মিনিটে উইকেটে কী এমন হলো। আসলে আমাদের অ্যাপ্লিকেশনে কিছু ভুল হয়েছে। আসলে আমাদের ভুল।’
দল যখন ৩৭ রানে ৪ উইকেটে হারিয়ে বিপদে, তখন লিটন দাসের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ক্রিজ ছেড়ে পুল করতে গিয়ে আউট হওয়াটাও মানতে পারছেন না সাবেক এই ক্রিকেটার। প্রসঙ্গটা তুলতেই রাজ্জাকের এক শব্দের উত্তর, ‘হতাশাজনক।’
পরে যোগ করলেন, ‘টেস্ট ম্যাচে একজন সিনিয়র ব্যাটসম্যান এভাবে আউট হওয়া ঠিক নয়। আসলে লিটন দাস একা বলে নয়, এখানে কিন্তু ৫টা উইকেট পড়ে গেছে। সবারই ভুল। যারা যারা টেস্ট ম্যাচ খেলছে, তাদের ওর বয়স কম, ও ছোট, ও এখনো পাকাপোক্ত হয়নি, এগুলো বলার আসলে সুযোগ নেই। এ রকম সুযোগ এলে হ্যান্ডেল করতে পারবে বলেই তাকে দেওয়া হয়েছে। কারও একার দোষ নয়।’
এদিকে দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে লিটনের আত্মাঘাতী শটের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তাঁর উত্তর ছিল এমন, ‘যে খেলোয়াড় খেলে ব্যক্তিগতভাবে সে-ই আসলে বলতে পারবে তার পরিস্থিতি কী চলছে, ওই মুহূর্তে কী চিন্তা করছে। শেষের দিকে অবশ্যই এটা কঠিন। আমাদের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। যেহেতু আমরা পেশাদার খেলোয়াড়। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের যে আউটগুলো হয়েছে, অবশ্যই হতাশাজনক। তারপরও আমরা চেষ্টা করব। মুমিনুল ভাই আছে, আমি আছি, আমরা যদি একটু রান করতে পারি, আমাদের জন্য ভালো হবে।’
তেড়েফুঁড়ে মেরে আউট হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে লিটনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, ‘অবশ্য সবাই হতাশায় ছিল। এ রকম আউট হলে সবারই তো খারাপ লাগে।’
বাংলাদেশের ব্যাটিং অবাক করেছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কোচ থিলিনা কান্দাম্বিকেও। সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে এমন হয়। আজ দিনের শুরুতে পরিস্থিতি যেমন ছিল শেষে কিন্তু তা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ওরা আমাদের এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি প্রত্যাশা করেনি। এটা হয়তো একটা কারণ। বাংলাদেশ সাধারণত লড়াই করে। সেদিক থেকে আমি একটু অবাক হয়েছি।’