ভারতের বিশ্বকাপ দলে থাকা কেউ নেই আইপিএল ফাইনালে
প্রথম কোয়ালিফায়ার জিতে সবার আগে আইপিএল ফাইনালে উঠেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। গতকাল রাতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রাজস্থান রয়্যালসকে ৩৬ রানে হারিয়ে ফাইনালে পা রেখেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আগামীকাল রাতে আইপিএলের ১৭তম আসরের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে কলকাতা-হায়দরাবাদ। অথচ দুই ফাইনালিস্ট দলে থাকা খেলোয়াড়দের কারও ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি।
এবারের আইপিএলে কলকাতা দলে আছেন ১৫ জন ভারতীয় এবং হায়দরাবাদে ১৭ জন। কলকাতার ভারতীয় খেলোয়াড়েরা হলেন অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার, নিতিশ রানা, ভেঙ্কটেশ আয়ার, রিংকু সিং, বৈভব অরোরা, হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী, সুইয়াশ শর্মা, মনীশ পান্ডে, অঙ্গকৃষ রঘুবংশী, শ্রীকর ভারত, অনুকূল রায়, রমণদীপ সিং, সাকিব হুসেইন ও চেতন সাকারিয়া।
হায়দরাবাদের ভারতীয় খেলোয়াড়েরা হলেন অভিষেক শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমার, উমরান মালিক, থাঙ্গারাসু নটরাজন, মায়াঙ্ক মারকান্দে, জয়দেব উনাদকাট, আকাশ সিং, শাহবাজ আহমেদ, ওয়াশিংটন সুন্দর, নিতিশ রেড্ডি, সানভির সিং, আনপ্রীত সিং, উপেন্দ্র সিং, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, রাহুল ত্রিপাঠী, জঠাবেধ সুব্রামানিয়ান ও আবদুল সামাদ।
দুই দলের এই ৩২ খেলোয়াড়ের কেউই ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে নেই। রিজার্ভ খেলোয়াড় হিসেবে শুধু কলকাতার রিংকু সিংকে রাখা হয়েছে।
যেকোনো দেশের জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড়েরাই তো বড় তারকা হিসেবে বিবেচিত হন। ভারতের ক্ষেত্রেও তা-ই। তবে বিশ্বকাপ দলের কেউ না থাকায় এবার ভারতীয় তারকাশূন্য আইপিএল ফাইনাল দেখতে যাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ভারতের বিশ্বকাপ দলের ১৫ সদস্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪ জন সদস্য মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের। অথচ পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা মুম্বাই সবার আগে আইপিএলের লিগ পর্ব থেকে ছিটকে পড়েছে। মুম্বাইয়ের চার খেলোয়াড় হলেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা, অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া, ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব ও ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরা।
তিনজন করে আছেন দিল্লি ক্যাপিটালস ও রাজস্থান রয়্যালস থেকে। দিল্লি পয়েন্ট তালিকার ছয়ে থেকে আইপিএল শেষ করেছে, তৃতীয় হয়ে প্লে-অফ পর্বে ওঠা রাজস্থান কাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার থেকে বিদায় নিয়েছে।
দিল্লি ক্যাপিটালস প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বকাপে যাচ্ছেন ‘চায়নাম্যান’ কুলদীপ যাদব, স্পিন অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল ও ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ঋষভ পন্ত। এবারের আইপিএল দিয়েই প্রায় দেড় বছর পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন পন্ত। দিল্লিকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। ২৬ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান আইপিএলে ১৩ ম্যাচে ১৫৫.৪০ স্ট্রাইক রেটে ৪৪৬ রান করে অজিত আগারকারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেলেরও মন জিতে নিয়েছেন।
রাজস্থানের তিন খেলোয়াড় অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন, ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল ও লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল।
চেন্নাই সুপার কিংস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দুজন করে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। চেন্নাইয়ের অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে আছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শিবম দুবে। আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ১৬২.৩০ স্ট্রাইক রেটে ৩৯৬ রান করা দুবে প্রথমবার বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন। বেঙ্গালুরু থেকে বিরাট কোহলির সঙ্গে আছেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ।
গত শনিবার বেঙ্গালুরুর কাছে হেরে নেট রানরেটে পিছিয়ে পড়ে চেন্নাই। পয়েন্ট তালিকার পাঁচে থেকে বিদায় নেয় দলটি। অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্লে-অফ পর্বে ওঠা বেঙ্গালুরু গত বুধবার এলিমিনেটরে হায়দরাবাদের কাছে হেরে ছিটকে পড়ে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের আরেক সদস্য অর্শদীপ সিং এবারের আইপিএলে খেলেছেন পাঞ্জাব কিংসে। তাঁর দলের পয়েন্ট তালিকার নয়ে থেকে লিগ পর্ব থেকে বিদায় নেয়।
ভারতীয় দলে ‘অটোমেটিক চয়েস’ বলে কিছু নেই। ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলোয় পারফর্ম করেই সবাইকে জাতীয় দলে ঢুকতে হয়। খারাপ করলে বা বোর্ডের নির্দেশের পরও ঘরোয়ায় না খেললে বাদও পড়তে হয়। ঈশান কিষান ও শ্রেয়াস আইয়ারের দলে জায়গা হারানো ও বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়া যার সর্বশেষ উদাহরণ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে থাকায় এবারের আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। গত ৩০ এপ্রিল বিসিসিআই ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করে। এর আগপর্যন্ত দলে থাকা ক্রিকেটাররা আইপিএলে দারুণ পারফর্ম করেছেন। কিন্তু দলে জায়গা পাওয়ার পর থেকে বেশির ভাগ ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স গ্রাফ ছিল নিম্নমুখী। সেটারই প্রভাব পড়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে। ফলস্বরূপ শিরোপা–লড়াইয়ের আগেই বিদায় নিতে হয়েছে মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, রাজস্থান ও পাঞ্জাবকে।
এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো (২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০২১, ২০২২, ২০২৪) কোনো বছরে আইপিএল শেষ হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। তবে এবারই প্রথম আইপিএল ফাইনাল খেলা দুই দলের কেউই ভারতের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি।
বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার পর বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের ছন্দ হারিয়ে ফেলা ভারতীয় ক্রিকেট মহলে এই প্রশ্ন তুলেছে—তাহলে কি বিশ্বকাপ স্কোয়াড সাজাতে ভুল করেছে বিসিসিআই?
অবশ্য একটা দিক থেকে ভারতের কোচিং স্টাফের লাভই হচ্ছে। আইপিএল ফাইনালে কেউ না থাকায় বিশ্বকাপ দলকে একত্র করার জন্য কিছুটা সময় বেশি পাচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়, বিক্রম রাঠোর, পরশ মামব্রেরা। নয়তো রোহিত, কোহলি, বুমরা, পন্ত কিংবা জাদেজাদের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতো তাঁদের। বিশ্বকাপ খেলতে হয়তো কয়েক দলে ভাগ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হতো ভারতকে। কিন্তু আইপিএলের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীরা কি সেটা বুঝবেন?