অলিম্পিকে তারা এক হয়েই খেলে, গ্রেট ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্য নামে। কিন্তু ফুটবলে ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ক্রিকেটটাও আলাদা হয়ে খেলে। তবে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ। স্কটল্যান্ডের বেশির ভাগ ক্রিকেটার তো ইংলিশ কাউন্টি ক্লাবগুলো থেকেই উঠে এসেছেন।
সেই স্কটল্যান্ডই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বনাশ করে ছাড়তে পারে। আজ রাতে ওমানকে হারাতে পারলে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে উঠে আসবে স্কটল্যান্ড। সে ক্ষেত্রে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কায় পড়ে যাবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২ ম্যাচ খেললেও জয়ের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড। গত মঙ্গলবার প্রতিবেশী স্কটিশদের বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। আর গত রাতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গেছে ৩৬ রানে।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা হলে ইংল্যান্ডই জিতত, তা ‘গ্যারান্টি’ দিয়ে বলা যায় না। কারণ, আগে ব্যাট করতে নেমে ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৯০ রান তুলে ফেলেছিল আইসিসির সহযোগী দেশটি। ডিএলএস পদ্ধতিতে জস বাটলার-মঈন আলীদের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ১০৯। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বাটলার-মঈনরা ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগই পাননি। ওই ম্যাচ থেকে পাওয়া ১ পয়েন্টই আপাতত ইংল্যান্ডের সম্বল। কাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারটা ইংলিশদের শুধু পয়েন্ট তালিকার চারেই আটকে রাখেনি, নেট রানরেটও ঋণাত্মক করে দিয়েছে।
‘বি’ গ্রুপের পয়েন্ট তালিকা
* আজ স্কটল্যান্ড–ওমান ম্যাচ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।
প্রতিটি গ্রুপ থেকে সুপার এইটে উঠবে শীর্ষ দুই দল। ‘বি’ গ্রুপের পাঁচ দলই এখন পর্যন্ত ২টি করে ম্যাচ খেলেছে। ২ ম্যাচের দুটিতেই জিতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে পাওয়া ১ পয়েন্ট, এরপর নামিবিয়ার বিপক্ষে পাওয়া জয়ে ২ পয়েন্ট—সব মিলিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে স্কটল্যান্ড।
নামিবিয়ার বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত অম্লমধুর হয়ে আছে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে সুপার ওভারে জয়ের পর স্কটল্যান্ডের কাছে হার। ২ পয়েন্ট নিয়ে আফ্রিকার দেশটি আছে ৩ নম্বরে। নামিবিয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হেরে যাওয়া ওমান আছে তলানিতে। আর ইংল্যান্ডের পয়েন্ট, গ্রুপে অবস্থান তো আগেই বলা হলো।
গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ২ ম্যাচ শক্তি-সামর্থ্যে তাদের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। মার্শ-ওয়ার্নার-কামিন্সরা ম্যাচ দুটি জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার এইট পর্বে উঠবে, সেই অনুমান করাই যায়।
ইংল্যান্ডের শেষ ২ ম্যাচও অপেক্ষাকৃত দুর্বল ২ দল ওমান ও নামিবিয়ার বিপক্ষে। বাটলারের দল ম্যাচ দুটি জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৫। এদিকে আজ ওমানকে হারাতে পারলে স্কটল্যান্ডেরও পয়েন্ট হবে ৫। স্কটিশদের তখনো অজিদের বিপক্ষে ম্যাচ বাকি থাকবে। সেই ম্যাচ যদি অস্ট্রেলিয়াও জেতে, ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড দুই দলেরই পয়েন্ট থাকবে সমান ৫ করে। সে ক্ষেত্রে নেট রানরেটের নিরিখে নির্ধারণ করা হবে কোনো দল উঠবে সুপার এইটে।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স স্পোর্টস’ দাবি করেছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ধরে রাখার অভিযানে গিয়ে এখনো জয় না পাওয়ায় ইংল্যান্ড দলের আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমে গেছে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভরাডুবি হলে বাটলারের নেতৃত্বে ও ম্যাথু মটের সাদা বলের প্রধান কোচের পদে টিকে থাকা শঙ্কার মুখে পড়তে পারে। তাই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতার প্রত্যাশায় থাকবে ইংলিশরা।
কী ধরনের সহযোগিতা? আজ স্কটল্যান্ড জিতে গেলে ইংল্যান্ডের চাওয়া থাকবে অস্ট্রেলিয়া যেন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং স্কটল্যান্ডকে বিশাল ব্যবধানে হারায়। সেটা হলে শেষ ২ ম্যাচ জিতে নেট রানরেটে স্কটল্যান্ডকে পেছনে ফেলে সুপার এইট পর্বে জায়গা করে নিতে পারবে ইংল্যান্ড।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে আদৌ সহযোগিতা করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ফক্স স্পোর্টস। সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, নামিবিয়াকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া সুপার এইট পর্ব নিশ্চিত করার পর স্কটল্যান্ডের কাছে হারতেও পারে। অথবা খুব অল্প ব্যবধানে জিততে পারে, যেন ইংল্যান্ড নেট রানরেটে স্কটল্যান্ডকে টপকে শেষ আটে উঠতে না পারে।
বিশ্ব আসরে অস্ট্রেলিয়ার এ ধরনের কর্মকাণ্ড নতুন কিছু নয়। ১৯৯৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ১১১ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করে জিততে ইচ্ছাকৃতভাবে ৪০.৪ ওভার লাগিয়েছিল স্টিভ ওয়াহর দল, যাতে প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড সুপার সিক্স পর্বে উঠতে না পারে।
শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার এই চালাকি কাজে আসেনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি ১৯৩ বল বাকি থাকতে জিতে নেয় স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নিউজিল্যান্ড এবং নেট রানরেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে সুপার সিক্সে জায়গা করে নেয়।
এবার ইংল্যান্ডের জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।