এক ‘হাড়কিপটে’ এবং ১১ বছর পরপর যা দেখায় বাংলাদেশ

জেইডেন সিলসক্যারিবিয়ান ক্রিকেট পডকাস্ট এক্স হ্যান্ডল

টেস্ট ক্রিকেট দিয়েই আন্তর্জাতিক অভিষেক জেইডেন সিলসের। সেটি ২০২১ সালের জুনে গ্রোস আইলেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে। অভিষেকের টুপি সিলসের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান পেস কিংবদন্তি কার্টলি অ্যামব্রোস। নিখুঁত লাইন-লেংথের জন্য প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কাছে খুবই অস্বস্তিকর কিংবা অপছন্দের বোলার হিসেবে কুখ্যাতি (আসলে খ্যাতি) পাওয়া অ্যামব্রোস সেদিন সিলসকে বলেছিলেন, ‘তুমি খেলছ নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের অগণিত সমর্থকদের জন্য।’

অ্যামব্রোসের পরের কথাটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ‘সব সময় নিজের শতভাগ দেবে।’

আরও পড়ুন

সিলস শতভাগ উজাড় করে দিলে কী ঘটে, সেটা বোঝা গিয়েছিল সে বছরই। আগস্টে কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ বছর ৩৩৬ দিন বয়সে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। সেটি ছিল আলফ ভ্যালেন্টিনকে টপকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি। তিন বছর পেরিয়ে গতকাল বাংলাদেশ সময় রাতে সেই স্যাবাইনা পার্কেই নিজের শতভাগ দিয়ে আরও এক কীর্তি গড়লেন সিলস, সেটি অবশ্য কিপটেমির। রান না দেওয়ার কিপটেমি।

কিংস্টন টেস্টে দ্বিতীয় দিনের খেলা দেখে থাকলে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সিলসের বোলিং বিশ্লেষণ নিশ্চয়ই আপনার জানা, ১৫.৫-১০-৫-৪! ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ০.৩১! টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে অন্তত ১০ ওভার বোলিং করা বোলারদের মধ্যে ১৯৭৮ সাল থেকে এটাই সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড। হিসাবটাকে শুধু পেসারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে সিলসের বোলিং বিশ্লেষণ আরও অনন্য হয়ে ওঠে। এক ইনিংসে অন্তত ৯০টি ডেলিভারি করা পেসারদের মধ্যে টেস্ট ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং। অন্তত ৯০টি ডেলিভারির এই তালিকায় আগের রেকর্ডটি ছিল ভারতের পেসার উমেশ যাদবের। ২০১৫ সালে দিল্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে ২১ ওভার বোলিং করে ৩ উইকেট নেওয়ার পথে ০.৪২ করে রান দিয়েছিলেন যাদব।

আরও পড়ুন

এক ইনিংসে সিলসের চেয়েও কিপটে বোলিংয়ের রেকর্ড আছে পেসারদের। কিন্তু তাঁরা কেউ অন্তত ১৫ ওভার (৯০ বল) বোলিং করেননি। ১৯২৮ সালে ডারবান টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ১৩ ওভারে ৩ উইকেট নেওয়ার পথে ওভারপ্রতি গড়ে ০.৩০ করে রান দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের প্রয়াত ডানহাতি পেসার বব ওয়ায়েট।

ইনিংসে অন্তত ১০ ওভার বোলিং করা বোলারদের মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড ভারতের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার বাপু নাদকার্নির। ১৯৬৪ সালে চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৩২ ওভারে ২৭ মেডেন নিয়ে মাত্র ৫ রান (ওভারপ্রতি ০.১৫) দিয়েছিলেন! ইনিংসে অন্তত ১০ ওভার বোলিং করে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলারদের তালিকায় নাদকার্নির পরে থাকবেন গ্যারি সোবার্স (১৪-১১-৩-১, ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ড, ১৯৫৬), আবারও নাদকার্নি নিজেই (১৪-১১-৩-০, ব্রাবোর্ন, ইংল্যান্ড, ১৯৬৪), মাজিদ খান (১০-৮-৩-০, পোর্ট অব স্পেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৭৭), তারপর বব ওয়ায়েটের সেই স্পেল এবং ১৯৩৫ সালে লিডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার হেডলি ভেরিটির ১৩-১১-৪-০। সিলসের অবস্থান তারপরই।

ভারতের প্রয়াত সাবেক স্পিনার বাপু নাদকার্নি
আইসিসি ফেসবুক পেজ

কিন্তু যদি ইনিংসে অন্তত ৯০ বল করা বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে সিলসের চেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং টেস্টে শুধু একবারই দেখা গেছে—১৯৬৪ সালে চেন্নাইয়ে নাদকার্নির সেই ওভারপ্রতি ০.১৫।

আরও পড়ুন

সিলস তাঁর মিতব্যয়ী বোলিংয়ে নাম লিখিয়েছেন ক্রিকেটের আরও একটি পাতায়। ছেলেদের টেস্টে ৫ কিংবা তার চেয়ে কম রান দিয়ে ন্যূনতম ৪ উইকেট নেওয়া ষষ্ঠ বোলার সিলস। সর্বশেষ এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল ১১ বছর আগে হারারে টেস্টে। ২০১৩ সালে হারারেতে ৫.২ ওভারে ৪ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমার, প্রতিপক্ষ? বাংলাদেশ। কাকতালীয় ব্যাপার হলো, ক্রেমারের সেই বোলিংয়ের আগে সর্বশেষ এমন কিছু দেখার নজিরও ঠিক ১১ বছর আগেই। ২০০২ সালে ৬.৫ ওভারে ৩ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার জার্মেইন লসন, ভেন্যু? ঢাকা। প্রতিপক্ষ? সেই বাংলাদেশই!

লসনের সেই ধ্বংসযজ্ঞের ৩৬ বছর আগে ১৯৬৬ সালে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ ওভারে ৫ রানে ৪ উইকেট নেন ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার কেন হিগস। ঠিক তার এক বছর আগেই রাওয়ালপিন্ডিতে সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই ১২ ওভারে ৫ রানে ৪ উইকেট নেন পাকিস্তানের বাঁহাতি স্পিনার পারভেজ সাজ্জাদ। ১৯৪৭ সালে ব্রিসবেনে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ২.৩ ওভারে ২ রানে ৫ উইকেট নেন ‘দ্য ব্ল্যাক প্রিন্স’–খ্যাত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি আর্নি টোশাক।