কেক কেটে ‘মরুঝড়’ তোলার ২৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন টেন্ডুলকারের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো কত ইনিংসই তো উপহার দিয়েছেন ভারতের কিংবদন্তি। তবে একটি ইনিংসের মাহাত্ম্য তাঁর কাছে বিশেষ কিছু। ভক্তদের কাছেও তা চিরস্মরণীয়। নয়তো কি আর ওই ইনিংসের ২৫ বছর পূর্তি ঘটা করে পালন করা হয়!
কোন ইনিংসের কথা বলা হচ্ছে, এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন! ২২ এপ্রিল ১৯৯৮। শারজায় স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্বাধীন পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন শেন ওয়ার্ন, ডেমিয়েন ফ্লেমিং, মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচদের মতো দুর্দান্ত সব বোলার। তবে টেন্ডুলকার সে রাতে ব্যাট হাতে নিজের অবিশ্বাস্য প্রতিভা মেলে ধরেন। ১৩১ বলে করেন ১৪৩ রান; ৯টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৫টি ছক্কা।
তাঁর ব্যাটিং দেখে পুরো স্টেডিয়াম আন্দোলিত হয় এক বিকট গর্জনে,‘শচীন...শচীন’। ধারাভাষ্যকার টনি গ্রেগ বারবার বলতে থাকেন, ‘কী একজন খেলোয়াড়, কী অসাধারণ এক খেলোয়াড়!’ ক্রিকেট–বিশ্বে টেন্ডুলকারের ওই ইনিংস ‘স্যান্ড স্টর্ম’, ‘ডেজার্ট স্টর্ম’ বা ‘মরুঝড়’ নামে পরিচিত।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাইকেল বেভানের সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৪ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ত্রিদেশীয় সেই সিরিজে নেট রানরেটে নিউজিল্যান্ডকে টপকে ফাইনাল খেলতে হলে ভারতকে করতে হতো ২৫৪ রান। লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই ঝড় তোলেন টেন্ডুলকার। কিন্তু আসল ঝড় যে আসতে চলেছে, সেটা ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পারেননি। হঠাৎ আম্পায়ার স্টিভ বাকনরের ছোট্ট ইশারায় বন্ধ খেলা। এক ঝটকায় পারস্য উপসাগর তীরের শারজা স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়ে মরুঝড়।
২৫ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর জয়ের জন্য ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৬ ওভারে ২৭৬ রান। আর ফাইনালে জায়গা করে নিতে প্রয়োজন পড়ে ২৩৭। টেন্ডুলকারের মহাকাব্যিক সেই ইনিংসের পরও ভারত জিততে পারেনি। তবে দলকে ঠিকই শিরোপা-নির্ধারক ম্যাচে নিয়ে গেছেন। এক দিন পর (২৪ এপ্রিল) শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেন্ডুলকারের আরেকটি ধ্রুপদি সেঞ্চুরিতেই ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। সেদিন ছিল তাঁর ২৫তম জন্মদিন।
সময়ের বিবর্তনে আজ আবার সেই ২২ এপ্রিল, টেন্ডুলকারের ‘মরুঝড়’ তোলা ইনিংসের রজতজয়ন্তী। ঐতিহাসিক ইনিংসের আড়াই দশক পূর্তি ঘটা করে পালন করেছেন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। মুম্বাইয়ে ভক্তদের পাশে নিয়ে কেকও কেটেছেন। নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে না, ওটা ছিল ২৫ বছর আগের ঘটনা। এখন আমার ২৫ বছর বয়সী মেয়ে আর ২৩ বছর বয়সী ছেলে আছে। সময় কত দ্রুত চলে যায়, তাই না? এই সময়ে আমরা কত বদলে গেছি। সবাই আরও অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। তবে কেউ বুড়ো হয়ে গিয়েছি, আবার কেউ মুটিয়ে গিয়েছি। সে তুলনায় আমি ঠিকঠাক আছি (হাসি...)।’