মাঠে সাপ, বন্ধ ফ্লাডলাইট, তারপরেও আটকায়নি ভারতের জয়
ভারতের ইনিংসের সপ্তম ওভার শেষ হয়েছে তখন। দক্ষিণ আফ্রিকান ফিল্ডারদের দেখা গেল ক্রিজে থাকা ভারতীয় ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল ও আম্পায়ারদের কাছে গিয়ে কিছু একটার ইঙ্গিত করছেন। একটু পর বোঝা গেল ঘটনাটা। গুয়াহাটি বর্ষাপারা স্টেডিয়ামের মাঠেই যে ঢুকে পড়েছে সাপ! অবশ্য মাঠকর্মীদের কর্মতৎপরতা দেখে মনে হলো, এসব ব্যাপারে অভ্যস্ত তারা। আসলেও তা-ই। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধরা পড়ল সাপ। আবার শুরু হলো খেলা।
তবে উটকো ঝামেলায় খেলা থেমে যাওয়ার ঘটনা এ দিন ঘটল আরও একবার। দক্ষিণ আফ্রিকা তাড়া করতে নামার পর ২.১ ওভার শেষে ঝামেলা দেখা দেয় ফ্লাডলাইটে। সেটা ঠিক করার আগ পর্যন্ত আবার কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা।
এসব ঝামেলা অবশ্য স্বাগতিক ভারতের জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি। টপ ও মিডল অর্ডারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৩ উইকেটে ২৩৭ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকার কাজটা এমনিতেই কঠিন করে দিয়েছিল রোহিত শর্মার দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে কোনো দলের এটাই সর্বোচ্চ স্কোর, আগেরটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, ২০১৫ সালে ৬ উইকেটে ২৩৬ রান।
তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাও সহজে হার মানেনি। ডেভিড মিলার দুর্দান্ত খেলে ৪৭ বলে করেছেন অপরাজিত ১০৬ রান। তারপরেও প্রোটিয়ারা শেষ পর্যন্ত থেমে গেছে ৩ উইকেটে ২২১ রান তুলে। ১৬ রানে ম্যাচ জিতেছে ভারত, ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ায় তিন ম্যাচের সিরিজ জয়ও নিশ্চিত রোহিতদের।
ভারতের মাটিতে এত বেশি রান তাড়া করে আগে কোনো দল জেতেনি। ২০১৬ বিশ্বকাপে ওয়াংখেড়েতে এই দক্ষিণ আফ্রিকাই ২ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ডের ২২৯ রান তাড়া করে। ভারতের বিপক্ষেও এত রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই। তবে এই বছর জুনেই দক্ষিণ আফ্রিকা দিল্লিতে জিতেছিল ভারতের ২১১ রান তাড়া করে। কিন্তু আজ আর প্রোটিয়ারা পারল না নতুন রেকর্ড গড়তে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত হারের ব্যবধানটা এত কম যে, মনে হচ্ছে, ওপেন করতে নেমে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ৭ বল খেলে ০ রানে আউট না হলে এই ম্যাচটাও বের করে নিতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেটা পুষিয়ে দিতেই যেন পরে ‘মিলার-দ্য কিলার’ দেখা দিয়েছেন বিধ্বংসী রূপে, ৮ চার ও ৭ ছক্কায় ৪৭ বলে করেছেন অপরাজিত ১০৭ রান। তাঁকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে কুইন্টন ডি কক ৪৮ বলে তুলেছেন ৬৯ রান। তবু জয়টা অধরাই থেকে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
এর আগে ব্যাট হাতে ভারতের শুরুটাই হয় ঝড় তুলে। লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা উদ্বোধনী জুটিতে ৯.৫ ওভারেই তুলেন ৯৬ রান। ২৮ বলে ৫৭ রান করেন রাহুল, রোহিত আউট হন ৩৭ বলে ৪৩ রান তুলে। কিন্তু তাতে ভারতের রানের গতি কমেনি। বিরাট কোহলি নেমেও ব্যাট চালিয়েছেন সমানে, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ২৮ বলে ৪৯ রান করে।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। রান আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ৬১ রানের তাণ্ডব চালিয়েছেন বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যান। মেরেছেন ৫টি করে চার ও ছক্কা। সঙ্গে দীনেশ কার্তিকের ৭ বলে ১৭ রানের ক্যামিও ইনিংসে রানটা পাহাড়সম হয়ে যায় ভারতের।