মালিঙ্গার মতো তিন শ উইকেট নেবেন শরীফুল: চম্পকা রমানায়েকে
খেলোয়াড়ি জীবনটা সাফল্যে মোড়ানো নয়। কিন্তু ২৬ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে দুটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের পেস বোলিংয়ের ছবি পাল্টে দিয়েছেন চম্পকা রমানায়েকে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে তিনি উপহার দিয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গার মতো বিরল প্রতিভা, ক্যারিয়ার শেষে যাঁর নামের পাশে ৫৪৬টি আন্তর্জাতিক উইকেট। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে রমানায়েকের অবদান কতটা, সে আলোচনা একবার শুরু করলে সহজে শেষ হবে না।
২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট, হাই পারফরম্যান্স, ছেলেদের জাতীয় দল ও মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে কাজ করেছেন এই লঙ্কান পেস বোলিং কোচ। রুবেল হোসেনদের সময় থেকে শুরু। শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসানের মতো তরুণেরাও জাতীয় দলে এসেছেন তাঁর হাত ধরেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক পেস বোলিং বিপ্লবের গল্পের প্রথম অধ্যায়টা লিখতে হবে ৫৯ বছর বয়সী রমানায়েকে রমানায়েকেকে নিয়েই।
বিসিবির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পাট চুকিয়ে ওমান ক্রিকেটের পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন রমানায়েকে। আরও একটি ক্রিকেট সংস্কৃতিতে বদল আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামীকাল ঢাকা ছাড়বেন এই লঙ্কান কোচ। তার আগে প্রথম আলোর সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশের পেস বোলিং নিয়ে তিনি শুনিয়েছেন আশার কথা। শ্রীলঙ্কার হয়ে তাঁর ছাত্র মালিঙ্গা যেমন ওয়ানডে ক্রিকেটে তিন শর বেশি উইকেট নিয়েছেন, বাংলাদেশেও তাঁর ছাত্রদের কেউ তিন শর মাইলফলক ছাড়িয়ে যাবেন, এমন স্বপ্ন রমানায়েকের।
সম্ভাব্য নামটাও লুকাননি তিনি, ‘আমি নিশ্চিত, এটা কেউ না কেউ করবে। আগে এই প্রশ্ন করলে আমি হয়তো উত্তরে না বলতাম। এখন ভালো সুযোগ আছে, যেমন শরীফুল। সাদা বলের ক্রিকেটে অবশ্যই সে অনেক উইকেট পাবে। আশা করি, টেস্টেও ভালো করবে। সে খুবই ধারাবাহিক টেস্ট ক্রিকেটে।’ এত পেসারের মধ্য থেকে শরীফুলকে বেছে নেওয়ার যুক্তি, ‘সে তরুণ, ২৩-২৪ বছর বয়স হবে। লম্বা ক্যারিয়ার পড়ে আছে সামনে, হয়তো আরও ১০ বছর খেলবে। আশা করি সে ৩০০ উইকেট ছাড়িয়ে যাবে। সেটা হলে আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবো।’
অভিজ্ঞদের মধ্যে তাসকিন আহমেদকেও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে দেখেছেন রমানায়েকে। বললেন তাসকিনকে প্রথমবার দেখার গল্পটা, ‘তাসকিনকে আমি প্রথম দেখি যখন তার বয়স ১৫-১৬। ডাক্তার দেবাশিষকে (বিসিবির চিকিৎসক) বলেছিলাম, এই ছেলেটাকে দেখে রাখুন। অনেক দূর যাবে। কয়েক বছর পর যখন ফিরে আসি, সে তখন জাতীয় দলে খেলছে। তার ভেতর ওই জিনিসটা ছিল, যেটা অন্যদের চেয়ে তাকে আলাদা করেছে।’
২০১৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পর ইবাদত হোসেনকে গড়ে তোলার ‘মেগা প্রজেক্ট’ হাতে নিয়েছিলেন রমানায়েকে রমানায়েকে। বিমানবাহিনীর ভলিবল দলের এই খেলোয়াড় আগে পেশাদার ক্রিকেট খেলেননি। রমানায়েকের হাত ধরে সেই ইবাদতই হয়েছেন নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়ক, ‘সে একেবারেই অপরিণত ছিল। ক্রিকেট ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। কিন্তু সহজাত দক্ষতা ছিল। গতি ছিল, তবে সেটা বের করে আনতে অনেক সময় লেগেছে। রানআপ এলোমেলো ছিল। এখন সে–ই বাংলাদেশের দ্রুততম বোলার।’ রমানায়েকে এ জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন নির্বাচকদেরও, ‘তাঁরা তাকে বাদ দেননি। শুরুর দিকে উইকেট পাচ্ছিল না, তবু তাকে সুযোগ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের ধন্যবাদ দিতেই হয়।’
জাতীয় দলের পেসারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমানকেই সবচেয়ে ব্যতিক্রমী মনে হয় শ্রীলঙ্কান এই কোচের কাছে, ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ফাস্ট বোলার। আমি ছোটখাটো বিষয়ে তাকে দুই-তিনবার সাহায্য করেছি। খুবই সহজাত, যা করে তা একান্তই তার। যে স্লো বলটা সে বিশ্ব ক্রিকেটে নিয়ে এসেছে, তা অবিশ্বাস্য। একটা সময় তো তাকে খেলাই যেত না। এখনো ভালো করছে, তবে আগে আরও ভয়ংকর ছিল। আশা করি সে আবার আগের জায়গায় ফিরবে।’
রমানায়েকের সৌজন্যে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও বেড়েছে পেসারদের প্রতিযোগিতা। জাতীয় দলের বাইরে থাকা সম্ভাবনাময় পেসারদের নামগুলো তাঁর মুখস্থ, ‘শরীফুল, ইবাদত, খালেদ—এরা আমার সন্তানের মতো। খুব ভালো লাগে ওদের জাতীয় দলে খেলতে দেখলে। তরুণদের মধ্যে সাকিব, রাজা…আরও অনেকেই উঠে আসছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে মুশফিক যথেষ্ট দ্রুততম। রিপন মণ্ডল, আশিক—অনেকেরই নাম বলতে পারি। সবাই হয়তো টেস্ট খেলছে না, কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে ওরাই পারফর্ম করছে।’
প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকাই রমানায়েকের পছন্দ। তাঁর সব সন্তুষ্টি ছাত্রদের পারফরম্যান্সে, ‘ছেলেরা যখন ভালো করবে, তখন আমার নাম এমনিতেই চলে আসবে। খেলোয়াড়েরা আমার হয়ে কথা বলুক (হাসি), এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।’