বিপিএলের অনুশীলন দেখতে বাধা, জানা গেল আসল কারণ
বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে আর সবকিছু উধাও হয়ে যাওয়ার দিন সমাগত। অন্য বড় কিছু না ঘটে গেলে আগামী কিছুদিন, বলা ভালো এক মাসের বেশি সময় ধরে আলোচনায় থাকবে শুধুই বিপিএল।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পা দিয়ে সেই আবহ কাল বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া গেল। একাডেমি মাঠে অনুশীলন শুরু হয়েছে এদিন থেকেই। সকালে ঢাকা ক্যাপিটালস ও দুপুরে চিটাগং কিংস। অনুশীলনের পর দুই দলের কোচ খালেদ মাহমুদ ও শন টেইটের সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংবাদকর্মীদের ভিড়।
একাডেমি ভবনের উল্টো দিকে মূল স্টেডিয়ামের গ্যালারির নিচে আম্পায়ার্স বিভাগের অফিস রুম। দরজার বাইরে বরাবরের মতো স্যুটেড–বুটেড অবস্থায় পাওয়া গেল বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান রকিবুল হাসানকে। সব দলের কোচ–অধিনায়ক ও আম্পায়ারদের নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটির সভায় বসবেন একটু পর। ওপরে বিসিবি কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেল সভা আছে আরও একটি, বিপিএল সমন্বয় সভা।
মাঠে ডিজিটাল বোর্ড বসানোর কাজ প্রায় শেষ। এবার বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি এসব বোর্ডে ‘জুলাই–আগস্টে’র আবহও ফুটে ওঠার কথা। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড গ্যালারিতে একদল তরুণের ভিড়। তাঁরা এসেছেন বিপিএলের স্বেচ্ছাসেবক হতে। সে আনুষ্ঠানিকতার আগে মাঠটাকে পেছনে রেখে চলছিল সেলফি তোলার উৎসব। একই রকম ভিড় দেখা গেল বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের রুমের সামনে। সেই ভিড় বিপিএল–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটির অথবা কমিটিতে ঢুকতে ইচ্ছুক লোকজনের।
মোটকথা, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের যেখানেই যাবেন, এখন বিপিএল ছাড়া আর কিছু চোখে পড়বে না। সবার মধ্যে ব্যস্ততা আর উৎসব, শুধু অনুশীলন কাভার করতে আসা সাংবাদিকেরা ছাড়া। তাঁরা বরং কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধই ছিলেন কাল।
ক্ষোভের কারণ, সংবাদমাধ্যমকে অনুশীলন দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু এ রকম তো হওয়ার কথা নয়। বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর খেলার একটা বড় কার্যকারণই হলো প্রচার। ঘোমটা দিয়ে অনুশীলন করলে সেটা হবে কী করে!
মিডিয়া প্লাজার যে লোহার বেষ্টনীর পাশে দাঁড়িয়ে সংবাদকর্মীদের অনুশীলন দেখতে এবং ভিডিও নিতে হয়, সেটির এমাথা–ওমাথা সেঁটে দেওয়া হয়েছে নিরেট কালো বোর্ডে। কারণ হিসেবে একেকজনের মুখে একেক কথা। কেউ বলেন, মাঠের ভেতর সংস্কার কাজ চলছে। তাই এই ব্যবস্থা। কেউ বলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিরাই নাকি অনুশীলন দেখতে দিতে চায় না। বাস্তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমের অনুশীলন দেখতে কোনো বারণ নেই। সকালে অনুশীলন করা ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ অন্তত তাই জানালেন। তাহলে বিপিএলের অনুশীলন দেখতে বাধাটা কোথায়?
শেষ পর্যন্ত বিসিবিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল আসল কারণটা। বিভিন্ন সময় ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকেই নাকি অনুরোধ করা হয়েছে এ রকম একটা ব্যবস্থার, যাতে অনুশীলনের সময় মাঠটা আড়ালে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার ভাষ্য, অনুশীলনের সময় একাডেমি মাঠের যে জায়গাটাকে ক্রিকেটাররা ডাগআউট হিসেবে ব্যবহার করেন, তার ঠিক ওপরে মিডিয়া প্লাজার লোহার বেষ্টনীর পাশে দাঁড়ান সাংবাদিকেরা। জায়গাটা মাঠের অল্প ওপরে হওয়ায় ক্রিকেটারদের কথাবার্তা, চলাফেরা সবই ধরা যায় ক্যামেরায়। দুষ্টামি করে কেউ কিছু করলে সেটাও হয়ে যাচ্ছে ‘ভাইরাল কনটেন্ট’। তাতে করে খেলোয়াড়দের ‘প্রাইভেসি’ বলে আর কিছু থাকছে না।
এ রকম বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ নাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব এবং টেলিভিশনে এসেছে; যেসবের সংবাদ–গুরুত্ব তেমন নেই, কিন্তু আঘাত করেছে ক্রিকেটারদের ‘প্রাইভেসি’তে। ক্রিকেটারদের তা থেকে রক্ষা করতেই আড়ালের ব্যবস্থা।
বিসিবির দায়িত্বশীল কেউ কেউ অবশ্য সাংবাদিকদের আশ্বাস দিয়েছেন, আজ–কালের মধ্যে এই বাধা তুলে নেওয়া হবে। আবার উল্টোটাও শোনা গেছে। লোহার বেষ্টনী থেকে কালো বোর্ড সরবে না। অনুশীলনের প্রয়োজনীয় ফুটেজ সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ করবে ফ্র্যাঞ্চাইজিরাই।
দুই রকম সম্ভাবনা মানেই অনিশ্চয়তা। অবশ্য কিছু একটা নিয়ে অনিশ্চয়তা না থাকলে টুর্নামেন্টটার নাম আর বিপিএল কেন!