৭২তম ওভারের শেষ বলটায় উসমান খাজা যখন বেন স্টোকসের বল টেনে স্টাম্পে নিয়ে এলেন, এজবাস্টনে একটা গর্জনের মতো হলো। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ২০৯, খাজার ফেরায় সপ্তম উইকেট হারাল তারা। উইকেটে এলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ম্যাচ তখন কিছুটা ইংল্যান্ডের দিকে হেলে গেছে। এর একটু পরে দলকে ২২৭ রানে অ্যালেক্স ক্যারি যখন ফিরলেন, কিছুটা নয়, ম্যাচ তখন আসলেই ইংল্যান্ডের হাতে।
দিন শেষে সেই ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ২ উইকেটে, ম্যাচের ৪.৩ ওভার বাকি থাকতে। নবম উইকেটে নাথান লায়নের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৫৫ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়ার এই জয়ে বড় ভূমিকা অধিনায়ক কামিন্সেরই। কিন্তু যখন ব্যাটিং করতে নামেন, তখন কি জেতার আশা করেছিলেন? কতটা সুযোগ দেখছিলেন নিজের দলের? ম্যাচ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কামিন্স বলেছেন, ‘ভালো সুযোগই দেখছিলাম। উইকেটে তো ভয়ংকর কিছু ছিল না। আমার মনে হয়েছিল, ম্যাচ আমাদের হাতের মুঠোতেই আছে।’
শেষটা কামিন্স আর লায়নের জুটিতে হলেও অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে রেখেছেন আসলে উসমান খাজাই। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে খাজা করেছেন ৬৫ রান। ১৯৮৯ সালে মার্ক টেলরের পর প্রথম অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজের একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করা ব্যাটসম্যান হয়েছেন এই ওপেনার।
কামিন্স তো মুগ্ধ খাজার এই ধারাবাহিকতায়, ‘দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছে সে। নিজের মতো খেলেছে। কয়েক বছর ধরেই সে অসাধারণ পারফর্ম করছে। ও ক্রিজে থাকলে অন্যরাও পারফর্ম করে। আমি খুব খুশি ওর জন্য। সে উইকেট ভালো বুঝতে পেরেছে। আসলে সবাই নিজেদের ভূমিকাটা পালনের চেষ্টা করেছে।’
যাঁর প্রশংসায় কামিন্স ম্যাচ শেষে পঞ্চমুখ, সেই খাজা জিতেছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও। ২০০৫ সালে এই এজবাস্টনেই ইতিহাসের অন্যতম সেরা টেস্টে ২৮২ রানের লক্ষ্যে নেমে অস্ট্রেলিয়া নাটকীয়ভাবে হেরে গিয়েছিল ২ রানে। এবার সেই এজবাস্টনেই ২ উইকেটে জিতে সেই দুঃসহ স্মৃতিতে প্রলেপ দিল অস্ট্রেলিয়া। আর এই জয়ের নায়ক হতে পেরে খাজাও দারুণ উচ্ছ্বসিত, ‘মিথ্যা বলব না, শেষ পাঁচ মিনিট আমার দম আটকে আসছিল। এমন বুক ধড়ফড় করা ম্যাচ, অবিশ্বাস্য। আমি ২০০৫ সালের অ্যাশেজ দেখেছি, সর্বশেষ অ্যাশেজে স্টোকসির (বেন স্টোকস) অবিশ্বাস্য ইনিংস দেখেছি। কিন্তু এটা আমার অন্যতম ফেবারিট ম্যাচ হয়ে থাকবে।’
এত কাছে গিয়ে হার যেকোনো দলেরই জন্যই নেওয়া কঠিন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের জন্যও হারটা হতাশার। তবে ইংল্যান্ড এই টেস্টেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেছে নিজেদের মতো ‘বাজবল’ ক্রিকেট, যে ধরনে খেলে সাম্প্রতিক কালে টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় বিপ্লবই এনেছে স্টোকসের দল।
জয়-পরাজয় এক পাশে রেখে শেষ পর্যন্ত আরও একবার নিজেদের ধরনের এই ক্রিকেটটা উপহার দিতে পেরে আনন্দিত স্টোকস, ‘টেস্টটাকে পঞ্চম দিনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থায় নিয়ে যেতে পেরে আমরা গর্বিত। অনেক ধরনের আবেগের মধ্য দিয়ে গেছি আমরা, অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েও। এটা আমাদের খেলা এমন আরও একটা টেস্ট, যা আমরা কখনো ভুলব না। আমরা এটাই করতে চাই, দর্শকদের খেলা দেখার জন্য সিট আঁকড়ে বসিয়ে রাখতে চাই। আশা করি, অ্যাশেজে পরের চারটা টেস্টের জন্য আমরা কিছু মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পেরেছি।’
স্টোকসের শেষ কথাটার সঙ্গে দ্বিমত করার মতো মানুষ অবশ্য এখন খুঁজে পাওয়া কঠিনই হবে।