ভারতের ‘হোম অব ক্রিকেট’ চিপক, নাকি ইডেন

বাংলাদেশ-ভারত প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ভারতীয় দর্শকদের উল্লাসবিসিসিআই

‘হোম অব ক্রিকেট’ শুনলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থকদের মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ছবিটা মনে পড়বে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সেটা সত্যিও। ইংল্যান্ডের লর্ডসকেও হোম অব ক্রিকেট বলা হয়। তাহলে ভারতের হোম অব ক্রিকেট কোনটা? ইডেন গার্ডেন? চেন্নাইয়ের চিপকে এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে এসে এই আলাপটা করা একটু কঠিন। কলকাতার ইডেনের পর এটিই ভারতের সবচেয়ে পুরোনো স্টেডিয়াম। ঐতিহ্যে কোনটা কত এগিয়ে—এ নিয়ে এ দুই শহরের মানুষের মধ্যে অনেক চর্চাও হয়।

চেন্নাইয়ের ক্রিকেট সমর্থকেরা নিজেদের ভারতের সবচেয়ে জানাশোনা দর্শক বলে দাবি করেন নিজেদের। ক্রিকেটের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিটাও অন্য রকম। ভারত-বাংলাদেশ টেস্টের প্রথম দিন সকালে যেমন মাঠের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ল দর্শকের ভিড়। মাঠের আশপাশে ১০ থেকে ১২টি জার্সির দোকান বসেছে, যেখানে রোহিত-কোহলিদের টেস্ট ম্যাচের জার্সি বিক্রি হচ্ছে। ভারতের টেস্ট ক্যাপের রেপ্লিকাও। মাঠে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের মধ্যে সাদা জার্সি আর টেস্ট ক্যাপের প্রতি আগ্রহ একটু অবাক করার মতোই।

খেলার সময়ও চেন্নাইয়ের দর্শক ভালো ক্রিকেটের সমঝদার বলে নিজেদের চিনিয়ে দিলেন। ৪ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ তো আজ চেন্নাইয়ে একটা ফ্যান ক্লাব খুলে ফেলতে পারতেন! বোলিং শেষ করে বাউন্ডারির সীমানায় ফিল্ডিং করতে যেতেই গ্যালারি থেকে ‘হাসান’ ‘হাসান’ চিৎকার। হাসান মাথা ঘুরিয়ে হাত নেড়ে সাড়া দিলেন। তাতে গ্যালারি থেকে একটা হুল্লোড় উঠল। চেন্নাইয়ের মাঠে এমন দৃশ্য নাকি নতুন কিছু নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচেও দর্শক প্রতিপক্ষ দলের ভালো ক্রিকেটকে বাহবা জানান।

চেন্নাইয়ের দর্শককে বুঝতে ১৯৯৯ সালের ভারত-পাকিস্তান টেস্টের উদাহরণটা খুব প্রাসঙ্গিক। রোমাঞ্চকর সেই ম্যাচে নাটকীয়ভাবে ভারত হেরে যাওয়ার পর চেন্নাইয়ের দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াসিম আকরামের পাকিস্তান দলকে সম্মান জানান।
​কলকাতার ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম
ফাইল ছবি

চেন্নাইয়ের দর্শককে বুঝতে ১৯৯৯ সালের ভারত-পাকিস্তান টেস্টের উদাহরণটা খুব প্রাসঙ্গিক। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে শচীন টেন্ডুলকার ভারতকে প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন। সাকলায়েন মুশতাকের দুসরায় টেন্ডুলকার আউট হয়ে গেলে ভারত হেরে বসে। রোমাঞ্চকর সেই ম্যাচের পর চেন্নাইয়ের দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াসিম আকরামের পাকিস্তান দলকে সম্মান জানান। হোক না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, দিন শেষে তো খেলাটা ক্রিকেট। চেন্নাইয়ের মানুষের মন জয় করতে শুধু ভালো ক্রিকেট খেললেই হয়!

আর সেটা যদি আসে টেস্ট ক্রিকেটের মঞ্চে, তাহলে তো কথাই নেই! বাইরে থেকে মনে হয়, ভারত মানেই আইপিএল। চেন্নাই মানেই চেন্নাই সুপার কিংস। শহরের বড় বড় বিলবোর্ডে আইপিএলের সফলতম অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ও তাঁর দল চেন্নাই সুপার কিংসের ছবি। কিন্তু এখানে টেস্ট ক্রিকেটেরও যথেষ্ট আবেদন আছে। তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন নতুনত্বের ঝলকানিতে অতীতকে ভুলে যায়নি। ১৯১৬ সালে তৈরি হওয়া চিপক স্টেডিয়ামের মিডিয়া গেট দিয়ে ঢুকতেই আধুনিক দেয়ালে দুটি পুরোনো স্তম্ভ দেখতে পাবেন। পুরোনো স্টেডিয়ামের গেটের অংশ ছিল এই দুটি স্তম্ভ। অনেক উন্নয়নকাজ হলেও সেই মূল স্টেডিয়ামের চিহ্ন ঠিকই যত্ন করে ধরে রাখা হয়েছে।

চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম
বিসিসিআই

ভেতরে দেখবেন দুই দলের ড্রেসিংরুমের পাশেই মাদ্রাজ ক্রিকেট ক্লাবের ভবন। সেই পুরোনো নাম, পুরোনো ভবনটা ঝকঝকে রেখেই নতুন গ্যালারি, নতুন প্রেসবক্স গড়া হয়েছে। নির্মাণ জটিলতা আর তার ঝুঁকি এড়াতে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটি কখনোই পূর্ণ করা হয় না। অর্থাৎ কিছু আসন সব সময় ফাঁকা রাখা হয়। চাইলেই পুরোনোকে ভুলে গিয়ে নতুনে নিজেকে সঁপে দেওয়া যায়। চেন্নাই তা করেনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে সফলতম দলের শহরেও টেস্টই এখনো আসল ক্রিকেট।

আরও পড়ুন