প্রথম ইনিংসে ৫০০ করেও পাকিস্তান এখন ইনিংস হারের শঙ্কায়
দেজা ভু শব্দটার মানে কী, সেটি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল!
দুই বছর আগের দুঃস্মৃতিটাই যে আবার ফিরে আসছে, এবার আরও ভয়ংকরভাবে। ২০২২ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৭৯ রান করেও সিরিজের প্রথম টেস্টে হেরেছিল পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতে ইংল্যান্ড জিতেছিল ৭৪ রানে। এরপর তো পরের দুই টেস্টেও হেরে নিজেদের দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই হতে হয় পাকিস্তানকে।
সেই পাকিস্তান দুই বছর পর আবারও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৫০০ রান করেও হারের মুখে। প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করার পরও মুলতান টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে এখন পাকিস্তানের ইনিংস হারের শঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে রান ৬ উইকেটে ১৫২, ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের চেয়ে যা এখনো ১১৫ কম। শেষ পর্যন্ত যদি পাকিস্তান ইনিংস ব্যবধানে হেরেই যায়, তবে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে ৫০০ রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হারের রেকর্ড গড়বে।
১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ৫০০ রান করার পরও হারার উদাহরণ আছে ১৮টি। রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ডটিও পাকিস্তানের। ২০০৬ সালে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৩৮ রান করে ২৩ রানের লিড নেওয়ার পরও ১৬৭ রানে হারতে হয়েছিল তাদের।
ইংল্যান্ডের বোলাররা কাজে নামার আগেই পাকিস্তানকে হতাশার শেষ প্রান্তে ঠেলে দিয়েছেন জো রুট ও হ্যারি ব্রুক। টেস্টে ইংল্যান্ডের রেকর্ড ৪৫৪ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন এই দুজন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে যা বিশ্ব রেকর্ডও। রুট ফিরেছেন ক্যারিয়ার–সর্বোচ্চ ২৬২ রানে। আর ব্রুক তো পেয়ে গেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিই—৩১৭। এ দুজনের ব্যাটে ভর করে ৭ উইকেটে ৮২৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। তাতে ২৬৭ রানের লিড পেয়ে যায় ইংলিশরা।
চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে আবার ব্যাটিং করতে নামা পাকিস্তান ইনিংসের প্রথম বলেই হারায় আবদুল্লাহ শফিককে। প্রথম ইনিংসে ১০২ রান করা শফিককে বোল্ড করে দেন ক্রিস ওকস। প্রথম ইনিংসের আরেক সেঞ্চুরিয়ান শান মাসুদ ফেরেন দলকে ২৯ রানে রেখে। প্রথম ইনিংসে ১৫১ রান করা অধিনায়ক এবার করেছেন ১১ রান, ফিরেছেন গাস অ্যাটকিনসনের বলে মিড উইকেটে জ্যাক ক্রলিকে সহজ ক্যাচ দিয়ে।
১২ রান পর সাবেক অধিনায়ক বাবর আজমকে হারায় পাকিস্তান। টেস্টে টানা ফিফটিহীন ইনিংসের সংখ্যাকে ১৮ বানিয়ে বাবর এবার ফিরেছেন ৫ রানে। অ্যাটকিনসনের বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়েছেন বাবর। ঠিক পরের বলেই ব্রাইডন কার্সকে কাভারের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে জঘন্য এক শট খেলে মিড অফে বেন ডাকেটের হাতে ক্যাচ দেন সাইম আইয়ুব (২৫)। কার্স এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ানকে (১০) বোল্ড করার পর জ্যাক লিচ যখন সৌদি শাকিলকে (২৯) ফেরালেন, পাকিস্তানের স্কোর ৮২/৬। ম্যাচ চতুর্থ দিনেই শেষ হয়ে যাওয়ার অবিশ্বাস্য একটা সম্ভাবনাও জেগেছিল তখন। তা হয়নি আগা সালমান ও আমের জামালের গড়ে তোলা প্রতিরোধের কারণে। অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেট জুটিতে দুজন তুলেছেন ৭০ রান। সালমান ৪১ রানে অপরাজিত, জামাল ২৭ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ৫৫৬ ও ৩৭ ওভারে ১৫২/৬ (সালমান ৪১*,শাকিল ২৯, জামাল ২৭*, সাইম ২৫; অ্যাটকিনসন ২/২৮, কার্স ২/৩৯)।
ইংল্যান্ড: ১৫০ ওভারে ৮২৩/৭ ডি. (ব্রুক ৩১৭, রুট ২৬২, ডাকেট ৮৪, ক্রলি ৭৮, স্মিথ ৩১; সাইম ২/১০১, নাসিম ২/১৫৭)।
(৪র্থ দিন শেষে)