‘কৃষ্ণাঙ্গ’ এনটিনির সঙ্গে বসে খেতেও চাইতেন না তাঁর সতীর্থরা

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার মাখায়া এনটিনিরয়টার্স

মাখায়া এনটিনি দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে স্বীকৃতি ও সম্মান পেতে লড়াই করতে হয়েছে এনটিনিকে। কথাগুলো বিস্মিত করতে পারে, তবে এমন দাবিই করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসারের ছেলে থান্ডো এনটিনি।

মাখায়া এনটিনিকে না চিনে থাকলে তাঁর পরিচয়টা জানিয়ে রাখা ভালো। ৪৬ বছর বয়সী সাবেক এই পেসার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অভিষেক। ২০১১ সালে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ছিল প্রোটিয়া জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ। এর মাঝে ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১০১ টেস্টে ৩৯০ উইকেট, ১৭৩ ওয়ানডেতে ২৬৬ উইকেট। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি বেশি খেলেননি—১০ ম্যাচে ৬ উইকেট।

দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে এনটিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি, ওয়ানডেতে চতুর্থ সর্বোচ্চ। তাঁর সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল তারকায় ঠাসা ছিল। শন পোলক, জ্যাক ক্যালিস, মার্ক বাউচার, ল্যান্স ক্লুজনার, গ্যারি কারস্টেন, জন্টি রোডস, হার্শেল গিবস—কে ছিলেন না।

আরও পড়ুন

থান্ডো তাঁর বাবাকে নিয়ে কথা বলেছেন ‘দ্য লোড শেড’ পডকাস্টে। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে তাঁর বাবার বর্ণবাদের শিকার হওয়া এবং সেসব নিয়ে এনটিনির লড়াইয়ের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন থান্ডো। ২৩ বছর বয়সী থান্ডোও তাঁর বাবার মতোই পেসার। দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে উঠে আসা এই পেসার ২১টি প্রথম শ্রেণির (৪৪ উইকেট) এবং ২৩টি লিস্ট ‘এ’ (২৬ উইকেট) ম্যাচ খেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে এনটিনির বর্ণবাদের শিকার হওয়া নিয়ে থান্ডো জানিয়েছেন, তাঁর বাবা জাতীয় দলে নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করতেন। থান্ডোকেও বর্ণবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। একটি ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার পথ তাঁর প্রায় বন্ধই হয়ে যাচ্ছিল।

মাখায়া এনটিনির ছেলে থান্ডো এনটিনি
ইনস্টাগ্রাম

নিজের বাবাকে নিয়ে থান্ডো বলেছেন, ‘(জাতীয়) দলে তাঁকে সব সময় নিজের জীবনের জন্য লড়তে হয়েছে প্রতিদিন। তিনি একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়, এটা শুনতে খারাপ লাগে যে তিনি (মাখায়া এনটিনি) কতবার সাদা ক্রিকেটারদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ পেয়েছেন তা গুনে বলতে পারেন।’

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে বর্ণবাদ নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে ২০২০ সালে। প্রোটিয়া পেসার লুঙ্গি এনগিডি জাতীয় দলে জাতিগত বৈষম্য নিরসনের দাবি তোলার পর এক সাক্ষাৎকারে এনটিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। দলের বাকি সতীর্থরা তাঁর সঙ্গে সেভাবে মিশতেন না, বিশেষ করে সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে তাঁকে এড়িয়ে যাওয়া হতো বলে দাবি করেন এনটিনি।

আরও পড়ুন

‘সাউথ আফ্রিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন’কে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে এনটিনি বলেছিলেন, ‘সে সময় আমি যেন চিরকালীন নিঃসঙ্গ ছিলাম। নৈশভোজে যাওয়ার জন্য আমাকে কেউ কিছু বলত না। সতীর্থরা আমার সামনেই পরিকল্পনা করত, আমাকে তালিকার বাইরে রেখেই। সকালের নাশতা খাওয়ার কক্ষেও কেউ আমার পাশে এসে বসত না। আমরা একই জার্সি পরেছি, একই জাতীয় সংগীত গেয়েছি কিন্তু (নিঃসঙ্গতা) আমাকে কাটিয়ে উঠতে হয়েছে।’

এনটিনি আরও জানিয়েছিলেন, তিনি টিম বাসে যাতায়াত যতটা সম্ভব পরিহারের চেষ্টা করতেন, ‘বাসের ড্রাইভারকে নিজের ব্যাগটা দিয়ে দৌড়ে ক্রিকেট মাঠে যেতাম। ফেরার সময়ও একই কাজ করেছি।’

পডকাস্টে থান্ডোও এসব প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়াটিভিনিউজ এ বিষয়ে তাঁর উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে, ‘কোনো সফরে গেলে (খেলোয়াড়েরা) সবাই মিলে পরিকল্পনা করে, “আজ অমুক জায়গায় খেতে যাব।” নে (মাখায়া) আগ্রহী থাকলেও কেউ কখনো তাঁর দরজায় টোকা দিয়ে বলেনি “তুমি যাবে নাকি?” তাই ব্যাপারটা তাঁর জন্য লড়াই করার মতোই ছিল এবং তিনি শুধু নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।’” থান্ডো আরও বলেছেন, ‘ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি এসব নিয়ে কথা বলেননি। তিনি আমার জন্য এই (ক্রিকেট) শিল্পে শত্রুতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে চাননি।’

আরও পড়ুন