সাকিব আল হাসান বল করবেন না? মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশন থেকেই প্রশ্নটা সবার মুখে। উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত। আয়ারল্যান্ড ইনিংসের ৬৬তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন সাকিব। ৩ ওভার বোলিং করতে না করতেই স্টাম্প মাইকে উইকেটকিপার লিটন দাসের অনুরোধ শোনা যায়, ‘ওই দিক দিয়ে মিরাজকে করান।’
কথাটা সাকিবকে উদ্দেশেই বলা। সহ অধিনায়কের কথা মতোই সাকিব বল তুলে দেন মিরাজের হাতে। অন্য প্রান্ত থেকে তাইজুল ইসলাম তো ছিলেনই। টেস্ট ক্যারিয়ারে বাঁহাতি এই স্পিনার ১১তমবার ৫ উইকেট নেওয়ায় দিনের খেলা শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগেই আইরিশরা অলআউট হয় ২১৪ রানে।
টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে শুধু সাকিবই তাইজুলের চেয়ে বেশিসংখ্যকবার ৫ উইকেট পেয়েছেন। ১৯বার ৫ উইকেট পেয়েছেন সাকিব। তবে ইনিংসে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি তাইজুলেরই। ২০১৪ সালে এই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের জন্য বাংলাদেশ দলটা সেজেছে ৬ বিশেষজ্ঞ বোলারে। এর মধ্যে ৩ জনই পেসার। ২০১৪ সালের পর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ এই প্রথম তিনজন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে খেলতে নামল। আর পেসারদের সৌজন্যে আইরিশ টপ অর্ডারে ফাটল ধরায় বাংলাদেশ। বাকি কাজটা করেছেন স্পিনাররাই।
তবে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিন ছিল আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের প্রদর্শনী। টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে অধিনায়ক সাকিব দুই প্রান্ত থেকেই বল তুলে দেয় শরীফুল ও খালেদের হাতে। উইকেটের পেছনে চার স্লিপের সঙ্গে ছিল গালি। তৃতীয় ওভারে জেমস ম্যাককলামের আউটসাইড-এজ করাতে পেরেছিলেন শরীফুল, যদিও সেটি পড়ে স্লিপের বেশ সামনেই।
শরীফুলই অবশ্য এনে দেন প্রথম ব্রেকথ্রু। পঞ্চম ওভারে ফুল লেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি মারে কমিন্স। রিভিউ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি, বল ট্র্যাকিং পরে দেখায়—নিলেও লাভ হতো না। অষ্টম ওভারে খালেদের জায়গায় ইবাদতকে বোলিং আনেন সাকিব, নিজের দ্বিতীয় ওভারে জেমস ম্যাককলামকে ফেরান তিনি। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলটায় ব্যাট চালিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনেন আইরিশ ওপেনার। দ্বিতীয় স্লিপে নাজমুল হোসেন শুরুতে গড়বড় করে ফেললেও সামনে ঝুঁকে ক্যাচ নেন।
বল পুরোনো হওয়ার আগেই স্পিনের সঙ্গে আইরিশদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন সাকিব। নিজের প্রথম ওভারেই সম্ভাবনাও তৈরি করেন তাইজুল ইসলাম। অ্যান্ড্রু বলবার্নির বিপক্ষে নেওয়া কট-বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে অবশ্য ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত সেই তাইজুলকেই সুইপ করতে গিয়ে বলবার্নি ফেরেন ৫০ বলে ১৬ রান করে।
প্রথম সেশনে ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কাটা অবশ্য ভালোই সামলে নিয়েছিল হ্যারি টেক্টর ও কার্টিস ক্যাম্ফার জুটি। দুজন মিলে ১২২ বল খেলে ৭৪ রান যোগ করেন। মিরপুরে ব্যাটিংয়ের জন্য সেরা সময়টাও পাচ্ছিলেন দুজন। বল পুরোনো হয়ে যাওয়ায় পেসারদের বলে তেমন প্রাণ ছিল না। স্পিনও ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছিল না। সবকিছুই যখন আইরিশদের পক্ষে, তখনই ভুলটা করেন টেক্টর। ইনিংসের ৪২তম ওভারে মিরাজের ফুল লেংথের বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন। ৯২ বলে ৫০ রানেই থামে তাঁর অভিষেক ইনিংস।
পরের ওভারেই আরেক স্পিনার তাইজুলের আঘাত। তাতে আউট হন সদ্য ক্রিজে আসা পিটার মুর। সামনের পা সরিয়ে মিড অফের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে তামিমের হাতে সহজ ক্যাচ তুলেছেন তিনি। এরপর আর দীর্ঘ হয়নি ক্যাম্ফারের ইনিংসও। তাইজুলের আর্ম বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি এই অলরাউন্ডার। আউট হওয়ার আগে করেছেন ৭৩ বলে ৩৪ রান।
৩ উইকেটে ১২২ রান থেকে আয়ারল্যান্ড পরিণত হয় ৬ উইকেটে ১২৪ রানে। মাত্র ২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে প্রবলভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশ। আইরিশদের ‘মিনি ধস’-এর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন লরকান টাকার (৩৭)। প্রথমে অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন (১৯) ও পরে মার্ক এডেয়ারের (৩২) জুটি গড়েন তিনি। আয়ারল্যান্ড ইনিংসের স্থায়িত্বও বাড়ে তাতে। লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের লড়াইয়ে আইরিশরা ৭৭.২ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করে। তাইজুল ২৮ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মিরাজ ও ইবাদত। শরীফুলের শিকার ১ উইকেট।