মিরাজ-সাদমানে দারুণ এক সেশন কাটিয়ে ১২৮ রানের লিড বাংলাদেশের

৪৪ রানে অপরাজিত সাদমানক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিডিয়া

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা ব্যাপারটা হয়তো কল্পনাও করেননি।

স্যাবাইনা পার্কে ক্যারিবিয়ান সাগরের হারিকেনের মতো গতির ঝড় তুলে নাহিদ রানা যেখানে শেষ করেছিলেন, নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন। গতির জবাবে চোখে চোখ রেখে প্রতিআক্রমণ। তাতে দ্রুত রান তুলে লিডটাকে বেশ ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২ উইকেটে দলের স্কোরবোর্ডে ১১০ রান তুলে চা বিরতিতে গিয়েছেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাদমান ইসলাম। ১২৮ রানের লিড নিয়েছে বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় সেশন শুরুর একটু পরপরই ১৪৬ রানে অলআউট হওয়ায় প্রথম ইনিংসেই ১৮ রানের লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ। চা বিরতির আগে ২০ ওভার ব্যাট করে ওভারপ্রতি গড়ে ৫.৫০ করে তুলেছেন ব্যাটসম্যানরা। ২২ বলে ২৬ রানে অপরাজিত অধিনায়ক মিরাজ। ৭২ বলে ৪৪ রানে অন্য প্রান্ত আগলে রেখেছেন ওপেনার সাদমান।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু ভালো ছিল না। জেইডেন সিলসের করা প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান (০)। এরপরই শুরু হয় প্রতি আক্রমণ। যার শুরুটা শাহাদাত হোসেনের মাধ্যমে। চার স্লিপ নিয়ে বোলিং করা ক্যারিবিয়ান পেসারদের ফুল লেংথের বল ছাড়েননি শাহাদত। ৪টি চারে ২৬ বলে ২৮ রানে এগোচ্ছিলেন ভালোই।

কিন্তু ১১তম ওভারে আলজারি জোসেফের প্রথম বলের লেংথ বুঝতে গড়বড় করে তুলে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন শাহাদত। তাঁর আউটে ভেঙেছে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৪৭ রানের জুটি। যেখানে সাদমানের অবদান ৩২ বলে ১২। শাহাদত অন্য প্রান্তে আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করায় আরেক প্রান্তে সুবিবেচকের মতো ধরে খেলছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

মুমিনুল হক অসুস্থ থাকায় টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো চারে ব্যাটিংয়ে আসেন অধিনায়ক মিরাজ। বাংলাদেশ এরপর সিরিজে ব্যাটিংয়ে এখন পর্যন্ত সেরা সময়টা কাটিয়েছে মিরাজ ও সাদমানের ব্যাটে। তৃতীয় উইকেটে ৬২ বলে ৬৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে চা বিরতিতে যান দুজন। সাদমান এই জুটিতে আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠেন। শামার জোসেফ, সিলস কিংবা আলজারির শর্ট লেংথের বল ছাড়েননি। ছাড়েননি ড্রাইভের সুযোগও। চা বিরতির আগে এই জুটিতে সাদমানের অবদান ৪০ বলে ৩২।

আরও পড়ুন

১২তম ওভারে শামারের চার বলে টানা চারটি চার মারেন মিরাজ। প্রথম দুটি ছিল দারুণ স্ট্রেট ড্রাইভ। পরের দুটি চার অবশ্য স্লিপ দিয়ে। সাদমান কাট ও পুল খেলতে কার্পণ্য করেননি। ৭টি চার মেরেছেন। রানের গতি কমাতে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট বাধ্য হয়ে স্লিপ থেকে ফিল্ডার তুলে সীমানায় নিয়ে যান। এমনকি পার্ট-টাইম স্পিনার কাভেম হজকে দিয়েও এক ওভার বোলিং করিয়েছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার পেসার বোলিং করলেও অভিজ্ঞ কেমার রোচকে বোলিংয়ে দেথা যায়নি। তাঁর কারণ স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া নাহিদ রানা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে ৬৫তম ওভারে চতুর্থ বলে নাহিদের বাউন্সারে ডাক করতে গিয়ে কাঁধে চোট পান রোচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডিংয়ের সময় তাঁকে মাঠে দেখা যায়নি। চা বিরতির সময় ধারাভাষ্যকারেরা জানিয়েছেন, কাঁধে এক্সরে করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রোচকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডও বিবৃতি দিয়ে তাঁর চোটের খবর নিশ্চিত করেছে।

তৃতীয় দিনে চা বিরতির সময় ম্যাচের বিশ্লেষণে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ও বাংলাদেশের সাবেক পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ বলছিলেন, বাংলাদেশ অন্তত ২৫০ রানের লিড নিতে চাইবে। সাদমান-মিরাজের জুটিতে সে পথে বেশ এগিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ সেশনে কী হয়, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।