দল নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে পাকিস্তান

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিপ্রতীকী ছবি/এক্স

জাতীয় দল নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্য নিতে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। দেশটির ঘরোয়া পর্যায়ে এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসন্ন লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস ওয়ানডে কাপের দল সাজানো হয়েছে। পিসিবির চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

পাকিস্তান দল অনেক দিন হলো বাজে সময় পার করছে। দলটি এ বছর এখনো কোনো সিরিজ জিততে পারেনি। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও হয়েছে ভরাডুবি। সেসব দুঃসহ স্মৃতি ভুলে নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় মাঠে নেমেছিল পাকিস্তান। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি জিতে পাকিস্তানের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। সঙ্গে এটাও নিশ্চিত হয়েছে, মুশফিক-মিরাজ-নাজমুলদের বিপক্ষে এই সিরিজও তারা জিততে পারবে না।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচে হারের পর পিসিবির কড়া সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সমর্থক ও সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হচ্ছেন বোর্ডের প্রধান নাকভি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে জাতীয় দলে উপেক্ষিত থাকা ওপেনার আহমেদ শেহজাদ তো নাকভিকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। শেহজাদ দাবি করেছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ভরাডুবির পর নাকভি দল নিয়ে কাটাছেঁড়া করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নাকভির বিরুদ্ধে ওঠা এ রকম বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে কাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো খেলোয়াড় নির্বাচনে নির্বাচক কমিটির কাছে কাটাছেঁড়া করার জন্য কোনো সরঞ্জাম ছিল না। সমস্যার সমাধান করতেই আমি কাটাছেঁড়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে দেখলাম, আমাদের কাছে খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স নিয়ে ভরসা করার মতো কোনো তথ্য–উপাত্ত নেই। পুরো পদ্ধতিই গোলমেলে ছিল।’

সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি
পিসিবি

দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া ঠিকঠাক করতেই আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ওয়ানডে কাপের দল নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাকভি। আগামী ১২ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফয়সালাবাদে হবে পাঁচ দলের এই টুর্নামেন্ট। দলগুলোর জন্য পাঁচজন পরামর্শকও ঠিক করে দিয়েছে পিসিবি। তাঁরা হলেন মিসবাহ-উল-হক, সাকলায়েন মুশতাক, সরফরাজ আহমেদ, শোয়েব মালিক ও ওয়াকার ইউনিস। এই পাঁচজনের দলে ১৫০ খেলোয়াড় আছেন। তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ (১২০ জন) খেলোয়াড় নির্বাচন করেছে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি, আর বাকি ২০ শতাংশ (৩০ জন) নির্বাচন করেছেন দলগুলোর নির্বাচকেরা।

নাকভি মনে করেন, কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার সহায়তায় দল নির্বাচন করলে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না, ‘এই পদ্ধতিকে কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে না। আমরা শুধু ২০ শতাংশ দায়িত্ব নির্বাচক কমিটিকে দিয়েছি। আমরা যদি একজনকে বাদ দিয়ে আরও বাজে পারফর্ম করা কাউকে দলে আনি, তাহলে আপনারা সবার আগে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন। আমাদের কাছে সব রেকর্ড থাকবে এবং খুব স্বচ্ছভাবে দেখতে পারব কে দলে জায়গা পাওয়ার যোগ্য।’

আরও পড়ুন

নাকভির এই কথার অর্থ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় জাতীয় দল নির্বাচন করা হলে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে তারকা ক্রিকেটাররাও বাদ পড়তে পারেন। সেটা হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করার পুরস্কার হিসেবে খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারবেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় এখন থেকে সব খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের তথ্যউপাত্ত রেকর্ড রাখতে পারবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড
পিসিবি

এভাবে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন নাকভি, ‘আশা করি, চ্যাম্পিয়নস কাপ বড় মাপের প্রতিভা বের করে আনবে এবং ঘরোয়া ক্রিকেটকে শক্তিশালী করবে। আমাদের পুলে ১৫০ জন ক্রিকেটার থাকবে। এখন থেকে আমরা প্রতিটি ম্যাচের সব তথ্য পাব। কাটাছেঁড়া করতে হলে আমাদের সব সরঞ্জামই কাজ করতে হবে।’

সমালোচকদের উদ্দেশে নাকভি বলেছেন, ‘লোকে এমন আশা করে যেন এক দিনেই সব হয়ে যাবে। তারা বলে, চার থেকে পাঁচজনকে দল থেকে বাদ দিন। কিন্তু ভালো বিকল্প না পাওয়া পর্যন্ত আপনি কাউকে বাদ দিতে পারেন না।’

আরও পড়ুন

পিসিবির আগে দল নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু করেছে ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেট। দেশটির নারী ক্রিকেট দলের কোচ জন লুইস গত মে মাসে জানান, ২০২৩ মেয়েদের অ্যাশেজ সিরিজ থেকে তাঁরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছেন।