২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সাক্ষাৎকারে শরীফুল ইসলাম

‘দুর্ভাগ্য, ক্রিকেট তো ১১ জনের খেলা’

প্রথম ম্যাচ জেতার পর টানা ১১ ম্যাচ হেরে বিপিএল শেষ করেছে দুর্দান্ত ঢাকা। বিশ্বের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের এক আসরে টানা এত ম্যাচ হারের রেকর্ড নেই আর কোনো দলেরই। অথচ সেই দলের পেসার শরীফুল ইসলাম কিনা প্রায় সব ম্যাচেই দুই-তিনটি করে উইকেট নিলেন! টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন ১২ ম্যাচে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়ে। বিপিএলের এক আসরে পেসার হিসেবে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডও এটি। কিন্তু দলের বাজে পারফরম্যান্স তাঁকে সেই আনন্দটা উদ্‌যাপন করতে দিচ্ছে কই! কাল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরা শরীফুল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন এবারের বিপিএলের মিশ্র অভিজ্ঞতা নিয়ে—

প্রথম আলো:

আপনার দল টানা ১১টি ম্যাচ হারলেও আপনার পারফরম্যান্স ভালো। এমন বিপিএল থেকে কী শিখলেন?

শরীফুল ইসলাম: ক্রিকেট দলীয় খেলা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে যে বড় কিছু হয় না, তা তো আপনারা দেখলেনই। আমরা ব্যক্তিগতভাবে ভালো করেও কিন্তু সবার শেষেই আছি। এটাই সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আমরা কেউই যদি সেরা পাঁচে না থাকতাম, সবাই ছোট ছোট অবদান রাখত আর আমরা ম্যাচ জিততাম; তাহলে কিন্তু বেশি ভালো হতো। দল হয়ে খেলার ওপর আসলেই কিছু নেই। একার পারফরম্যান্স থেকে দলগত পারফরম্যান্স বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম আলো:

১২ ম্যাচে ২২ উইকেট পাবেন ভেবেছিলেন?

শরীফুল: সেভাবে ভাবিনি। আমরা যদি শেষ চারে উঠতাম, তাহলে হয়তো আরও বেশি উইকেট নেওয়ার সুযোগ থাকত। এর থেকেও আরও বেশি উইকেট হতে পারত। ভাবনা ছিল যে যেহেতু প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক দিয়ে শুরু হয়েছে, এরপর যদি প্রতি ম্যাচে একটি-দুটি করে নিই, তাহলে ২০ উইকেটের বেশি হবে। যদি আমরা প্লে-অফে উঠি, তাহলে ২২-২৩টি হবে। এমন চিন্তা ছিল।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

প্লে-অফে ওঠার আগেই তো ২২টি হয়ে গেছে…

শরীফুল: হ্যাঁ। আল্লাহ দিয়েছেন (হাসি)।

শরীফুল সফল, তবে টানা হারের রেকর্ড গড়ে বাদ পড়েছে দুর্দান্ত ঢাকা
শামসুল হক
প্রথম আলো:

গত বছর থেকেই ভালো বোলিং করছেন। সেই আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই কাজে লেগেছে...

শরীফুল: হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। আমি গত বছর যেভাবে শেষ করেছি, যে ফর্মে ছিলাম, সেটা আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, আমি ভালো খেলে এসেছি। ওই যে একটা নড়বড়ে থাকার ব্যাপার থাকে না, সে রকম কিছু ছিল না। আমি বড় ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে সিরিজ খেলে এসেছি, ভালো করেছি, ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছি, ওইখান থেকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছি। ভেবেছিলাম যে বিপিএলে আমি ভালো করব। মাথায় এটাই কাজ করছিল। আর কিছু নয়।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

প্রতি ম্যাচে তো মনে হয়েছে শরীফুল উইকেট নেবে। বিশেষ করে প্রথম স্পেলের ১২ বলের মধ্যে দুই-একটা ব্যাট-প্যাডের মাঝে জায়গা খুঁজে নিচ্ছিলই…

শরীফুল: প্রথম ওভারে বা একেবারে নতুন বলে যে কয়টা ম্যাচেই বল করেছি, একটা ছাড়া সব ম্যাচেই আমি মনে হয় একটা করে উইকেট পেয়েছি। নতুন বলে উইকেট পাওয়ার পর একটা আত্মবিশ্বাস এমনিতেই চলে আসে। যেহেতু বল সুইং করছে, বল ভেতরে আনতে পারছি, অনুশীলন করেছি, আত্মবিশ্বাসী পাচ্ছিলাম। মনে হতো যে ঠিক জায়গায় করলে উইকেট পাওয়ার সুযোগ থাকবে।

প্রথম আলো:

আপনার সুইংয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন?

শরীফুল: হ্যাঁ। আমার চিন্তা ছিল ব্যাটসম্যানকে নতুন বল খেলাব। সে খেললে আমার উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ফুল লেংথ করলে ড্রাইভ খেলতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিছু রান হবে। তবে আমার কাজ ছিল উইকেট এনে দেওয়া। রান গেলেও সমস্যা নেই। একটা উইকেট নিয়ে আসতে পারলে বরং দলের জন্য ভালো হবে।

তাসকিন আহমেদ ও শরীফুল ইসলাম
ফাইল ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো:

ঢাকায় তাসকিন আহমেদও খেলেছেন। দলে তাসকিনের মানের বোলার থাকলে সাধারণত উইকেট ভাগাভাগি হয়ে যায়। কিন্তু একতরফা আপনিই ভালো করে গেছেন...

শরীফুল: তাসকিন ভাই যেহেতু চোট থেকে ফিরেছেন, ওনার ছন্দে ফিরতে একটু সময় লাগছিল। শেষের দিকে উনিও দারুণ বোলিং করেছেন। জাতীয় দলে দেখবেন উনি ভালো করবেন। আর তাসকিন ভাইয়ের সঙ্গে একই দলে থাকা সব সময়ই বাড়তি অনুপ্রেরণা। জাতীয় দলে তাঁর সঙ্গে খেলার সময় থেকেই তাঁর গাইডেন্স পাচ্ছি।

এখানেও যখন একই দলে সুযোগ পেয়েছি, তখন আমার মনে হয়েছিল, আমাদের দুজনের ৮ ওভার দিয়ে যেকোনো ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব (হাসি)। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ক্রিকেট তো ১১ জনের খেলা। দুজন দিয়ে তো আর হয় না। মাঝেমধ্যে হতে পারে, কিন্তু সব সময় হয় না। আমরা দুজন চেষ্টা করেছি। অন্যরাও করেছে। হয়তো হয়নি।